একটার পর একটা কনসার্ট স্থগিত হয়ে যাচ্ছে। আবার কনসার্টে শুরু হওয়ার পর উশৃঙ্খলতা ঠেকাতে না পেরে কনসার্ট ছেড়ে চলে যাচ্ছেন পারফরমাররা। এই অবস্থায় ১৮ অক্টোবর দুটি কনসার্ট বাধাগ্রস্থ হয়। যা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন মিউজিশিয়ানরা।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে অনুষ্ঠিতব্য একটি কনসার্টে অহেতুক জোরপূর্বক কিছু উশৃঙ্খল জনতার অনুপ্রবেশ ঘটার পর কনসার্ট বন্ধ করে দেয় আয়োজকরা। নিরাপত্তার খাতিরে ভেন্যু ত্যাগ করেন শিল্পীরা। পারফর্ম করতে না পারা নেমেসিস ব্যান্ডটি তাদের সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনাটি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি চলমান উশৃঙ্খলতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
একই দিনে তিনশো ফিটের একটি ভেন্যুতে ঢাকা রেট্রো শিরোনামে জেমস, আর্ক, মাইলস ও দলছুটের অংশগ্রহণে এই কনসার্টটি নিয়ে দর্শকের আগ্রহের সীমা ছিলনা। কিন্তু নিরাপত্তার ইস্যু দেখিয়ে এই কনসার্টটিও পিছিয়ে দেওয়া হয়। নভেম্বরের ১৫ তারিখে এখন কনসার্টটি হবার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে ব্লু ব্রিক কমিউনিকেশন নামে আয়োজক প্রতিষ্ঠান।
এর আগে জালের কনসার্টের ভেন্যু পরিবর্তন করার পরেও উশৃঙ্খল জনতাকে সামলাতে না পেরে আর্মির সহায়তা নেয় আয়োজক এসেনবাজ।
ক্রমাগত ঘটতে থাকা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন শিল্পী ও সাধারণ দর্শকরা। পরস্পরের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কা তাদের। চিত্রালী ২০২৩ সালে কনসার্টে উশৃঙ্খলতা নিয়ে একটি রিপোর্ট করে যেখানে এভয়েড রাফা ব্যান্ডের মূল কণ্ঠ রাফা স্পষ্ট করে বলেন, কনসার্টে এমন পরিস্থিতি কাম্য নয়। আয়োজকদের প্রয়োজন নিরাপত্তার জন্য বেশি খরচ করা ও বাজেট বড় করা।
মেঘদলের শিবু কুমার শীলও জানান, ইন্ডাস্ট্রির জন্য এ ধরণের লাগাতার ঘটনা কাম্য নয়। এর সমাধান হওয়া দরকার।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত সামার কনে হঠাৎ করেই বড় ধরণের মব এন্ট্রির ঘটনা ঘটে। ফলে সেই ভেন্যুতে অন্তত মাস তিনেক কনসার্ট আয়োজন বন্ধ ছিল। এরপর কোক স্টুডিও বাংলার কনসার্টে নজির বিহীন নিরপত্তা সংকটের মুখোমুখি হয় দর্শকরা। এরপর ২০২৪ সালের ব্ল্যাকের পুনর্মিলনী কনসার্টেও মব এন্ট্রি ও আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যা সাধারণ দর্শকের জন্য ছিল অস্বস্তিকর। অনেকে ভেন্যু থেকে ফিরে আসেন কনসার্ট উপভোগ না করে। এরপর জেমসের একটি কনাসার্টেও শিল্পীদের বিশ্রামাগার পর্যন্ত বিনা টিকেটের জনতা ঢুকে পড়ে। যা শিল্পীদের জন্যও হুমকির সামিল।
চলমান এই অবস্থা কেউ কেউ জনতার উশৃঙ্খলতাকে দায়ী করলেও, দর্শকরা দায়ী করছেন আয়োজকদের। টিকেটে কাটার পরেও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হবার বিষয়টি কনসার্ট-পরিবেশের জন্য হুমকির সম্মুখীন। মাকসুদ ও ব্যান্ডের কর্ণধার মাকসুদুল হক তার শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, ’তাহলে কী কনসার্ট বন্ধ হয়ে যাবে?’
ভাইকিংসের ভোকাল তন্ময় তানসেন চিত্রালীকে বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কনসার্ট কী করে সম্ভব। এর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
বলা হয়ে থাকে, শীতকাল হচ্ছে বাংলাদেশের কনসার্টের মৌসুম। এই মৌসুমের আগে অস্থিরতা শিল্পীদের জীবনে প্রভাব বিস্তার করবে তো বটেই। শিল্পী মুহিন খানের ভাষায়, ‘পেটে লাথি মারার সামিল’।
ওদিকে দর্শকরাও চায় মনের আনন্দে সকল ব্যস্ততা ভুলে পছন্দের শিল্পীর তোলে দুলতে। তাহলে কারা এই ‘গেট ভাঙা দর্শক’? এই প্রশ্ন শিল্পী, দর্শক ও সারা দেশের সচেতন নাগরিকের। উত্তর আয়োজক ও প্রশাসনের কাছ থেকে আশা করছেন সবাই।
লেখা: সৈয়দা ফারজানা জামান রুম্পা