Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
সোমবার, জুন ২, ২০২৫

শ্যামল মাওলা: ‘অভিনেতা-নেত্রীরাও যে যুদ্ধ করেছে একথা কারো মাথায় আসেনি’  

থিয়েটার থেকে টিভি নাটকে অভিনয়, তারপর এক মর্মস্পর্শী গল্প নিয়ে সিনেমায় আগমন। ছোট আর বড়পর্দার পাশাপাশি চমৎকারসব অভিনয় দিয়ে নিজেকে তৈরি করে তুললেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় স্ট্রিমিং প্লাটফর্ম ওটিটির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে। এখন পালাক্রমে নাটক, সিনেমা, এবং ওটিটি সবখানেই অভিনয় করে যাচ্ছেন বেশ দাপটের সঙ্গে। বলছি এই সময়ের অন্যতম শক্তিশালী ও জনপ্রিয় অভিনেতা শ্যামল মাওলার কথা। থিয়েটার ও অভিনয়ের সঙ্গে যার দীর্ঘ দুই যুগের পথচলা। এই দীর্ঘ পথচলার শুরুর ইতিহাস, অভিনয় জীবনের নানান অভিজ্ঞতা, অভিনেতার আকাঙ্ক্ষা ও আরো কিছু অজানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি শ্যামল মাওলা কথা বলেছেন চিত্রালীর সাথে। চলুন পড়ে নেয়া যাক কি কথা হয়েছে তাহার সাথে, তার সাথে।

সাক্ষাৎকারঃ রাইসুল ইসলাম       

চিত্রালী: আপনাকে ওটিটির সুপারস্টার বলা হয়, কেমন লাগে শুনতে?

শ্যামল মাওলা: আমি বিষয়টাকে ভালোবাসা হিসেবে দেখি। মানুষ আমাকে যে নামেই ডাকুক এমনকি সুপারস্টার না বলে যদি একজন সাধারণ অভিনেতাও বলে সেটাও আমার কাছে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশই মনে হয়।

চিত্রালী: আপনার বেড়ে ওঠা, শৈশব, কৈশোর কেটেছে দেশের আলোচিত জায়গা শাহবাগে। আপনার শৈশবে শাহবাগ, আজিজ মার্কেট, বকুলতলা কিংবা ছবির হাট কেমন ছিলো? সে সম্পর্কে জানতে চাই।

শ্যামল মাওলা: একটা ইন্টারেস্টিং বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই। বিষয়টা আর আর কেউ জানে কিনা আমি জানিনা। আমি পিজির (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কোয়ার্টারে বড় হয়েছি। পিজি হসপিটালের ভেতরে কিছু কিছু ফুলের বাগান ছিল। সেগুলো আমাদের জন্য বিশাল বড় মাঠ তখন। আমরা খেলাধুলা করতাম সেখানে। সবাই জানতো ওটা ফুলের বাগান কিন্তু ওটা কেবলই ফুলের বাগান ছিলো না। পিজির ছাদে উঠে নিচের দিকে তাকালে দেখা যেত, ফুলের বাগান দিয়ে লেখা ছিল আইপিজিএমআর (দ্য ইন্সটিটিউট অব পোস্টগ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ)।

চিত্রালী: আপনার শৈশবের শাহবাগ কি এখনকার মতো এতো উত্তাল ছিল? সেই সময়ের শাহবাগের সাথে এখনকার শাহবাগের পার্থক্য কেমন? 

শ্যামল মাওলা:  শাহবাগ সবসময় উত্তাল ছিল। সেটা উৎসবে হোক, সংগ্রামে হোক বা আন্দোলন কিংবা সাদামাটা যেকোন দিন। শাহবাগে কিছু না কিছু হতোই সবসময়। কেউ বসে আড্ডা মারছে, কেউ কেউ গান করছে, কেউ ফুটবল খেলছে, কেউ ব্যাডমিন্টন খেলছে, কেউ ক্রিকেট খেলছে, কেউ থিয়েটার করছে, পথনাটক করছে, কেউ কনসার্ট করছে, কেউ কেউ মারামারি করছে। আমি ছোটবেলায় থেকে এসবই দেখছি। আর এভাবেই বেড়ে ওঠা।

চিত্রালী: সময়টা ২০০৬। ‘রোদ বৃষ্টির শহর’ নাটক দিয়ে আপনার প্রথম টিভি নাটকে আগমন। নাটকটি করার সময় এবং প্রকাশিত হবার পরে কেমন অনুভূতি হচ্ছিলো?  

