Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
রবিবার, জুন ৩০, ২০২৪
Your Image

শৈশবের জানা-অজানা হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ । ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীর মত ‘কেজো’ এক জায়গায় নন-ফিকশনের সাথে ফিকশনের যুদ্ধ চিরকাল থেকেই। প্রয়োজনটাই যেখানে মুখ্য সেখানে গল্প-উপন্যাসের কাল্পনিক দুনিয়ায় বিচরণের ব্যাপারটি যেন হেরেই যাচ্ছিলো বারবার। এমনই এক যুগে যে মানুষটি জিতিয়ে দিয়েছেন ফিকশনকে, বাংলার তরুণ প্রজন্মকে বিভোর করে রেখেছেন বইয়ের পাতার সাথে, এমনকি বিচরণ করিয়েছেন কাল্পনিক দুনিয়ায়- সেই মানুষটির আজ জন্মদিন।

কথা হচ্ছে কালজয়ী কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। ইংরেজি পঞ্জিকার পাতায় সালটি যখন ১৯৪৮, আর দিনটি ১৩ নভেম্বর, নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে তখন জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই কিংবদন্তি। এই হিসেবে আজ এই শব্দের জাদুকরের ৭৫তম জন্মদিন। ২০১২ সালে তার কলম থেমে গেলেও তার ম্যাজিকে এখন অবধি মন্ত্রমুগ্ধ গোটা বাঙালি জাতি।

বইয়ের পাতা থেকে শুরু করে টেলিভিশন ও রুপালি পর্দা, একটা সময় বাংলাদেশের বিনোদন মানেই ছিল এই জাদুকরের ছোঁয়া। তার হাত ধরেই আবারও উত্থান হয়েছিল ফিকশনের। সাধারণ মানুষের যে কাজগুলো নিয়ে ছিল ‘করবো করবো ভাবনা’, কিন্তু কখনো করা হয়ে ওঠেনি, হুমায়ূন তার সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মাধ্যমে সেই কাজগুলোই করে দেখিয়েছেন। এজন্যই হয়তোবা মানুষের সাথে তার কানেকশনটাও হয়েছে খুব দ্রুত।

হুমায়ূন আহমেদ । ছবি: সংগৃহীত

কালজয়ী সব গল্প-উপন্যাস ও সিনেমা-নাটকের স্রষ্টা হুমায়ূনের ফিকশন নিয়ে যেমন ভক্তদের কৌতূহল, তারা ভালবাসে বলেই এই সাহিত্যিকের ব্যক্তিজীবন কিংবা শৈশব নিয়েও তাদের সমান কৌতূহল। এজন্যই হুমায়ূনের জন্মদিন উপলক্ষে চিত্রালীর আজকের আয়োজনে রয়েছে তার শৈশব জীবনের চর্চার আড়ালে রয়ে যাওয়া কয়েকটি অজানা গল্প।

পাকিস্তান জন্মের পরের বছর জন্মেছিলেন হুমায়ূন। তার জন্মের সময় চলছিল শীতকাল। শীতের এক রাতে ফয়জুর রহমান আহমেদ ও আয়েশা ফয়েজের কোলজুড়ে এসেছিলেন তাদের প্রথম সন্তান- হুমায়ূন। বাবা-মায়ের বড় সন্তান হওয়ায় তিনি ছিলেন সকলের মধ্যমণি। কিন্তু জানেন কি? ছেলে হওয়া সত্ত্বেও ছোটবেলায় তাকে পড়তে হয়েছে মেয়েদের ফ্রক!

হুমায়ূনের ফ্রক পড়ার কাহিনীটিও তার সাহিত্যের মতই কৌতূহলোদ্দীপক। তার পিতা ফয়জুরের ধারণা ছিল, তাদের ঘরে প্রথম সন্তান হবে মেয়ে। তাই অনাগত কন্যা সন্তানটির জন্য তিনি বানিয়ে রেখেছিলেন একগাদা ফ্রক। সাথে আরও বানিয়েছিলেন রূপার মল। বাবার শখ ছিল রূপার মল পায়ে দিয়ে মেয়েকে হাঁটতে দেখবেন ঝুম ঝুম শব্দ করে। পরে পুত্রসন্তান জন্ম নেওয়ায় এমন পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও হাল ছাড়েননি ফয়জুর। পুত্র হুমায়ূনকেই সাজিয়ে রাখতেন মেয়েদের সাজে।

ফ্রক পড়ানোর পাশাপাশি তার মাথার চুলও নাকি রাখা হতো লম্বা। লম্বা চুলে নানান রঙের ফিতা পরিয়ে বেণি করে দিতেন তার মা। হুমায়ূনের শৈশবের শুরুটা কাটে এভাবেই।

