ওপার বাংলার টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে আলোচিত দ্বন্দ্বের অবসান ঘটল বড়এক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। ধারাবাহিক নাটক “চিরদিনই তুমি যে আমার” থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন অভিনেত্রী দিতিপ্রিয়া রায়। সহ-অভিনেতা জীতু কমল এর সঙ্গে চলমান মানসিক ও পেশাগত দ্বন্দ্বের জের ধরেই এমন সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
গত কয়েক দিন ধরেই ‘আর্য–অপর্ণা’ ওরফে জীতু দিতিপ্রিয়ার বিবাদ ঘিরে সরগরম ছিল টেলিভিশন মহল। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, সোশ্যাল মিডিয়ায় উত্তাপ এবং একাধিক বৈঠক সব মিলিয়ে ধারাবাহিকটির ভবিষ্যৎ নিয়েই তৈরি হয়েছিল অনিশ্চয়তা। গত শুক্রবার শুটিং সেটে জীতু কমল ফিরে আসায় অনেকে ধারণা করেছিলেন, সমস্যার হয়তো সমাধান হয়েছে। দর্শকরাও তখন আশায় বুক বাঁধেন, অবশেষে দ্বন্দ্ব মিটে এবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে শুটিং। তবে সেই আশা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
শনিবার সকালে ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা যায়, দিতিপ্রিয়া নারী কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে পরামর্শ চাওয়ার পাশাপাশি আর্টিস্ট ফোরামেও লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। এরপরই গুঞ্জন ছড়ায়, তিনি ধারাবাহিকটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সোমবার সেই জল্পনায় সিলমোহর পড়ে।
প্রযোজনা সংস্থা ও চ্যানেল কর্তৃপক্ষ একাধিক দফায় বৈঠক করে দুই শিল্পীর মধ্যে সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় জীতু অনুরাগীদের লাগাতার কটাক্ষ ও বিষোদগারে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন দিতিপ্রিয়া। এর প্রভাব পড়ে তাঁর কাজে। পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে শনিবার থেকেই তিনি ধারাবাহিকে আর কাজ না করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
গত সপ্তাহান্তে আর্টিস্ট ফোরাম দুই পক্ষের সঙ্গেই বৈঠকে বসে, যেখানে চ্যানেল ও প্রযোজনা সংস্থার প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে দিতিপ্রিয়াকে জানানো হয়, যেহেতু তাঁর সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থার কোনো লিখিত চুক্তি নেই, তাই ইন্ডাস্ট্রির প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ধারাবাহিক ছাড়ার আগে অন্তত দুই মাসের নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে নিজের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি নিয়ম শিথিলের আবেদন জানান এবং নোটিশ পিরিয়ড ১৫ দিনে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেন।
২৩ নভেম্বর ই-মেইলের মাধ্যমে বিষয়টি জানানোর কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণে রবিবার তিনি তা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত সোমবার দুপুরে লিখিতভাবে আর্টিস্ট ফোরামকে জানান, শারীরিক ও মানসিক অপারগতার কারণে তিনি আর এই ধারাবাহিকে কাজ চালিয়ে যেতে পারছেন না। আর্টিস্ট ফোরামও বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তাঁকে জোর করা ঠিক হবে না। এরপর ফোরাম পুরো বিষয়টি চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ও প্রযোজনা সংস্থার বিবেচনার জন্য পাঠিয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাতে ফোরাম হস্তক্ষেপ করবে না বলেও জানিয়েছে।
ফোরামের একমাত্র আবেদন, দীর্ঘদিন ধরে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় এই ধারাবাহিকটি যেন বন্ধ না হয় এবং সহ-শিল্পী ও কলাকুশলীদের আর্থিক নিরাপত্তা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। উল্লেখ্য, এসভিএফ প্রযোজিত এই ধারাবাহিক ওপার বাংলায় বেশ জনপ্রিয়। তবে মুখ্য নায়ক-নায়িকার মনোমালিন্যের জেরে এমন বড় সিদ্ধান্ত ইন্ডাস্ট্রিতে খুব একটা দেখা যায় না।
এরই মধ্যে শোনা যাচ্ছে, দিতিপ্রিয়ার পরিবর্তে ধারাবাহিকটিতে নতুন মুখ আনার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছেন প্রত্যুষা পাল, সৌমিতৃষা কুণ্ডু অথবা একেবারে নতুন কোনো অভিনেত্রী।
সব মিলিয়ে, দীর্ঘ বিতর্ক, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ এবং একাধিক বৈঠকের পর দিতিপ্রিয়ার প্রস্থানেই আপাতত ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’এর এই অধ্যায়ের ইতি টানল টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রি। এখন দেখার বিষয়, নতুন মুখ নিয়ে ধারাবাহিকটি কোন পথে এগোয়।