শ্যামল মাওলা: আমার স্ক্রিনে অভিনয় করার টার্গেট কখনোই ছিল না। অফিস শেষে থিয়েটার, থিয়েটার শেষে বাসা আবার পরের দিন অফিস, অফিস শেষে আবার থিয়েটার। এরকম লাইফই আমি চেয়েছি। কারণ থিয়েটার টা আমি ছোটবেলা থেকেই করেছি। আমার সাথেই থিয়েটার। আমার পড়াশোনা যেরকম আমার সাথে ছিল, খেলাধুলা যেমনটা আমার সাথে ছিল, থিয়েটারটাও আমার সাথেই ছিল। কিন্তু ২০০৬ সালে সুমন আনোয়ার ভাই আমাকে জাস্ট ট্রাই করে দেখতে বললো যে স্ক্রিনে কেমন হয়। তারপরেও আমি কন্টিনিউ করিনি। আমি মূলত দশ থেকে স্ক্রীনে নিয়মিত কাজ করা শুরু করি। 

চিত্রালী:  আপনার প্রথম চলচ্চিত্র গেরিলা। যেটি করেছেন ২০১১ সালে। তারপর প্রায় দশ-এগারো বছরের মতো গ্যাপ নিয়ে পরবর্তী সিনেমা করলেন। এই যে লম্বা একটা বিরতি, এটা কেন নিলেন?

শ্যামল মাওলা: আমি মনে করি এটা একটা প্রফেশনাল জায়গা। মানে একটা বাজার। এখানে কেনা বেচা হয়। প্রোডাক্ট ও বিজনেস। যার যেরকম যোগ্যতা সেই অনুযায়ী কেনা বেচা হয়। আমি যদি নিজেকে তৈরি করে বাজারে যাই তাহলে আমার দাম বেশি হবে এটা আমি বিশ্বাস করি। সেই জায়গা থেকে অলওয়েজ আমি নিজে আগে রেডি হতাম। ওখানে গিয়েই শিখবো। ঠেকে ঠেকে শিখবো এরকমটা আমি চাইনি কখনো। আমি নিজে রেডি হয়ে সবসময় সবকিছু করতে চেয়েছি যাতে করে সব থেকে বেস্ট ইনপুট টা দেওয়া যায়। সেই জায়গা থেকে আসলে এই গ্যাপ নেয়াটা।

চিত্রালী: আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর শোবিজ জগতের বেশকিছু লোকজনকে আমরা দেখলাম নানাভাবে হেনস্থার শিকার হয়েছেন। অনেকেই বলেছেন যে আসলে তারকাদের কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে হলে মিডিয়া ছেড়ে করা উচিত তা না হলে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত না। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?  

শ্যামল মাওলা: প্রথমত, এসকল ঘটনায় খুব নরমালি বোঝা যাচ্ছে যে এগুলো একধরনের হ্যারাসমেন্ট। এটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার যে কোন টপিক চেইঞ্জের জন্য কোন কিছুকে যদি টার্গেট করা দরকার হয়, সেটা মিডিয়া এর ওপর যদি করা যায় তাহলে সেটা ভালোভাবে কাজে দেয়। সেই জায়গা থেকে এইটা তো একদমই নরমাল। বাচ্চারাও বুঝবে যে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে।

