১৯ আগস্ট ২০২৪। কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ও শক্তিমান কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের ৮৯তম জন্মদিন আজ। ভালো নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ হলেও সকলের কাছে জহির রায়হান নামেই পরিচিত এই সফল চলচ্চিত্রকার, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক। ১৯৩৫ সালের এই দিনে ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার মজুপুরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
কিন্তু তার মৃত্যুর দিনটি অজ্ঞাতই রয়ে গেছে আজও। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মিরপুরে তার ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। ধারণা করা হয় মিরপুরে বিহারী এলাকায় ছদ্মবেশী পাকিস্তানি সৈন্যদের গুলির আঘাতে তিনি মারা যান।
১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ১০ জনের যে দলটি ১৪৪ ধারা ভেঙেছিল, জহির রায়হান তাদেরই একজন। ১৯৬৯ সালের অভ্যুত্থানেও জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশে বহুল পঠিত উপন্যাসের নাম জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’। গ্রামীণ মানুষের জীবনের কথা উঠে এসেছে এই উপাখ্যানে। বইটি প্রকাশের এত বছর পরও পাঠকের কাছে একটুও আবেদন কমেনি বরং বেড়েছে।
বাংলা চলচ্চিত্রে মেধাবী যেসব মানুষ নিজের পদচিহ্ন রেখে গেছেন তাদের একজন জহির রায়হান। তার চলচ্চিত্রগুলো এখনও বিশাল একটা জায়গা জুড়ে আছে বাঙালির মনে। আর তার লেখা হয়ে আছে অমর। তার ‘আরেক ফাল্গুন’ ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে লেখা এক অসাধারণ উপন্যাস। যার একটি লাইন- ‘আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হবো’ নতুন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদের ভাষা!
১৯৫৬ সালে শুরু হয় জহির রায়হানের চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ। নির্মাতা হিসেবে ১৯৫৭ সালে উর্দু ভাষার ‘জাগো, হুয়া সাভেরা’ ছিল তার প্রথম সিনেমা। নায়ক রাজ রাজ্জাক অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘বেহুলা’র পরিচালকও জহির রায়হান। ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি ছিল জহির রায়হানের অমর এক সৃষ্টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল সিনেমাটি। রাজ্জাক, সুচন্দা, রোজী সামাদ, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, আনোয়ার হোসেনের মত তাবড় তাবড় অভিনয়শিল্পীদের নিয়ে নির্মিত কালজয়ী সিনেমাটি আজও গেঁথে আছে বাংলা সিনেমা প্রেমীদের মনে।
তার সাংবাদিকতা শুরু হয় ১৯৫০ সালে ‘যুগের আলো’ পত্রিকার মাধ্যমে। ১৯৫৬ সালে তিনি সম্পাদক হিসেবে ‘প্রবাহ’ নামে একটি পত্রিকায় যোগ দেন।
শিল্প-সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘নিগার চলচ্চিত্র পুরস্কার’, ‘আদমজী সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ‘বাংলা একাডেমির মরণোত্তর সাহিত্য পুরস্কার’সহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।