৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪। বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারের জন্মদিন আজ। ১৯২৬ সালের আজকের দিনে কলকাতায় সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় ও চপলা দেবীর ঘরে জন্ম তার।
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ‘মহানায়ক’ খেতাবটি একান্ত নিজের করে নিয়েছেন যিনি, সেই মানুষটা কিন্তু একদিনে পায়নি সব। কলকাতার আহরিটোলার অতি সাধারণ পরিবারের ছেলে উত্তম কুমার ওরফে অরুণকুমার চ্যাটার্জিকে পরিবারের টানাপোড়েনের কারণে স্কুল জীবনের পা বাড়াতে হয়েছিল চাকরিতে।
তবে তার পৃথিবীতে আসা ইতিহাস গড়তে, তাই তো ভাগ্যের চাকা ঘুরতে ছিল বাধ্য!
সময়টা স্বাধীনতার পর পর। ১৯৪৭ সালে ‘মায়াডোর’ নামের একটি সিনেমায় এক্সট্রা আর্টিস্ট হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পান অরুনকুমার। অভিনয়ের এক পা দু পা করে আগাতে শুরু করেন অরুণকুমার চ্যাটার্জি। অভিনয় জীবনের শুরুতে যদিও নানান চড়াই-উতরাই তাকে পেয়ে বসেছিল। টানা আট বছরে তার অভিনীত আটটি সিনেমাই ছিল সুপার ফ্লপ! এজন্য তিনি পেয়েছিলেন ‘ফ্লপমাস্টার’-এর খেতাব।
টানা ফ্লপ, তারপরও দমে যাননি। শুরুতে সিনেমায় অরুন নামে দেখা দিলেও ‘সহযাত্রী’ সিনেমায় শুটিংয়ের ফাঁকে অভিনেতা পাহাড়ি সান্যাল তাকে হঠাৎ বলেছিলেন, ‘তুমি অরুণ নও হে, তুমি যে উত্তম, উত্তম কুমার।’
তার পরামর্শে নাম পাল্টে হয়ে গেলেন উত্তম কুমার। কাকতালীয়ভাবেই নামটা যেন সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে এলো ‘ফ্লপমাস্টার’ তকমা পাওয়া অরুণকুমার চ্যাটার্জির জীবনে। ‘বসু পরিবার’ সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করে নিজের সিনেমা ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো প্রশংসিত হলেন উত্তম। ১৯৫৩ সালে এলো ‘সাড়ে চুয়াত্তর।’ সুচিত্রা সেনের সঙ্গে প্রথম জুটি বেঁধে অভিনয় করেন উত্তম কুমার। ছবিটি ছিল দর্শকনন্দিত ও ব্যবসা সফল।
সেই শুরু। তারপর থেকে টলিপাড়ার ফ্লপ মাস্টার হয়ে গেলেন রোম্যান্টিসিজমের নায়ক উত্তম কুমার। ১৯৫৪ সালে তিনি চলে আসেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সে বছর তিনি ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন। যার অধিকাংশই ছিল সফল।
উত্তম কুমার মহানায়ক হিসেবে তিন দশক ধরে বাঙালি দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন। এভাবে মাতিয়ে রাখার ইতিহাসও একমাত্র এই উত্তম কুমারের-ই। ১৯৬৬ সালে সত্যজিৎ রায় ‘নায়ক’ লিখেছিলেন উত্তম কুমারকে ভেবেই। নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে দুই শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন উত্তমকুমার। অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেকে বাংলা চলচ্চিত্রের অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক হিসেবে প্রমাণ করেন তিনি।
‘ওরা থাকে ওধারে’ ছবির মাধ্যমে উত্তম-সুচিত্রা জুটি পাকাপাকিভাবে দর্শক হৃদয়ে জায়গা করে নেয়। ২২ বছরে মুক্তি পেয়েছিল উত্তম-সুচিত্রার ৩১টি ছবি। তবে রুপালি পর্দার বাইরে কেমন ছিল এই জুটির সম্পর্ক? পেশাগত নাকি বন্ধুত্ব? নাকি আরও বেশি কিছু? এসব প্রশ্নের শুরু আছে, শেষ হয়নি কখনো! সম্প্রতি মুক্তি প্রাপ্ত সৃজিত মুখার্জির ‘অতি উত্তম’ সিনেমাতেও একটা জায়গায় প্রশ্ন করা হয়, ‘সব গুজব, পুরোটাই মিথ্যে নাকি খানিকটা… যার উত্তর ঐ সিনেমায় থাকা মহানায়কের ছায়া আরও একবার এড়িয়ে যান।
১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মারা যান এই মহানায়ক। ‘এই পথ যদি না শেষ হয়,
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো…’ সেই উত্তর না দিয়েই তার জীবনের পথ হঠাৎ শেষ হয়ে গেলেও সিনেপ্রেমীদের মনে মহানায়কের কখনো মৃত্যু নেই!
লেখা: নূফসাত নাদ্বরুন