তবে আমি জানিনা আপনারা কিভাবে দেখছেন। এই যে করোনার সময়ে ডাক্তাররা জীবনবাজি রেখে চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। তাদেরকে আপনারা অগ্রজ যোদ্ধা বলছেন। কারণ তারা সেটা ডিজার্ভ করে সেটা আমিও মানি। তবে আমরা শুধু অসুস্থ হলেই তার চিকিৎসার প্রয়োজন মনে করি। কিন্তু অসুস্থ না হলে তার চিকিৎসার প্রয়োজন মনে করি না। কিন্তু যে শারীরিকভাবে অসুস্থ না তারও কিন্তু চিকিৎসার প্রয়োজন। মেন্টালি চিকিৎসার যে প্রয়োজন আছে এটা নিয়ে আমরা ভাবিই না। ঠিক সেই জায়গাটায় আমরা যে সার্ভিসটা দিচ্ছি, নিজেদের জীবন বাজী রেখে শুটিং করে মানুষদের ঘরের মধ্যকার কঠিন সময়টা সুন্দরভাবে পার করতে সাহায্য করেছি। আমরাও তো যুদ্ধ করেছি এই কথা কিন্তু কারো মাথায় আসেই নি।

বিনোদন নেয়ার সময় নিবে আর কিছু বলতে হলে সবার আগে আঙুলটা তুলবে আমাদের দিকে। আমি বলছি যে আমরা যে আসলে যে সার্ভিসটা দিচ্ছি, যেই সেবাটা দিচ্ছি, আপনার মানসিকতা তৈরির যে বিষয়টা আমরা খেয়াল রেখে ঐ ধরনের কাজ করে যাচ্ছি। আপনার মীনা কার্টুন দিয়ে আপনাকে হাত ধোয়া শেখাচ্ছি। এই জিনিসগুলো তো আপনারা কখনো সিরিয়াসলি ভাবেননি যে তাদেরও সাপোর্ট দরকার। যাদের জন্য আমরা কাজ করি তারা যদি আমাদের পাশে না থাকে তখন আসলে খুব মন খারাপ লাগে। সবাই থাকছে না তা না, অনেকেই থাকছে। কিন্তু আমি বলছি পরিমাণটা যদি আরো বেশি হয় তাহলে আমাদের জন্য অনেক বেশি সুবিধা হয়। আমাদের দিকে এরকম আঙ্গুল না তুলে সবাই যদি নিজের দিকে আঙ্গুলটা একবার তুলতো তাহলেই কিন্তু একজন আরেকজনকে দোষ দেওয়ার বিষয়টা থামতো। আমি আপনাকে দোষ দিচ্ছি। আপনি এটা করেছেন। তার আগে যদি আঙ্গুলটা আমি আমার দিকে একবার তুলি যে আমি কি কি করেছি। আমি কিন্তু একটা কোশ্চেন আপনাকে করার যোগ্যতা তখন রাখব না। তখন এত কথা হয়, এত কিছু বলে ও খারাপ এ খারাপ। তুমি শুধু একবার নিজের দিকে আঙ্গুলটা তুলে দেখো। তোমার সেই যোগ্যতা হয় কি না। তুমি নিজেই ভাবো যে আমি এই কোয়েশ্চেন টা করার যোগ্যতা রাখি কিনা !

চিত্রালী: চমৎকার বলেছেন। ফ্যাঁকড়া নিয়ে অনেক ফ্যাঁকড়া হয়েছে আপনাদের। অলরেডি এটা স্ট্রিমিং হচ্ছে। সেই গল্পটা যদি একটু বলতে হবে।

শ্যামল মাওলা: আমরা যখন শ্যুট করি তখন দেশের পরিস্থিতি আসলে খুব বাজে ছিলো। তখন সরকার চেঞ্জ  হওয়ার হয়, আমরা যখন শুটিং করি তখন মারামারি হয়। আমরা যখন শুটিং করি তখন নেটওয়ার্ক চলে যায়। আমরা যখন শুটিং করি তখন ডাকাত পাহাড়া দিচ্ছে তখন। আমরা যখন শুটিং করি তখন বন্যা চারিদিকে শুরু হয়ে গেছে। শুটিং করার জন্য আমরা যেসব স্পট, তেলের পাম্প, যে দোকানগুলো ঠিক করে রেখেছিলাম সব পুড়ে ছাই। আমরা যখন শুটিং করি তখন আমাদের একটা দলকে আটকে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দল। কারণ ঐ সময় পরিস্থিতি বোঝা যাচ্ছে না। আমরা যখন শুটিং করি তখন গ্রামবাসী অ্যাটাক করে যে এরা কি ডাকাত কি না।

চিত্রালী: কাজটা হয়েছে অবশেষে এবং স্ট্রিমিং হচ্ছে বঙ্গতে। এবার একটু প্রাপ্তির খাতাটা খুলতে চাই। প্রায় দুই যুগের অধিক সময় আপনি কাজ করছেন। অসাধারণ সব কন্টেন্ট আমরা দেখেছি। অসাধারণ নাটক, আর আপনার অভিনয়। এতদিন পর অবশেষে সম্প্রতি বাইফা পুরস্কার পেলেন। এই যে একটা এতো বছর পর পুরস্কার পেলেন। আপনার কি মনে হয় যে আপনার সঠিক মূল্যায়নটা হয়নি?

