শাকিব খানের সিনেমা মানেই নতুন চমক। তার কিছুটা নায়িকা কেন্দ্রিক বটেও। প্রিয়তমা সিনেমার সময় পশ্চিম বাংলার টিভিস্টার ইধিকা পল, দরদ’-এর নায়িকা সোনাল চৌহান বা রাজকুমারের কার্টনি কফি নিয়ে কম আলাপ হয়নি। কিন্তু কেন বিদেশি নায়িকা দেশি নায়কের সাথে বারবার? এমনও সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে বারবার। এবার উরাধুরা নায়িকা মিমি চক্রবর্তী বাংলাদেশের তুফানে, নিজের তুফানি পারফরমেন্স করার পর যেন আবারও নড়ে চড়ে বসেছেন অনেকে।
কেন নায়ক খুঁজে ফেরেন ভিনদেশের নায়িকা? নাকী ভিন্ন ভিন্ন নায়িকা?
আজকে আলোচনা করবো এই চমকের উপর স্ট্র্যাটেজি বা স্ট্র্যাটেজির জন্য চমক নিয়েই।
নায়িকা দিয়ে চমকের ব্যাপারটা কিন্তু খুব বেশি অপরিচিত নয়। বিশেষ করে পাশের দেশ তথা ভারতে কিন্তু নায়ক এক – নয়িকা অনেক এই ফর্মূলা অনেক আগে থেকেই দেখা যায়।
দেব আনন্দ তার সিনেমাতে একের পর এক নায়িকাকে ব্রেক দিয়েছেন। আবার রোমান্টিক ঘরানার নায়ক ঋষি কাপুরের বিপরীতে অভিনয় করেননি এমন নায়িকা খুব কমই আছেন। অবশেষে কারিশমা কাপুর, অর্থ্যাৎ তার ভাইঝি যখন নায়িকা হিসেবে নিয়মিত হন- তখন থেকে অঘোষিত অবসরে চলে যান এই অভিনেতা। তার বিপরীতে ডিম্পল কাপাডিয়া থেকে প্রয়াত দিব্য ভারতীকেও দেখা গেছে। কারণ হিসেবে নির্মাতারা বলতেন, নায়কের রোমান্স আর রোমান্টিক ইমেজ দর্শককের পছন্দ বটে- তাই বলে একই নায়িকার সাথে বার বার??
একই কারণে অমিতাভ বচ্চন আর রেখার জুটি সফল হলেও সেখানে অনেক নায়িকাকেই দেখা গেছে। যেমন মিনাক্সী শেষাদ্রী, জয়া প্রদা বা স্মিতা পাটিল। এরপর থেকে কিন্তু নায়ক একটু জনপ্রিয় হলে নায়িকা আনকোড়া এমন ‘ব্লাইন্ড গেইম’ও খেলতে দেখা গেছে। জুটি হিট তো নতুন জুটি উপহার পেল ইন্ডাস্ট্রি। এই ক্যারিয়ারজুয়ায় এগিয়ে যান আমির খান।
জুহি চাওলা, মাধুরীর মত হিট নায়িকা ছেড়ে সেই আমলের কম হিট- অপেক্ষাকৃত নতুন নায়িকার সাথে সিনেমা করা শুরু করলেন। ‘সারফারোশ’-য়ে সোনালি বেন্দ্রে, ‘বাজী’তে মমতা কুলকার্নি, ‘গুলাম’-য়ে রানী মুখার্জির সংযোজন সেই কৌশলেরই ইঙ্গিত দেয়। আবার ‘লগান’ সিনেমাতে গ্রেসি সিংয়ের মত একেবারে নবাগতকে নিয়ে হৈচৈ ফেলে দেন বলিউডে।
এখন তো আমির খানের নতুন গল্প মানেই নতুন মুখ। তা সে ‘দাঙ্গাল’ হোক বা ‘লাপাত্তা লেডিস’। সালমান খানও মাধুরী, শ্রীদেবীকে ছেড়ে রেবতীকে নিয়ে করলেন ‘লাভ’ সিনেমা। তখনও দক্ষিণীরা বলিউডে চলতে হোচট খাচ্ছেন এদিক সেদিক। কিন্তু হিরো এক রেখে হিরোইনে চমক আনার চেষ্টা চলে দক্ষিণীদের দিয়েই। কারিশমা কাপুরের সাথে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি থাকলেও একে একে ব্রেক দিয়েছেন স্নেহা উল্লাল, জারিন খানম, ক্যাটরিনা কাইফের মত তারকাদের।