এরপর ‘হিমু’ চরিত্রের জন্মদাতাকে সবাই হুমায়ূন আহমেদ নামে চিনলেও, শৈশবে এটি নাকি তার নাম ছিল না। এই গল্পের জাদুকরের রচিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে জানা গেছে, ছোটকালে তার নাম ছিল শামসুর রহমান।

১৯৫০-৫৫ সালের দিকের কথা। পিতা ফয়জুর তার নামের সাথে মিল রেখে নিজের বড় পুত্রের নাম রাখেন শামসুর রহমান। আর ডাকনাম- কাজল। কিন্তু হুমায়ূনের ভাষ্যমতে, তার বাবা তথা সেই সময়কার সিলেট থানার ওসি ফয়জুর সাহেব নাকি পছন্দ করতেন তার ছেলে-মেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে। তাই ১৯৬২-৬৪ সালে যখন বাবার চাকরি সূত্রে হুমায়ূনরা থাকতেন চট্টগ্রামে, তখন আবার তার নাম ছিল বাচ্চু। পরবর্তীতে ফয়জুর নিজেই ছেলের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‌হুমায়ূন আহমেদ। আর এই নামেই তিনি আজ পর্যন্ত বিচরণ করছেন মানুষের হৃদয়ে।

ছেলেবেলার হুমায়ূন আহমেদ, তখন পড়তেন ক্লাস টুতে । ছবি: প্রথম আলো

আদর-স্নেহের মধ্য দিয়ে হুমায়ূনের জীবনের শুরুটা হলেও শৈশবেই তাকে কঠিন এক সময় পার করতে হয়েছিল যখন তার মা ছিল অসুস্থ। লেখকের শৈশবে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন তার মা। জ্বর ভালো হলেও স্মৃতিবিভ্রম হন আয়েশা। যার ফলে তিনি চিনতেন না কাউকেই। এমনকি নিজের সন্তান হুমায়ূনকেও চিনতে পারতেন না তিনি। তাই এই সাহিত্যিককে দুই বছর কাটাতে হয় তার নানা বাড়ি মোহনগঞ্জে। হুমায়ূনের মায়ের সুস্থ হতে লেগেছিল দুই বছর।

তারপর জানেন কি, পাঠক ও দর্শকদের হৃদয়ে নাড়া দেওয়ার মত গল্প লেখা এই সাহিত্যিকের প্রথম পঠিত সাহিত্য ছিল কোনটি? হুমায়ূনের পড়া প্রথম সাহিত্য ছিল- ‘ক্ষীরের পুতুল’। তার বাবার ছিল বিশাল লাইব্রেরি। এত বড় লাইব্রেরি থাকার পরও সেটি থাকতো তালাবদ্ধ। ধারণা করা হয়, সন্তানদের এসব বই পড়ার বয়স হয়েছে কিনা ভেবেই ফয়জুর তালাবদ্ধ করে রাখতেন সেই লাইব্রেরি। কিন্তু তালা লাগিয়েও থামিয়ে রাখা যায়নি হুমায়ূনকে। ইতিহাস গড়ার শুরুটা সেখান থেকেই। একদিন বাবার বইয়ের আলমিরা থেকে তিনি চুরি করেন ‘ক্ষীরের পুতুল’। এরপর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়তেন তিনি। যদিও একদিন বাবার হাতে ধরাও পড়তে হয় তাকে।

ধরা পড়ায় ভালই হয় হুমায়ূনের জন্য। কারণ তার বাবা এরপর তাকে নিয়ে যান সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদে৷ এই লাইব্রেরির মেম্বার হয়ে বদলে যায় তার জীবন। বলা বাহুল্য, হুমায়ূন ছিলেন লাইব্রেরিটির সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য।

পারিবারিক বলয় থেকে সাহিত্যের ভিত গড়ে হুমায়ূন আহমেদ পরিণত হন বাংলাদেশের বেশির ভাগ পরিবারের সাহিত্যের ভিত গড়ার কারিগর। জন্মদিন নিয়ে নাকি আড়ম্বরতা পছন্দ ছিল না বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই কিংবদন্তির। কিন্তু তার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে নভেম্বরের ১৩ তারিখ আসলেই তার ভক্ত-অনুরাগিরা ঘটা করে এই দিনটিকে স্মরণ করে রাখার চেষ্টা করেন। তারা দিনভর বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে পালন করেন এই দিনটিকে। হুমায়ূনের কোটি কোটি ভক্তের মত চিত্রালীও আজ কামনা করছে যেন যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক সবার প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ।

— লেখা: রাহনামা হক

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next
0
Share