শ্যামল মাওলা:  মিডিয়াতে আমি দুই যুগ বলব না। এক যুগ বলতে পারি। দুই যুগ যদি থিয়েটার সহ বলি তাহলে হয়তো বলা যায়। এক যুগ ধরে স্ক্রিনে কাজ করছি। আমার কাছে প্রাপ্তির মূল জায়গাটা আসলে মানুষের ভালোবাসা । যখনি দেখলেন এখনও পর্যন্ত কোন স্বীকৃতি পাওয়া হয়নি। তখনই আপনার ভেবে নিতে হবে যে আপনি ওই মার্কেটে এখনও সেরকম পারফরম্যান্স হয়তো দেননি।

চিত্রালী: আসলেই কি বিষয়টা এরকম? আমরা এমনও শুনেছি যে প্রাইজ বিক্রি হচ্ছে, পুরস্কার বিক্রি হচ্ছে কিংবা আগে থেকেই মোটামুটি নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে যে আসলে কে পাবে, কে পাবে না। সেজন্যই কি এমনটা ঘটেছে?

শ্যামল মাওলা: আমি যদি দোকানটা চিনতাম আমি কিনে ফেলতাম। সত্যি। যদি এরকম কিনতে পাওয়া যায়। আমি কিনতে চাই। আসলে আমার এই নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু পুরস্কার পেলে আমারও ভাল লাগবে। কারণ আমিও মানুষ। আমারও যদি এরকম স্বীকৃতি আসে কোন কাজে অবশ্যই আমার ভালো লাগবে।

চিত্রালী: এই কুরবানির ঈদে আপনার কী আসছে আপনার?

শ্যামল মাওলা:  আমার সিনেমা দেখতে পাবেন এই ঈদে “নাদান”

চিত্রালী: নাদান সিনেমা নিয়ে দর্শকদের কিছু বলার আছে কি?

শ্যামল মাওলা:  হ্যাঁ। এই ঈদে আমার সিনেমা আসছে ‘নাদান’। নাদান শুট করেছি আমরা এক ঝাঁক তরুণরা মিলে এবং আপনাদের ইমোশন সবকিছু মাথায় রেখেই আসলে এই গল্পটা দাঁড় করিয়েছি এবং পরিশ্রম করেছি। আপনারা যদি দেখে ভালো লাগে, আপনারা যদি ভালোবাসা ব্যাক করেন তাহলেই আসল সার্থকতা। আপনাদের জন্যেই এতো কষ্ট করে বানিয়েছি। আপনারা সবাই দেখবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন।

চিত্রালী: ছোট স্ক্রিনের জন্য কি থাকছে?

শ্যামল মাওলা: হ্যাঁ। ইমরাউল রাফাতের একটা কাজ করেছি। রওনক রিপন এর একটা কাজ করেছি। এরকম আরো কাজ আছে। ঈদের পরে একটা আসবে, আরেকটা ওটিটির কাজ নাম ‘কানাগলি’। সেটার ডিটেইল আরো যখন সময় হবে তখন আরো ডিটেইলে দেয়া যাবে।

চিত্রালী: চিত্রালীকে সময় দেয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ।

শ্যামল মাওলা:  চিত্রালীকেও ধন্যবাদ।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

টিভি শোতে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী গুলতেকিন ও ছেলে নুহাশ  

কবিতা, অনুবাদ, উপন্যাস ও চিত্রনাট্য রচনার জন্য সুপরিচিত গুলতেকিন খান। ২০১৬ সালে কাব্যগ্রন্থ ‘আজো, কেউ হাঁটে…
Exit mobile version