কে জানে কার মনে রাজনীতির কি সংজ্ঞা আছে, তবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা ধাপের – মাপের ও খাপের মিশ্রণে বেশ রঙীনই হয়েছে এর চালচিত্র। তার পেছনে বিনোদন জগতের মানুষের প্রভাব আছে তো বটেই।
২০২৩ সাল ছিল নির্বাচনী উত্তাপের বছর। বছর গড়িয়ে নতুন দিন, নতুন আশা এবং নতুন করে নির্বাচনের ঢেউ। সেই ঢেউ প্রতি পাঁচ বছর পরপর আসে, খবরপাড়া গরম হয়, কিভাবে যেন গরম হয়ে যায় মিডিয়া পাড়াও। কারণ অনেক তারকাই একটা সময় জনসেবার মাধ্যম হিসেবে রাজনীতি বেছে নেন।
গানের জগতের মমতাজ, এসডি রুবেল, বেবী নাজনীন, আসিফ আকবর, শাফিন আহমেদ তো আছেনই। পিছিয়ে নেই সিনেমার মানুষরাও। ২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়ছেন ফেরদৌস, মাহিয়া মাহি, হিরো আলম।
তারা সংসদের আসন পাবে কিনা তা সময় বলে দেবে, কিন্তু তার আগে যারা মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তীতে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন- তাদের গল্পটা জানাতেই হয়..
◼ সোহেল রানা
পর্দার অ্যাকশন হিরো একটা সময় ছাত্ররাজনীতি করেছেন দাপটের সঙ্গে। তুখোড় ছাত্রনেতা হিসেবে সুনাম ছিলো তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের ভিপি ছিলেন সোহেল রানা। ছয় দফা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানে পালন করেছেন সক্রিয় ভূমিকা। অংশ নিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধেও। এক সময়ের ছাত্রনেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সোহেল রানা পরবর্তীকালে জাতীয় পার্টির হয়ে রাজনীতি করেন।
◼ ফারুক
চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। সে সময় তার নামে ৩৭টি মামলা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তিনি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মৃত্যুর আগ অবধি তিনি এই আসনের এমপি ছিলেন।
◼ কবরী
করোনার আঘাতে প্রাণ হারানো মিষ্টি মেয়ে কবরীর অবদানও ছিল মুক্তিযুদ্ধে। যুদ্ধের সময়ে কলকাতা গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এরপর রাজনীতিতে সক্রিয় হবার ইচ্ছা প্রকাশ করলে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের পক্ষে তিনি সাংসদ হিসেবে জনগণের সামনে আসেন। তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাকে সমাধিত করা হয়।
◼ আসাদুজ্জামান নূর
বাকের ভাই খ্যাত তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর রাজনীতির মাঠেও সমান জনপ্রিয়। ১৯৬৩ সালে ছাত্র ইউনিয়নে যোগদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে যোগদান করেন আসাদুজ্জামান নূর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালের মাঝামাঝি পর্যায়ে তিনি আবারও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করেন। একাধিকবার জয়লাভও করেছেন। ২০২৪ সালের নির্বাচনেও তিনি আছেন সমান দাপটে।
এসকল তারকা ছাড়াও তারানা হালিম, সূবর্ণা মুস্তাফা, রোকেয়া প্রাচীসহ অনেকেই সক্রিয় রাজনীতির সাথে সংযুক্ত। তাদের সকলেরই জনপ্রিয়তার পারদও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে উঠানামা করেছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে।
যদিও এসব আলাপের মাঝেই হালের নির্বাচনী হাওয়ায় পাল তোলা তারকাদের চিত্রনায়ক ওমর সানী বলেছেন, শিল্পীরা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়টিকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু তাই বলে নিজের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে নয়। আমি সব শিল্পীর কথা বলবো না; কিছু কিছু দলকানা শিল্পী রয়েছেন তারা রাজনীতির মঞ্চে যখন বক্তব্য দেয়ার সুযোগ পান তখন খেই হারিয়ে ফেলেন।
এসব আলোচনা ও সমালোচনার মাঝেই ২০২৪ সালে সংসদে কোন তারকা হবে উজ্জ্বল তা জানার জন্য চোখ রাখুন চিত্রালীতে।