বাংলা সংগীতের কিংবদন্তি সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া প্রথম রেকর্ডিংই হয়ে যায় জাতীয় সংগীত। তিনি প্রথম গেয়েছিলেন জহির রায়হানের জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রে, যেখানে সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’। তখনো সাবিনা ইয়াসমিন জানতেন না গানটি চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হবে। এটিই ছিল তাঁর রেকর্ড করা প্রথম গান।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সংগীত হিসেবে পরিবেশিত হয়। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে গানের প্রথম দশ চরণকে জাতীয় সংগীত ঘোষণা করা হয়।তবে তাঁর প্লেব্যাক অভিষেক ঘটে ১৯৬৭ সালে আগুন নিয়ে খেলা চলচ্চিত্রে। ছবিটির পরিচালক হিসেবে আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চুর নাম থাকলেও গানগুলোর দায়িত্বে ছিলেন জহির রায়হান। আলতাফ মাহমুদের অনুপ্রেরণায় গানটি গাওয়ার পর তিনি জানতে পেরেছিলেন জহির রায়হান তাঁর কণ্ঠের প্রশংসা করেছিলেন ।
সাবিনা ইয়াসমিন জানিয়েছেন, “আমি প্রথম গান করি সমবেত কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা’। পরবর্তীতে সেটাই জাতীয় সংগীত হয়। আর আমার প্রথম প্লেব্যাক হয় আগুন নিয়ে খেলা ছবিতে, জহির রায়হানের তত্ত্বাবধানে।”
সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রথম প্লেব্যাকের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আলতাফ মাহমুদের বাসা আমাদের বাসার পাশেই ছিল। তিনি আমার মাকে রাজি করালেন। তার আগে আমি ছোটদের গান করতাম। মা বললেন, আর কত ছোটদের গান করবি। এটা কর। তারপর গাওয়া হলো। দেড় মাসের মতো সে গানের খোঁজ পেলাম না। জানতেই পারলাম না গানটি ঠিকঠাক হয়েছিল কি না। কিন্তু দেড় মাস পর আলতাফ মাহমুদ হাজির হলেন। বললেন, ওই ছবির আরেকটা গান গাইতে। সেসময়ই তিনি বললেন যে, জহির রায়হান সাহেব গানটা খুব পছন্দ করেছেন। তিনি প্রশংসা করেছেন। আমি এ কথা শুনে খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। গর্বে বুকটা ভরে উঠেছিল। আমি জানি না ছবিটি কে তখন পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু নেপথ্যে ছিলেন জহির রায়হান। আমি জহির রায়হানের বানানো চলচ্চিত্রের সাত থেকে আটটা গান গেয়েছিলাম।
জাতীয় ইতিহাসের সঙ্গে মিশে থাকা এই সূচনাই সাবিনা ইয়াসমিনকে পরিণত করে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পীতে ।