রাজেশ খান্না ছিলেন একজন ভারতীয় অভিনেতা, চলচ্চিত্র প্রযোজক এবং রাজনীতিবিদ। তাকে ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র ইতিহাসের প্রথম সুপারস্টার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তিনি ছিলেন সংসদ সদস্যও। এতো সফল হওয়ার মাঝেও এই সুপারস্টারের জীবনের শেষ দিনগুলি কেটেছে দুঃখজনকভাবে। একাকিত্ব আর জীবনের শেষ ইচ্ছা পূরণ করার সুযোগ না পেয়েই চিরবিদায় নেন তিনি।
২০১২ সালে তার মৃত্যুর পর, তার মুম্বাইয়ের বিখ্যাত বাসভবন, আশির্বাদে এক আশ্চর্যজনক আবিষ্কার ঘটে। বন্ধুবান্ধব এবং পরিচিতদের জন্য উপহারে ভরা চৌষট্টিটি বন্ধ স্যুটকেস আবিষ্কার করা হয়। দেশ-বিদেশ ভ্রমণের সময় তিনি এই উপহারগুলো সংগহ করেন। যদিও এগুলো এখনো কাউকে দেয়া হয়নি। গৌতম চিন্তামণির লেখা খান্নার জীবনী বই “ডার্ক স্টার: দ্য লোনলিনেস অফ বিয়িং রাজেশ খান্না”তে তার জীবনের এই দিকটি গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বইটিতে এমন একজন ব্যক্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে যিনি তার রাজকীয় জীবনধারা এবং বিপুল জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও, গভীর একাকীত্বের সাথে লড়াই করেছিলেন।
তবে এই একাকী হওয়ার অন্যতম কারণ বউ ডিম্পল কাপাডিয়ার সাথে আলাদা হয়ে যাওয়া। ১৯৭৩ সালে ডিম্পল কাপাডিয়ার বয়স যখন ১৬ বছর সে সময়ই তিনি কিংবদন্তি প্রয়াত রাজ কাপুর পরিচালিত ছবি ববিতে অভিনয় করেন। সিনেমাটি মুক্তির কিছুক্ষণ আগে, খান্না এবং ডিম্পল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে ১৯৮০-এর দশকে এই দম্পতি আলাদা হয়ে যান কিন্তু আইনত কখনও বিবাহবিচ্ছেদ করেননি। তাদের বিচ্ছেদ সত্ত্বেও, রাজেশের শেষ দিনগুলিতে ডিম্পল তার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, অসুস্থতার সময় তার যত্ন নিয়েছিলেন, দেখিয়েছিলেন যে তাদের বন্ধন দূরে থাকা হলেও মানবিকতা শেষ হয়ে যায়নি।
এতোসব একাকীত্ব ও পাওয়া না পাওয়ার মাঝে আরেক দুঃখ গ্রাস করেছিল রাজেশ খান্নাকে। অপুর্ণ থেকে যায় রাজেশ খান্নার শেষ ইচ্ছা।
বন্তি ফিল্মসের সাথে কথোপকথনের সময়, খান্নার বান্ধবী অনিতা আদভানি জানিয়েছিলেন যে রাজেশ খান্না তার প্রিয় বাংলো, ‘আশীর্বাদ”কে একটি জাদুঘরে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। ১৫০ কোটি টাকার প্রস্তাব সত্ত্বেও, তিনি এটি বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন, এর উত্তরাধিকার রক্ষা করার আশায়। তবে দুঃখের বিষয়, তার মৃত্যুর পর, বাংলোটি ভেঙে ফেলা হয় এবং তার স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যায়।
জানা যায়, রাজেশ খান্না এবং অনিতা আদভানি ২০০০ সালের গোড়ার দিকে ও খান্নার জীবনের শেষের দিকে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০১২ সালে রাজেশ খান্নার মৃত্যুর পর তাদের সম্পর্ক জনসমক্ষে আসে, যখন অনিতা নিজেকে তার লিভ-ইন পার্টনার হিসেবে দাবি করেন এবং তার উত্তরাধিকার সম্পর্কে মানসিক ও আইনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রাজেশ খান্না ১৮ জুলাই ২০১২ সালে ৬৯ বছর বয়সে মারা যান। তিনি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতার সাথে লড়াই করছিলেন, যা ক্যান্সার বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়, যদিও পরিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তার শারীরিক অবস্থার সঠিক অবস্থা জানায়নি কখনোই।