সিনেমাপ্রেমীদের জন্য অস্কার মানেই আবেগ, উত্তেজনা আর বিতর্ক। ২০২৫ সালের অস্কারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যখন লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে সেরা অভিনেত্রীর নাম ঘোষণা করা হলো, তখন অনেকেই বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলেন। অস্কার ট্রফিটি উঠল মিকি ম্যাডিসনের হাতে, আর হলরুমজুড়ে ফিসফাস চলতে লাগল “ডেমি মুর কোথায়?”
এই রাতটি শুধুই বিজয়ের ছিল না এটি ছিল উপেক্ষার, বিস্ময়ের এবং সেই চিরচেনা বিতর্কের, যা যুগে যুগে অস্কারের অংশ হয়ে এসেছে।
ডেমি মুরের নাম হলিউডের অন্যতম বড় তারকাদের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। নব্বইয়ের দশকের এই আইকনিক অভিনেত্রী Ghost এবং G.I. Jane এর মতো সিনেমায় নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। কিন্তু The Substance ছিল এক অন্যরকম চ্যালেঞ্জ, এক অন্যরকম প্রত্যাবর্তন।
সিনেমাটিতে মুর অভিনয় করেছেন এক মধ্যবয়সী অভিনেত্রীর চরিত্রে, যিনি যৌবন ধরে রাখতে একটি বিশেষ সিরাম ব্যবহার করেন। তবে ধীরে ধীরে সেই ওষুধ তাকে এক অন্ধকার জগতে টেনে নিয়ে যায়। মুরের পারফরম্যান্স ছিল শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বংসী, তার চোখের চাহনি থেকে শুরু করে সংলাপের গভীরতায় ফুটে উঠেছিল চরিত্রের বেদনা। প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সমালোচকরা, অনেকেই বলেছেন এটি তার ক্যারিয়ারের সেরা অভিনয়।
অন্যদিকে, মিকি ম্যাডিসনের ক্যারিয়ার তুলনামূলকভাবে তরুণ, কিন্তু ‘Anora’ সিনেমায় তার অভিনয় এই রাতের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান বেকারের পরিচালনায় তিনি যৌনকর্মীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যে এক ধনী রাশিয়ান উত্তরাধিকারীর প্রেমে পড়ে এবং সেখান থেকেই মূলত রোলারকোস্টার একটি রাইড শুরু হয় সিনেমার। ম্যাডিসনের অভিনয়ে ছিল বুনো স্বাধীনতা, আবেগ আর বাস্তব জীবনের ছোঁয়া, যা অনেকের হৃদয়েই গেথে গিয়েছে।
তিনি এই চরিত্রের জন্য রাশিয়ান ভাষা শিখেছেন, নিজেই স্টান্ট করেছেন এবং চরিত্রটিকে একেবারে বাস্তবিক রূপ দিয়েছেন। তাই হয়তো অস্কারের মঞ্চে নতুন প্রজন্মের শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে তাকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
অনেকেই মনে করছেন, হলিউডের অস্কার এখন তরুণ প্রতিভাদের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে, প্রবীণ অভিনেত্রীদের যথাযথ সম্মান দিচ্ছে না। ডেমি মুরের মতো একজন অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান অভিনেত্রীর কাজকে উপেক্ষা করা তারই প্রমাণ।
অন্যদিকে, ম্যাডিসনের জয়কে অনেকেই নতুন প্রতিভার উদযাপন হিসেবে দেখছেন। তার অভিনয় নিঃসন্দেহে অসাধারণ ছিল, এবং এক নতুন যুগের চলচ্চিত্রভাষা গঠনের ইঙ্গিত দেয়।
অস্কার সবসময়ই বিতর্কের জায়গা ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। তবে ২০২৫ সালের এই রাতটি সিনেমাপ্রেমীদের মনে থাকবে ডেমি মুরের বঞ্চনার জন্য, মিকি ম্যাডিসনের অভাবনীয় জয়ের জন্য, এবং সেই চিরন্তন প্রশ্নের জন্য—একজন অভিনেতার প্রতিভা কি শুধু বয়সের কারণে উপেক্ষিত হতে পারে?
এই প্রশ্নের উত্তর হয়তো আগামী বছরগুলোতে অস্কারই দেবে।