চিকিৎসকের মুখে প্রথমবার যখন শুনেছিলেন ‘ক্যানসার হয়েছে’ তখন থেকে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পথটা ছিল সম্পূর্ণ নিস্তব্ধ। সেই মুহূর্তের কথা ২০২৩ সালে নিজের আত্মজীবনী রবি পথ প্রকাশ অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছিলেন দেশের প্রখ্যাত অভিনেতা আবুল হায়াত। ২০২১ সালে তার শরীরে ধরা পড়ে ক্যানসার। তবে চিকিৎসা, পরিবার ও নিজের অটল মনোবল তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে নতুন জীবনে। আজও তিনি নিয়মিত কাজ করছেন, মাসের অর্ধেক সময় কাটাচ্ছেন শুটিং সেটে। তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে তার বয়স ৮১ বছর। আজ, ৭ সেপ্টেম্বর, এই বরেণ্য অভিনেতার জন্মদিন।
১৯৪৪ সালে ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদে জন্ম নেওয়া আবুল হায়াত পার করেছেন বৈচিত্র্যময় দীর্ঘ এক জীবন। যেখানে ছিলো অসুস্থতাও।
ছয় দিন কোমায় থাকা
অভিনেতার জীবনে অসুস্থতার ইতিহাস নতুন নয়। এর আগে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শুরুর সময় গুরুতর অসুস্থ হয়ে ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ মার্চ কোমায় ছিলেন তিনি। যখন পাকিস্তানি সেনারা গণহত্যা চালাচ্ছিল, তখন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। টানা ছয় দিন কোমায় থাকার পর ২৯ মার্চ জ্ঞান ফিরে পান। সেই দিনেই প্রথম জানতে পারেন বাবা হয়েছেন তিনি। ফুফু শাশুড়ির হাতে কোলে আসে তার প্রথম কন্যা বিপাশা হায়াত।
জীবনের প্রতিটি কঠিন মুহূর্তে মানসিক শক্তি দিয়েছেন তার স্ত্রী শিরিন হায়াত। ক্যানসারের লড়াই নিয়েও আবুল হায়াত অকপটে স্বীকার করেছেন, “এই তিন বছর আমি বেঁচে আছি কেবল ওর কারণে। সে আমার পাশে না থাকলে হয়তো আমি লড়াই করতে পারতাম না।” তিনি পরিবারে কম সময় দিতে পারলেও তার স্ত্রী সংসার সামলেছেন, দুই মেয়েকে মানুষ করেছেন, আবার স্বামীকে দিয়েছেন মানসিক সমর্থন।
চলতি বছরের মে মাসে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, চার বোনের আদরে বড় হওয়া একমাত্র ভাই হিসেবে তার মানসিক দৃঢ়তা তেমন শক্ত ছিল না। বিয়ের পরেই তার স্ত্রী হয়ে ওঠেন তার প্রেরণার উৎস। সরকারি চাকরি ছাড়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন তার স্ত্রীর পরামর্শে।
আজ আশিতেও তিনি পরিপূর্ণ উদ্যমে কাজ করছেন। জীবন নিয়ে তার উপলব্ধি সরল এবং গভীর “জীবন মানে কাজ করা, কাজকেই ভালোবাসা।” আর তাই এখনো শুটিং সেটে দাঁড়িয়ে তিনি যেন জীবনের জয়গান গেয়ে চলেছেন।