‘ব্যাক বেঞ্চার’ শব্দটি বেশ পরিচিত শিক্ষাঙ্গনে। ক্লাসে যারা পড়াশোনায় পিছিয়ে, কম মনোযোগী এবং দুষ্টুমিতে ওস্তাদ, তাদেরকেই এই তকমা দেয়া হয়। তবে এ ধারণা যে পুরোনো, বৈষম্যমূলক এবং মনোবিকাশের পথে মারাত্মক বাধা তা সিনেমার মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছে মালয়ালম শিশুতোষ সিনেমা ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’। আর এ সিনেমার প্রভাব এখন বাস্তবেও দৃশ্যমান।
২০২৪ সালে মুক্তি পাওয়া পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথনের এই প্রথম চলচ্চিত্র শুধু বড়দের নয়, শিক্ষকদের মনেও দাগ কেটেছে। ছবিতে দেখানো হয় ‘সার্কুলার সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট’ বা চক্রাকার আসনবিন্যাস, যেখানে পেছনের বেঞ্চ, সামনের বেঞ্চ বলে কিছু নেই, সেটাই বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে ভারতের কেরালার একাধিক স্কুলে। এমনকি পাঞ্জাবের একটি স্কুলেও এমন পরিবর্তন ঘটেছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
ছবিটির প্রভাব এখন এতটাই ব্যাপক যে কেরালা রাজ্যের ত্রিশূর, পালাক্কাড়, কোল্লাম ও কন্নুরের স্কুলগুলোয় এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে এই নতুন আসনবিন্যাস। কেউ ‘ইউ’ বা ‘ভি’ আকৃতিতে বেঞ্চ সাজাচ্ছে, কেউ অর্ধবৃত্তাকারে। লক্ষ্য একটাই—সব ছাত্র যেন শিক্ষকের কাছ থেকে সমান মনোযোগ পায় ও সবাই যেন নিজেদের পিছিয়ে থাকা হিসেবে না ভাবে।
ত্রিশূরের আরসিসি এলপিএস ইস্ট মানগাতের শিক্ষক আলবার্ট ক্রিস্টিন জানান, তার ক্লাসে মাত্র ২০ জন ছাত্র। তাই চক্রাকার আসনবিন্যাস সহজেই বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
সিনেমার পরিচালক বিনেশ বিশ্বনাথনের অনুপ্রেরণা ছিল ২০১৪ সালের তামিল ছবি ‘কাক্কা মুট্টাই’, যা দেখিয়ে দিয়েছিল শিশুদের জন্য তৈরি ছবিতেও গভীর বার্তা থাকতে পারে। নিজের সিনেমার জন্য এই সামাজিক প্রভাব দেখে আপ্লুত এ নির্মাতা। ইন্ডিয়া টুডে–কে বিশ্বনাথন বলেন, ‘সিনেমা সমাজে বদল আনতে পারে, এই বিশ্বাস নিয়েই তো কাজ করি।’
যেখানে সাম্প্রতিক সময়ে সিনেমার নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে, সেখানে ‘স্থানার্থী শ্রীকুট্টন’ এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। শুধু বিনোদন নয়, এটা শিক্ষা ও সামাজিক সমতার দিকেও এক সাহসী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন সিনেমাবোদ্ধা ও দর্শকেরা।