বাংলা সিনেমায় চরম দুঃসময়
দেশে গত সেপ্টেম্বর মাসে মুক্তি পাওয়া বেশিরভাগ সিনেমাই দর্শক টানতে পারেনি। ‘বাড়ির নাম শাহানা’ আর ‘সাবা’ বাদে গত সেপ্টেম্বরে মুক্তি পাওয়া বাকি ঢাকাই সিনেমাগুলোর নেই কোন আমেজ, নেই কোন প্রচারণা। বাংলা সিনেমায় চরম দুঃসময় নেমেছে । একসাথে মুক্তি পেয়েছে ১২টি নতুন ছবি, তবু দর্শক নেই হলে। সিনেমা হল বন্ধের হিড়িক নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিচালক ও প্রযোজকরা। কেন এমন অবস্থা, জানুন বিস্তারিত প্রতিবেদনে।
পবিত্র ঈদুল আজহায় জুনে মুক্তি পাওয়া ছয়টি সিনেমা নিয়ে চলেছিল দর্শক সমালোচকের নানা আলোচনা। সাধারণত ঈদের পরের মাসে সেই রেশ টিকেই থাকে, সিনেমা হলেও দেখা যায় না নতুন কোন সিনেমাও। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর তিন মাসেই পরপর নতুন ছবি এসেছে।
জুলাইয়ে মুক্তি পায় কামার আহমাদ সাইমনের ‘অন্যদিন…’ ও বিপ্লব হায়দারের ‘আলী’। আগস্টে আসে জোবায়দুর রহমানের ‘উড়াল’ আর কবিরুল ইসলামের ‘জলরঙ’। এরপর সেপ্টেম্বর যেন মুক্তির মৌসুম একসঙ্গে ঝড় তোলে আটটি নতুন সিনেমা- ডট, আমার শেষ কথা, নন্দিনী, বাড়ির নাম শাহানা, ফেরেশতে, সাবা, স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা ও উদীয়মান সূর্য।
তবে সংখ্যা যতই হোক, দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেনি বেশিরভাগই। ১২ সিনেমার ভিড়ে কেবল অল্প কয়েকটিই মনে রাখার মতো ছাপ ফেলতে পেরেছে।
প্রচারহীন মুক্তি
বাংলাদেশ-ইরান যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘ফেরেশতে’ নিয়ে শুটিংয়ের সময় ছিল ব্যাপক আলোচনা, কিন্তু মুক্তির আগমুহূর্তে যেন নেমে এলো নীরবতা। সিনেমার দল থেকেও কোনো জোরালো প্রচার দেখা যায়নি। দুই প্রধান অভিনেত্রী জয়া আহসান ও রিকিতা নন্দিনী সামাজিক মাধ্যমেও ছিলেন প্রায় অনুপস্থিত। একই চিত্র ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’-এর ক্ষেত্রেও; নায়ক আদর আজাদকেও পাওয়া যায়নি প্রচারের ময়দানে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সময়ের সীমাবদ্ধতায় ঈদের সময় থেকেই সিনেমার প্রচারে একধরনের স্থবিরতা চলে আসে, যা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এর মধ্যে কেবল ‘বাড়ির নাম শাহানা’ টিমই ব্যতিক্রম তারা প্রচারে নেমেছে সরাসরি মাঠে, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত ঘুরে বেড়িয়েছে পুরো ইউনিট।
অন্যদিকে বেশকিছু সিনেমা এমনভাবেই মুক্তি পেয়েছে যে, খবরটা হয়তো সংশ্লিষ্ট শিল্পীর কানেও পৌঁছেনি! অধিকাংশ নির্মাতা শুধু ফেসবুকে হল লিস্ট পোস্ট করে যেন দায়িত্ব শেষ করেছেন। দর্শক টানার কোনো সচেতন উদ্যোগই ছিল না।
তিন মাসে মুক্তি পাওয়া ১২ সিনেমার বেশিরভাগই তিন চার বছর আগে নির্মিত; নানা জটিলতায় এতদিন আটকে ছিল। কোনো সিনেমা তো এত পরে মুক্তি পেয়েছে যে সিনেমার নায়িকার সঙ্গে নির্মাতাদেরই আর যোগাযোগ নেই। এই যেমন মোস্তাফিজুর রহমানের ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা’; গত মাসে মুক্তির সময় নির্মাতা জানিয়েছিলেন, ছবির নায়িকা নিশাত সালওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি তারা।
নারীকেন্দ্রিক সিনেমা
তিন মাসের সিনেমার মধ্যে সবচেয়ে ইতিবাচক ছিল নারীকেন্দ্রিক গল্প বাড়ার ঘটনা। সেপ্টেম্বরের তিন সিনেমা- ‘বাড়ির নাম শাহানা’, ‘ফেরেশতে’ আর ‘সাবা’র প্রধান চরিত্র নারী; এর মধ্যে শাহানার নির্মাতাও নারী লীসা গাজী। একই মাসে দুই সপ্তাহে তিনটি নারীকেন্দ্রিক সিনেমা মুক্তি, ঢালিউডের জন্য নতুন ঘটনা।
হল বন্ধের ঘোষণা
ঈদের পর থেকে এক ডজন ছবি পর্দায় এলেও সেগুলোর কোনোটি দর্শক টানতে পারেনি। কয়েকটি ছবি তো প্রথম দিনেই নামতে বাধ্য হয়েছে প্রেক্ষাগৃহ থেকে। ব্যবসায়িক হিসেবে সব কয়েকটিই চরম লোকসানের মুখ দেখেছে। ফলস্বরূপ টিকতে না পেরে একের পর এক সিনেমা হলে তালা ঝুলিয়ে দিচ্ছে, যেন ঢালিউডে সিনেমার ভাগ্য চাকা ঘুরছেই না। সম্প্রতি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশের তিন হল যশোরের মণিহার, বগুড়ার মধুবন ও কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাস। ক্রমাগত লোকসানে হলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ। সামনের মাসগুলোতে আরও কয়েকটি হল বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে। তাই বছরের শেষ তিন মাসের পর্যালোচনা লিখতে গিয়ে হয়তো সিনেমার চেয়ে হল কয়টি টিকে আছে, সেটাই হয়ে উঠতে পারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।