‘দো পাত্তি’ সিনেমাটি অনেক কারণে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। কাজলের পুলিশ হয়ে ফিরে আসাটা তার মাঝে অন্যতম। এর আগে রানী মুখার্জী, টাবু, হারে দীপিকা পাড়ুকোণের পুলিশ বেশ ভালোই গ্রহণ করেছে দর্শক। তাই কাজলও ’লেডি সিংঘাম’ হতে পারেন, তা নিয়ে একটু আশা ছিলো বটে আবার মিমি খ্যাত কৃতি শ্যাননকে নিয়েই আশার শেষ নেই। তানভি আজমি, বিবেক মুশরান, সাথে ছোট পর্দার স্টার শাহির শেখ।
সিনেমাটিকে বলা হয়েছে থ্রিলার। শুরুটাও চমৎকার। সাসপেন্স দিয়ে শুরু। এরপর সিনেমা পেছনে হাটা শুরু করে। এক জমজ বোনের গল্প দিয়ে। এটি কোনও স্পয়লার নয়, কারণ ট্রেইলারসহ সবখানে তাদের জমজ বোনের গল্প বলেই দেওয়া আছে। ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের মত একটি বিষয় দিয়ে শুরু করে গল্পটি হঠাৎ চলে যায় দুই বোনের শত্রুতায়। আবার খুবই বলিউডি স্টাইলে দুই বোনের এক মানুষকে পছন্দ করাও উঠে আসে।
সিনেমাটির গল্প প্রথম নব্বই মিনিট বেশ টানটান। এরপরই কিছু প্রশ্ন উঠেই আসবে। যেমন, মেয়েদের কেয়ার টেকার- তানভি আজমি তথা ‘আম্মা’র চরিত্রটি আসেল কেমন। তার চরিত্রটিকে কোনও ভাবেই সঠিক বিশ্লেষণ করা হয়নি। দুই বোন তথা কৃতির জমজ রোলে তার অভিনয় অসাধারণ হলেও তাদের দৃশ্যায়নে বলিউড ও উপমহাদেশীয় কায়দা থেকে বের হয়ে পারেননি নির্মাতা। এখানে সালোয়ার কামিজ পরা একবোনকে দেখিয়েছে নম্র-ভদ্র, আবার যে একটু আধুনিক পোশাক পরা, তার চাল-চরিত্র উটকো ও উশৃঙ্খল দেখানো হয়েছে। এমন কী স্বামী ছিনতাই করানোর পরিকল্পনাতেও তার পোশাক ও গেটআপকে অস্ত্র করেছেন নির্মাতা।
অথচ এই পোশাক নিয়েই কিন্তু একবিংশ শতাব্দিতে এসেও উপমহাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি প্রতিহিংসার শিকার হয়। এই সিনেমার এই অংশেও একই ভাব ফুটে উঠে- যা নিঃসন্দেহে একটু হলেও হতাশার। যেখানে গল্পের লেখক নারী, প্রযোজকও নারী। আবার টুস্ট আনার নামে ডিপ্রেশন, পারিবারিক সহিংসতাকে গুলিয়ে ছেলেটির চরিত্র দৃশ্যায়ণে খানিকটা লেজে গোবড়ে অবস্থাই বটে।
ওদিকে কাজলের চরিত্রটিকে অগোছালো বোধ হতেই পারে। কারণ তার মাঝে সুত্র উপাত্ত না খুঁজে অন্যের কথায় বিশ্বাস করার প্রবণতা- পুলিশ চরিত্রের মুন্সিয়ানার বিপরীতে দাঁড় করায়। শেষ পর্যন্ত যাবার আগেই দর্শক কয়েকটি শটের মাঝেই গল্পটি আঁচ করে ফেলতৈ পারবে- যার কারণে কেউ কেউ বলতেই পারেন- আগেই জানতাম।
আবার বিচারের উপর সত্য নাকী সত্যের উপর বিচার – এই দ্বন্দ্বের কোনও অবকাশই থাকার কথা নয়। কারণ বিচার ব্যবস্থাই মূল যা পৃথিবীর মূল মানদণ্ড। এই ব্যবস্থা বের হয়ে শুধু মানবিকাতা দেখলে মানতেই হবে- প্রতিটা অন্যায়কেই তাহলে সহানুভূতি দিয়ে খো প্রয়োজন।
বলিউডের এই উল্টো রথ দর্শকের ভালো লাগবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। এর আগে ধাড়ম সিনেমার রিমেক ’গুমরাহ’ সিনেমাতে একই ভাবে আদিত্য রয় কাপুরর দ্বৈত চরিত্রে ‘মানবিক’ কারণে দুই ভাইকে বিচারের উপর স্থান দেওয়া হয়েছে। এই সিনেমাটি ২০২৩ সালের। এর আগে ‘লাভ কে লিয়ে কুছ ভি কারেগা’ সিনেমাতে এমনই কিছু দেখা যায়- কিন্তু সেই গল্পর সাথে খুন/ জখমের সম্পর্ক নেই।
‘গুমরাহ’ বা ‘দো পাত্তি’ দুটো সিনেমাতেই অলিখিতভাবে অন্যায়কে প্রশয় দেওয়া হয়েছে। সিনেমাটির লেখক এর অন্যতম প্রযোজক কণিকা ধিলন। এর আগে ‘হাসিন দিলরুবা’র গল্পও তিনি লিখেছেন। যা সমালোচিতও হয়েছিল। কৃতির প্রযোজনায় দুরদর্শিতা নিয়ে প্রশ্ন অবধারিতভাবেই চলে আসবে। কাজলের দ্বৈত চরিত্র কিনা- সেটি নিয়েও দর্শক ভড়কে যাবেন অল্প সময় হলেও।
মূল সিনেমায় বিবেক মুশরানের চরিত্র অপ্রয়োজনীয় মনে হওয়অ অস্বাভাবিক নয়। সব মিলিয়ে যথেষ্ট মশলা থাকার পরেও রান্না ও তার স্বাদ নিয়ে সিনেমার শেষে ভাববেন দর্শকরা। ছবিটি আছে নেটফ্লিক্সে। মুক্তি পেয়েছে ২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর।