সাবেক মিস ইউনিভার্স সুস্মিতা সেন যতটা না পর্দায় সফল, তার থেকে বেশি সফল যেন দর্শনে। তার কথায়, আচার-আচরণে বোঝা যায়, কেন তিনি বিশ্বকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ঠিক তিরিশ বছর আগে তিনি ভারতের বিশাল মঞ্চ হিসেবে খ্যাত, ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া হয়েছিলেন। তার প্রধান প্রতিযোগী তখন ঐশ্বরিয়া রায়। প্রতিযোগিতায় আসার আগেই নীলাভ নয়নের ঐশ্বরিয়া ছিলেন জনপ্রিয়। আর বাংলার মেয়ে সুস্মিতা আনকোরা। এমন কী অ্যাশের নাম শুনে নিজের ফর্মটিও তুলে নিতে যাচ্ছিলেন প্রায়। নিয়েছিলেনও। তার কথা ছিল – এতো সুন্দর অ্যাশের সাথে তো তিনি কোনও মতেই পারবেন না। পরে মা বললেন, কেন হারার আগে হেরে যাচ্ছো? তোমার যদি হারতেই হয়, তাহলে তার সাথে হারো যে সব চেয়ে সুন্দরী হিসেবে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন!
এই কথা শুনে তিনি ফের ফর্ম জমা দেন। আর বাকীটা ইতিহাস। সার্টিনের কাপর কিনে গাউন বানানো বাসার নিচের দর্জির কাছ থেকে, মোজাতে ইলাস্টিক যুক্ত করে হাতের মোজা বানানো, বেচে যাওয়া কাপড় দিয়ে গোলাপের ফুল তৈরি করে গাউনে যুক্ত করার সাফল্য যেন ধরা দিল মিস ইন্ডিয়ার মঞ্চে। ভারতসহ সারা বিশ্ব অবাক হয়ে দেখলো কিভাবে অর্বাচীন এক কিশোরী ধারালো সুন্দরীকে পেছনে ফেলে ঝলমলে মুকুটটি মাথায় পড়ে নিল। দেখলো, নীল চোখের হেরে যাওয়া এক টোল পড়া হাসির কাছে। শুধু তাই নয়, এরপরে বিশ্বমঞ্চও দেখলো ছিপছিপে লম্বা এক তথাকথিত উপমহাদেশীয় বর্ণের কন্যার জয়।
যার কথা বলছি তিনি সুস্মিতা সেন। যদিও তার বলিউডের ক্যারিয়ার সুবিধার ছিলনা। সিনেমা নির্বাচনে ভুল সিদ্ধান্ত, প্রেমিক নির্বাচনেও একই ভুল তাকে বারবার পিছিয়ে দেয়। কিন্তু তিনি তার গতিতে হেটে গেছেন অনেকটা পথ কচ্ছপের মতন – বিজয়ের দিকে।
বেলা শেষে তিনি ব্রান্ড ও তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে এখনও আছেন সকলের পছন্দের শীর্ষে। তার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পৃথিবী যতই বাজে ভাবে তোমাকে প্রশ্ন করুক, তুমি উত্তর দেবে শান্ত ভাবে, নিজের বক্তব্য রাখবে কঠোররূপে – তবে শব্দ যেন সুন্দর হয়। কারণ পৃথিবী প্রশ্ন মনে রাখেনা, পৃথিবী মনে রাখবে তোমার উত্তর।
আরেকবার সিমি গারওয়ালের এক শো তে তিনি বলেন, আমার হারার ভয় নেই। কারণ আমি জেনে গেছি আমি নিখুঁত নই। যখনই নিজেকে সবাই সঠিক মনে করে, তখনই হেরে গেলে বা কোনও ব্যর্থতা আসলে তারা ভেঙে পড়ে। আমি জানি অতটা পারফেক্ট আমি না, ফলে আমার জীবনে ব্যর্থতা আসা অসম্ভব কিছু না।
এজন্য হয়তো লোকের না না মন্তব্যকে তিনি উপেক্ষা করে গেছেন। মা হয়েছেন সন্তান দত্তক নিয়ে। প্রেমিক তার জীবনে এসেছে একেক ঋতুর নামে, তবে বসন্ত আসেনি এখনও। তিনি এটাকেও স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন।
এমন কী সিনেমার ক্ষেত্রেও ছোট বড় রোলকে তিনি নিয়েছেন স্রেফ কাজের বিবেচনায়। ‘ম্যায় হু না ‘ সিনেমাতে পরিচালক ফারাহ খান তাকে বলেই দিয়েছিলেন, রোল ছোট, স্ক্রিণে ততটা দেখা যাবে না। এমন কী এডিটের পরেও তোকে ফোন করে বলেন, সরি সুশ, সিনেমাতে তোমার দেখা মেলা ভার।
এমন কী পোস্টারে্র শাহরুখ খান – অমৃতা রা্ও এবং জায়েদ খানের মুখ। সেই সুশ। সিনেমা রিলিজের পর ইযাশ চোপড়া থেকে শুরু করে বলিউডের এমন কেউ নেই যে সুস্মিতাকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানাননি। জর্জেট শাড়ি, ভিন্ন রকমের ব্লাউজ, কারুকাজের ফাইল হাতে মিস চাঁদনি হয়ে উঠলেন রাতারাতি বলিউডের স্বপ্ন নারী। আর পরদিন পোস্টারে চলে এলেন শাহরুখের পাশে।
তিনি এই ঘটনাটিকে বলেন দর্শকের ভালোবাসা। সুস্মিতা সেনের মতে একমাত্র দর্শকই তাকে ভালোবেসে টিকিয়ে রেখেছে ব্যস্ত বলিউডের চলমান হারিয়ে যাবার গল্পে।
একারণেই ঊন পঞ্চাশ বছর বয়সেও তিনি ড্রিম গার্ল উইথ আ ড্রিম জার্নি। তার তুলনা তিনি নিজেই। কারণ তিনি একই সাথে সুহাসিনী, সুভাষিনী ও সুস্মিতা।