— রাহনামা হক —
‘আজ রবিবার’ নাটকের পড়ুয়া যুবক ‘আনিস’ কিংবা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ সিনেমার বেকার যুবক ‘খোরশেদ আলম’, পর্দায় তাদের দেখা মিললেই পর্দার উপর থেকে দর্শকদের চোখ সরানো হয়ে যায় মুশকিল। আর এই চরিত্র দুটোকে পর্দায় রুপ দেওয়া অভিনেতা যিনি, বাংলাদেশে এমন দর্শক খুব কম পাওয়া যাবে যাদের অভিনয়ের জাদু দেখিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ করেননি তিনি।
ছোট পর্দা হোক কিংবা বড় পর্দা, সব প্ল্যাটফর্মেই নিজের ছাপ ফেলে সবার মন জয় করেছেন এই অভিনেতা। বিশেষ করে যারা ‘নাইন্টিজ কিড’, তারা বেড়েই উঠেছেন এই শিল্পীকে পর্দায় দেখে দেখে। একবার হাসিয়ে, একবার কাঁদিয়ে- পর্দায় মগ্ন রেখেছেন তিনি সবাইকে।
কথা হচ্ছে জাহিদ হাসানকে নিয়ে। কারণ আজ লোকপ্রিয় এই অভিনেতার জন্মদিন। প্রিয় তারকার জন্মদিনে আজ চিত্রালী তার পাঠকদের জানাবেন জাহিদের অভিনয় জগতে পদার্পণের গল্প।
তার জন্ম সিরাজগঞ্জে নানার বাড়িতে ১৯৬৭ সালের ৪ অক্টোবর।
ছেলেবেলার বন্ধুদের কাছে এখনো মা হামিদা বেগমের রাখা ডাক নাম ‘পুলক’ হিসেবেই পরিচিত এই গুণী তারকা। আর সবাই তাকে যে নামে চিনেন- ‘জাহিদ’ নামটি তার দাদার রাখা।
জাহিদ যখন ছোট ছিলেন, সিরাজগঞ্জে কাটে তার ছেলেবেলা। সেই সময় প্রচুর নাটক দেখেছেন তিনি। আরও উপভোগ করেছেন যাত্রাপালা সহ নানান মঞ্চ নাটক। যাত্রাপালার থেকে তার মঞ্চ নাটকই দেখা হয়েছে বেশি। কিন্তু একবার যখন ঢাকা থেকে ‘নবাব সিরাজদৌলা’-র দল সিরাজগঞ্জে গেলো যাত্রাপালা করতে, আনোয়ার হোসেনের মত বড় বড় শিল্পীদের দেখার জন্য বাধভাঙ্গা উচ্ছাস ছিল তার। বাবা ইলিয়াস উদ্দিন তালুকদারের কাছে আবদার করেন যাত্রা দেখার। বাবাও তাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। বিশ টাকা টিকেটের মূল্য হাতে দিয়ে অনুমতি দেন যাওয়ার জন্য।
তারপর মঞ্চের খুব কাছে বসে জাহিদ উপভোগ করেন ‘নবাব সিরাজদৌলা’ যাত্রা। সেই যাত্রার সাথে সাথেই বলা যায় তার অভিনয়ের যাত্রা শুরু হওয়ার বীজ বপিত হয়। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি যখন পড়েন কলেজে, অভিনয়ের নেশায় জাহিদ তখন যোগ দেন তরুণ সম্প্রদায় নাট্যদলে। এই দলের হয়ে এরপর কয়েকটি নাটকে নিজের অভিনয়ের প্রতিভা দেখান তিনি। অভিনয়ের মূল যাত্রা শুরু হয় এখান থেকেই।
তরুণ নাট্যদলের হয়ে অভিনীত তার নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল হলো ‘সাত পুরুষের ঋণ’। যা বাংলাদেশ টেলিভিশনে ১৯৮৪ সালের ১০ আগস্ট প্রচারিত হয়। নিজের অভিনীত নাটক পর্দায় প্রচারিত হওয়ার অনুভূতি ছিল অন্যরকম। তাই আজও এই দিনটির কথা মনে রেখেছেন জাহিদ।
কলেজ পেরিয়ে এই অভিনেতা চান্স পান ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে ভর্তি হয়ে কিছুদিন ক্লাস করেও অভিনয়ের টানে তিনি পাড়ি জমান ঢাকায়। রাজধানীতে এসে পড়ালেখা করেন তিনি। আর সাথে স্বপ্ন দেখেন অভিনেতা হওয়ার।
জাহিদের স্বপ্ন বাস্তবে রুপ পায় ১৯৮৬ সালে। কারণ এই বছর আবদুল লতিফ বাচ্চুর পরিচালনায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যৌথ প্রযোজনার ‘বলবান’ ছায়াছবিতে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। এর মাধ্যমেই তার বড় পর্দায় অভিষেক হয়। আর তার ছোট পর্দায় অভিষেক হওয়ার সালটা হলো ১৯৯০। তার অভিনীত প্রথম টেলিভিশন নাটক ছিল ‘জীবন যেমন’। প্রথম নাটকেই তিনি পান গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র।
জাহিদের অভিনয়ের যাত্রা শুরু হতে ১৯৮৯ সালের কথাটাও না বললেই না। কারণ বাংলাদেশ টেলিভিশনে অভিনয়ের জন্য তালিকাভুক্ত হতে এই বছরই অডিশন দিয়ে পাশ করেন তিনি। যদিও পাশ করার সাথে সাথেই নাটকে অভিনয় করতে পারেননি অভিনেতা। কারণ ঐ সময় যাত্রাপথ এখনকার মত সুগম ছিল না।
পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে তার জীবনে আসে টার্নিং পয়েন্ট। এরপরের পথ দর্শকদের চোখের সামনেই। টেলিভিশনে অভিষেকের পর তাকে আর থেমে থাকতে হয়নি। একের পর এক অভিনয়ের ম্যাজিক দেখিয়ে গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে তিনি হয়ে উঠেছেন আজকের জাহিদ হাসান!