তথাকথিত সমাজে বর্তমানে একটা মেয়ে সুন্দর হয়ে ওঠে তার শরীরের গঠনে। আর নারীর শরীরের সেই পার্ফেক্ট গঠনের নির্দিষ্ট একটি মাপ কাঠিও দেওয়া আছে, ৩৬-২৪-৩৬!
সিনেমাটি দর্শকদের ভাষ্য সকল শ্রেণির মানুষের জন্যই একটি সিনেমা বানিয়েছেন পরিচালক রেজাউর রহমান। কিন্তু ৩৬-২৪-৩৬ সিনেমাটি আসলে প্রতিটি মেয়েরই উচিত এ সিনেমাটি দেখা। কারণ এটি শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি মেয়েদের জীবনের সেই অব্যক্ত যন্ত্রণার গল্প, যা চেহারার সৌন্দর্য বা শরীরের গড়ন নিয়ে সমাজের তির্যক মন্তব্যের মুখে বারবার শুনতে হয়। মোটা হওয়া বা তথাকথিত সৌন্দর্যের সংজ্ঞার বাইরে থাকা মেয়েদের গল্পই তুলে ধরেছেন নির্মাতা রেজাউর।
স্পয়লার এলার্ট!
‘৩৬-২৪-৩৬’ সিনেমার গল্পটা আমাদের সময়কার। সুদর্শন এক যুবক প্রচুর অ্যাফোর্ট দিয়ে একটা অনলাইন পেজের অ্যাডমিন ও মালিককে পটানোর চেষ্টা করে। মেয়েটা পটতে চায় না কারণ, তার ওজন বেশি। কিন্তু ছেলেটাও দারুণ নাছোঁড়বান্দা! ফ্লার্টিংয়ের সর্বোচ্চ স্কিল ব্যবহার করে দেখা করে মেয়েটার সাথে।
তারা দারুণ একটা দিন কাটায়। মেয়েটার মনে হতে থাকে, সবাই এক না। কেউ কেউ ভালো হয়। কিন্তু তার ঠিক পরের দিনই ছেলেটার অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাক্টিভেট হয়ে যায় এবং খবর আসে ছেলেটি ক্যান্সারে মারা গেছে!
জলজ্যান্ত একটা মানুষ হঠাৎ নাই হয়ে গেল? গল্পের মেয়েটা এই ট্রমা থেকে বের হবে কিভাবে? কিংবা এর পরেই বা গল্প কোন দিকে যাবে? সিনেমা শুরু অল্প সময়ের মধ্যেই এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন দর্শকের মাথায় ঢুকিয়ে দেন নির্মাতা।
অভিনয়ের দিক বিবেচনা করলে বলা যায়, ৩৬-২৪-৩৬ সিনেমার প্রতিটি চরিত্র গল্পটাকে আপন করে নিজেদের উজাড় করে দিয়েছেন। কাস্টিং বাছাই নিয়ে নির্মাতার তারিফ করতেই হয়। কারণ সিনেমার গল্প যে সোসাইটিকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে, নির্মাণের ক্ষেত্রে সেই সোসাইটিতে বিলং করা শিল্পীদেরই নেওয়া হয়েছে।
বড়লোক বাবার আদুরে মেয়ের চরিত্রে নিজেকে অনেক সুন্দর করে ফুটিয়ে তোলার জায়গা পেয়েছে চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। দীঘির চোখ ও শারীরি ভাষায় চরিত্র ফুটে উঠেছে দুর্দান্তভাবে। এই প্রথম হয়তো দর্শক দীঘিকে অভিনয়ে পূর্ণ মার্ক দেওয়ার জায়গা পেয়েছেন। পাশাপাশি বিশেষ নজর কেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে পরিচিত কারিনা কায়সার। ৩৬-২৪-৩৬ সিনেমাটি দেখার পর সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরলে নজরে আসে কারিনাকে পুরোদমে অভিনয়ে দেখতে চাচ্ছেন দর্শক! প্রথম সিনেমা হিসেবে নিজের ইমোশন গুলো যতটা সাবলীল ভাবে ক্যামেরার সামনে তুলে ধরেছিলেন কারিনা কায়সার সেটি ছিলো ৩৬-২৪-৩৬ সিনেমার অন্যতম প্লাস পয়েন্ট।
সবশেষে বলতেই হয় সিনেমাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাসেজ দেয় — আপনি যেমনই হোন, নিজের প্রতি বিশ্বাস হারাবেন না। হতাশ হবেন না, কারণ হয়তো সৃষ্টিকর্তা আপনার জন্য উত্তম কারোর অপেক্ষায় রেখেছেন। মোটা হওয়া মানেই আপনার মূল্যহীন নন। ৩৬-২৪-৩৬ আসলে শুধু একটি বিনোদনমূলক সিনেমা নয়, এটি এমন এক গল্প যা প্রতিটা দর্শককে একবার হলেও ভাবতে বাধ্য করবে।
লেখা: নূফসাত নাদ্বরুন