-মোঃ অলিউর রহমান-
ফরাসি পরিচালক ব্রুনো দুমো একবার বলেছিলেন, ”চরিত্র ও অভিনয় শিল্পীর সঠিক মেলবন্ধন ঘটানোই একজন ভালো পরিচালকের কাজ ”।কথাটির সত্যতা মেলে সোহানুর রহমান সোহানের কর্মজীবন পর্যালোচনা করলে। ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় এ পরিচালক ক্যারিয়ারের ২৫ টি সিনেমায় শুধুমাত্র চরিত্র অনুযায়ী অভিনয়শিল্পী নির্বাচন করেই ক্ষান্ত হননি বরং ঢালিউডে পরিচয় করে দিয়েছিলেন একঝাঁক নতুন মুখ যারা পরবর্তীতে দেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে ‘তারকা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল।কোন কোন তারকার অভিষেক হয়েছিল সোহানের হাত ধরে? চলুন জেনে নিই চিত্রালীর এই বিশেষ আয়োজনে।
১.সালমান শাহ, মৌসুমী ও আগুন (১৯৯৩)
১৯৮৮ সালে সোহানের পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ মুক্তি পেলেও ১৯৯৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ তাকে পরিচালক হিসেবে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দেয় । “আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট”এর বিজয়ী হওয়ার পর ১৯৯০ সাল থেকে শোবিজে কাজ শুরু করা মৌসুমীকে প্রথমবার তার এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমেই বড় পর্দায় দেখা গিয়েছিল।সিনেমাটির নায়ক হিসেবে তৌকীর আহমেদ,মডেল-অভিনেতা আদিল হোসেন নোবেলকে প্রস্তাব দেওয়ার পরে তারা তা গ্রহণ না করলে খোশনুর আলমগীরের পরামর্শে ইমন নামের এক যুবককে তার পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সালমান শাহ হিসেবে বড় পর্দায় পরিচয় করিয়ে দেন সোহান ।১৯৯৩ সালে আনন্দ মেলা সিনেমা দ্বারা পরিবেশিত তের কোটি টাকা আয় করা সিনেমাটির মাধ্যমে কণ্ঠশিল্পী আগুনও চলচ্চিত্রে নিজের অভিষেক ঘটান ।
২. শাকিল খান ও পপি (১৯৯৭)
১৯৯৭ সালে পরিচালকের দ্বারা নির্মিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাকিল খান ও পপি ।ছবিটির জন্য ১৯৯৪ সালে নির্মাতার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন অভিনেতা শাকিল খান ।মনতাজুর রহমান আকবরের পরিচালিত ও একই সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কুলি’কে পপির প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হিসেবে ধরা হলেও সোহানের পরিচালিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমাটিই পপির অভিনয় করা প্রথম চলচ্চিত্র ।
৩.শাকিব খান ও ইরিন জামান (১৯৯৯)
১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে অভিষেক হয় শাকিব খান ও ইরিন জামানের ।সোহানের পরামর্শেই মাসুদ রানা থেকে শাকিব খান হয়ে ওঠেন আজকের ‘প্রিয়তমা’খ্যাত তারকা । হালের জনপ্রিয় তারকা শাকিব খান আফতাব খান টুটুলের ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ সিনেমাটির মাধ্যমে প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেও ‘অনন্ত ভালোবাসা’ কেই অভিনেতার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র হিসেবে ধরা হয় । ছবিটিতে শাকিব খানের সাথে মৌসুমীর ছোট বোন্ ইরিন জামান অভিষেক করলেও পরবর্তীতে আর চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে পারেননি তিনি ।
সোহানুর রহমান সোহানের মৃত্যুতে যে অপুরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র তা এই কথা থেকেই অনুমান করা যায়, মৃত্যুর আগে তিনি চিত্রনাট্যকার ছটকু আহমেদের সাথে একদম নতুন মুখ নিয়ে সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করছিলেন । হয়ত শাকিব,সালমানের মতই আরও বড় তারকা নিয়ে আসতে পারতেন তিনি, তার মৃত্যুতে সেই কাজ অসমাপ্তই রয়ে গেল ।