এরপর অবশ্যই আসে শাহরুখ খানের কথা। তিনিও রোমান্টিক ইমেজে কাজলের সাথে সবাইকে ছাপিয়ে গেলেও নিজের রোমান্টিকতা নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট কম করেননি। আজকের বিগশট আনুশকা শর্মা বা দীপিকা পাড়ুকোণ এই শাহরুখের সাথে রোমান্স করেই বলিউডে স্থান পাকাপোক্ত করেন। পাকিস্তানের তারকা মাহিরা খান পাক-ভারতে সাড়া ফেলেন ‘রইস’ সিনেমার মাধ্যমে। স্বদেশ সিনেমার নায়িকা ছিলেন বলা যেতে পারে একটি চমক – গায়ত্রী যোশী। একটা সিনেমাই তার ক্যারিয়ার। এর আগে ভুলে গেলে চলবে না, বিগ বাজেট মুভি ‘পরদেশ’ সিনেমাতে নতুন মুখ হিসেবে মাহিমা চৌধুরীও ব্রেক পেয়েছিলেন শাহরুখের বিপরীতে।
এখন তো শাহরুখের সিনেমা মানেই নায়িকাতে চমক। দক্ষিনে নয়নতারা হোক, তাপসী পান্নু হোক বা গুঞ্জনের রেশ ধরে সামান্থা রুথ প্রভুই হোক। চমক থাকছেই! এবার দেশের সীমানায় আসলে হালের শাকিব খানকে আলোচনাতে আনতেই হয়। শাকিব-অপু, শাকিব-বুবলী বা আগের শাকিব-শাবনূর, এমন জুটি প্রথায় নিজেকে না আটকে ক্রমশই তিনি একাই যেমন বটগাছের মত হয়ে উঠছেন, আবার বটের ছায়াতে অনেক নায়িকাদের নিয়েও আসছেন।
বাংলাদেশে তার বিপরীতে কাজ করতে দেখা গেছে দর্শকপ্রিয় মুখদের। জয়া আহসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, বিদ্যা সিনহা মিম, মাসুমা রহমান নাবিলা- শাকিবের বিপরীতে চমক হিসেবেই পর্দায় এসেছেন।কেয়া, রত্না, বিন্দু, শখ, রোমানা, সিমলা, ববি অনেককেই কিন্তু দেখা গেছে শাকিবের সাথে। আবার ‘আইটেম গানে’ হালের সেনসেশন রিদ্ধি শেখ এবং নুসরাত ফারিয়াকেও দেখা গেছে। ‘রসিক আমার’ দিয়ে নাচে মাত করেন শাকিব-নুসরাতের গান রিলিজের সাথে সাথেই।
কলকাতাতেও শাকিবের যাত্রা রঙীন। এসময়ে সামাজিক মাধ্যমে মাতামাতি থাকলেও কলকাতার একাধিক স্টার তারকা শাকিবের বিপরীতে কাজ করেছেন। অনেকেই হয়তো জানেনই না যে রচনা ব্যানার্জির সাথেও শাকিব কাজ করেছেন। এছাড়া স্বস্তিকা মুখার্জি, শ্রাবন্তী, পাওলি দাম, পায়েল, শুভশ্রী, নুসরাত- ও আছেন এই তালিকায়। দেশের বাইরের নায়িকাদের মধ্যে যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘শিকারি’ হচ্ছে সবচেয়ে ব্যবসাসফল সিনেমা। এই সিনেমার মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে নতুন এক শাকিব খানের জন্ম হয়। ছবিটি মুক্তির পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নিজের একটা ছাপ ফেলতে পেরেছেন শাকিব খান।
নায়কদের স্থান ধরে রাখার একটি স্ট্র্যাটেজি হিসেবে এই নতুন নায়িকা – নতুন চমক বিষয়টি আসলে বিশ্বজুড়েই আছে। একই নায়ক একই রোমান্স একই নায়িকার সাথে করলে বা একই নায়িকার জন্য বারবার কাঁদলে দর্শকদের মনে হিতে বিপরীত হতে পারে- এমনটা ভেবেই হয়তো নায়িকাতে এসেছে চমক।
তবে হ্যাঁ, জুটি বদলে দিয়েই তো সিনেমা হিট করে না, শিকারি বা তুফান প্রমাণ করেছে গল্প আর মেকিংটাও খুব দরকার। ওদিকে স্বদেশ আর লগানেরও গল্পটা কিন্তু শক্ত ইস্পাতের মতই। ফলে নায়িকার চমক থাকুক, নাচে ঠমক থাকুক- সিনেমাকে হতেই হবে উরাধুরা। আর হিরো হিরোইন তকমার বাইরে অভিনয়কে হতে হবে শক্ত হাতিয়ার।