চলে যাওয়া বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে বরণ করে নিতে চাকমা জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে পালিত হয় বিজু উৎসব। বিজু মানে ফুল উৎসব। চাকমারা বিশ্বাস করেন, এই ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে পুরোনো বছরের গ্লানি মুছে গিয়ে নতুন বছর বয়ে আনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।
আজ ১২ মার্চ শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপী চলবে এই বিজু উৎসব। বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন চাকমারা বিজু পালন করেন। আজ ফুল বিজু, ১৩ এপ্রিল রোববার মূল বিজু, ১৪ এপ্রিল নু’অ বজর বা নতুন বছর, আর পয়লা বৈশাখের পর দিন পালিত হয় ‘গোজ্যেপোজ্যে দিন’ হিসেবে।
উৎসবের প্রথম দিনে পূজা-অর্চনা ও বাড়িঘর পরিষ্কার করে সাজানো হয়। দ্বিতীয় দিনে অতিথি আপ্যায়ন ও খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়। তৃতীয় দিনে হাঁস-মুরগি ও পশুপাখিদের খাবার দেওয়া, গরাইয়া নৃত্য ও বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেওয়া হয়।
বিজুর পাশাপাশি শুরু হয়েছে তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসব। নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন-হাদি ও পুরুষেরা ধুতি পরে উৎসবের প্রথম দিনে নদী, ছড়া, ঝরনাসহ বিভিন্ন স্থানে ফুল ভাসিয়ে সুন্দর পৃথিবীর জন্য মঙ্গল কামনা করেছেন নারী, পুরুষ আর শিশুরা।
এছাড়াও ১২ মার্চ সকালে রাজধানীর বেইলি রোডে অবস্থিত পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের সামনে থেকে বৈসুক, সাংগ্রাই, বিজু, চাংক্রান, বিষু, সাংলান ও সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রাটি রমনা পার্কে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে শেষ হয়।
শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা সভায় পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, ‘বিজু উৎসবকে আপনাদের মাঝে নিয়ে আসার জন্য এই আয়োজনটা করা। আমি জানি, আজকে আমরা এখানে যে ফুল ভাসিয়ে দিলাম, এটার একটাই উদ্দেশ্য যে আমাদের অনাগত দিনগুলো যেন ভালোভাবেই আসে এবং আমাদের সবার মধ্যে একটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পারি।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল খালেক বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, খুমিসহ আরও অন্য যারা বসবাস করছেন, তাঁদের জন্য আজ বিশেষ দিন। আজকের আয়োজনে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের উজ্জীবিত এবং উদ্বেলিত করেছে।’
বৌদ্ধধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ভবেশ চাকমা বলেন, ‘ফুল বিজু হচ্ছে আমাদের পুরোনো বছরের সবকিছু গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের পর্ব।’
ফুল বিজু উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা, ফুল ভাসানো, এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ঢাকায় অবস্থিত ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোর নেতা ও সদস্যরা অংশ নেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবার বিজু উৎসবের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এতে পার্বত্যবাসীর উৎসবমুখরতা বেড়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ১১টি পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বম, পাংখোয়া ও লুসাইরা খ্রিষ্টীয় নববর্ষ পালন করেন।