শুক্রবার, ১ নভেম্বর দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ নিজেদের মাঝে সমন্বয় ঘটানোর প্রয়াসে আড্ডার আয়োজন করেন তেজগাঁওয়ের গ্রাউন্ড জিরোতে। সভার শুরুতে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। এতে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের নানান পেশাজীবিরা অংশ নেন।
এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য রফিকুল আনোয়ার রাসেল, জাতীয় চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য আকরাম খান, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্য ইয়াছির আল হক এবং চলচ্চিত্র বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্য তানিম নূর। দৃশ্যমাধ্যমের সদস্যগণ ঘরোয়া আলাপে কমিটির সদস্যদের জাতীয় কমিটির দ্বায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা জানতে চান এবং তার আলোকে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রাণবন্ত এই আড্ডা ও আলাপে সমসাময়িক নানান বিষয় ছাড়াও উঠে আসে রাষ্ট্র গঠনে বা সংস্কারের মূল আলাপে বা ক্ষমতা কাঠামোয় শিল্পীসমাজের অনুপস্থিতির বিষয়টি। এই বিষয়টিকে অপূর্ণতা বিবেচনা করে উপস্থিত শিল্পীরা নানা পেশার অংশীজনের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে এবং সমাজের বহুত্ববাদী চিন্তার মানুষের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে নানামুখী প্রস্তাব করেন। তরুণ নির্মাতা, সিনেমাটোগ্রাফার, শিল্প ইতিহাসবিদ, প্রযোজক, নির্মাতা, শিল্প নির্দেশক, আর্কাইভিষ্ট, সঙ্গীত শিল্পী, লেখক ও শিল্পীদের সকলের সাথে মতবিনিময় শেষে ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অনুপ্রেরণাকে সামনে রেখে প্রারম্ভিকভাবে কয়েকটি প্রস্তাবনা উঠে আসে।
প্রথমত, ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অনুপ্রেরণায় সৃষ্ট বিদ্যমান নানান গ্রুপ ও শিল্প-সংস্কৃতির অংশীজনের সাথে বাহাস ও আলাপের আয়োজন করা হবে। এসব সেমিনারে বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে জাতীয় সংস্কৃতির পর্যালোচনা, দিক নির্দেশনা ও রূপরেখা নিয়ে সরকারের পলিসি লেভেলেও ডায়ালগের ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নেয়া হবে। তাছাড়া ইতিমধ্যে যারা নানান কমিটিতে বিভিন্ন দ্বায়িত্ব পেয়েছেন তাদের সাথেও ডায়ালগের উদ্যোগ নেয়া হবে যাতে সরকারি নীতিনির্ধারনী মহলে আমাদের গণদাবীগুলো যথাযথভাবে তুলে ধরা ও বাস্তবায়ন করা যায়।
এরপর উপস্থিত শিল্পীরা সিদ্ধান্ত নেন, দৃশ্যমাধ্যমের তরুণ নির্মাতা, স্ক্রিপ্ট রাইটার, গবেষক, চিন্তক, ফটোগ্রাফার, মিউজিশিয়ান, পেইন্টার তথা সকল এর কাছ থেকে “ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের” উপর আইডিয়া বা স্ক্রিপ্ট আহবান করা হবে। নির্বাচন ও আলোচনা সাপেক্ষে এসব তথ্যচিত্র নির্মাণে কারিগরী, আর্থিক, গবেষণা ও যোগাযোগের সাপোর্ট দেয়া এই বিষয়ে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অংশ একটি নির্দেশনা প্রদান করবে।
তৃতীয়ত, দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের নানামুখী আয়োজনে তরুণদের চিন্তা ও দর্শনের প্রতিফলন ঘটাতে তাদের সম্পৃক্ততার প্রাধান্য দিয়ে মূল আয়োজক দলে অন্তর্ভূক্ত করা হবে।
সর্বশেষে পেশাগত বৈষম্য দূর করতে নানান অংশীজনের সমন্বয়ে নিয়মিত বিরতিতে যুক্তিতর্ক ও আলাপের আয়োজন করবে দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ যাতে বিদ্যমান বৈষম্য, শ্রম ও অর্থনৈতিক বিভাজন বিলোপ, যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালার বাস্তবায়ন করে একটা মানবিক, জনকল্যানকর ও শিল্পিত ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠে।
সভায় সর্বসম্মতিক্রমে উপরোক্ত বিষয়াবলীতে একমত পোষণ করেন। দৃশ্যমাধ্যম শিল্পী সমাজ আয়োজিত এই ‘আড্ডা ও আলাপে’ উপস্থিত ছিলেন মোহন আহমেদ, কবির আহমেদ, উসওয়াতুন উসনাশ শ্বেরা, আনান এইচ সিদ্দিকা, কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, পিপলু আর খান, সাকিব ফাহাদ, নাঈম উল হাসান, প্রোস্তার হোসেন, রাফি উদ্দিন, সাদিয়া সিরাজ সাবা, আকরাম খান, তানভীর চৌধুরী, ইয়াছির আল হক, ধ্রুব হাসান, রফিকুল আনোয়ার রাসেল, নোসিন হুমায়রা, মাহিন খন্দকার, মোহাম্মদ আল আমিন, শরিফুল আবীর, তানিম নূর, শ্যামা শ্যামাঙ্গিনী, এ এস অর্ণব ও আমিরুল রাজিব।