ঢালিউডের রুপালি পর্দার একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। যার আসল নাম কাজী শারমিন নাহিদ নূপুর। বর্তমানে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। একেবারে বিচ্ছিন্ন অভিনয় জগত থেকে। গত ২৮ মার্চ চুপিসারে ঢাকায় এসেছিলেন শাবনূর। কেবলমাত্র ৮ ঘণ্টার জন্য।
কেন এসেছিলেন এই অল্প সময়ের জন্য? অভিনেত্রী জানালেন প্রতিবার দেশে ফেরার সময় মনে আনন্দ থাকলেও এবার আসার পুরোটা সময় তার কেটেছে অস্থিরতায়। শাবনূরের এই তাড়াহুড়া ও হঠাৎ বাংলাদেশে আসার কারণ তার মায়ের অসুস্থতা।
অসুস্থ মাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেই আট ঘণ্টার জন্য বাংলাদেশে এসেছিলেন এই অভিনেত্রী। তাই এবার বাংলাদেশে এসে কাউকে কিছু জানাতে পারেননি।
শাবনূর জানালেন, সিডনি সময় ২৮ মার্চ তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা করেন। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে চড়ে তিনি একাই ঢাকায় আসেন। পথে ছিল পাঁচ ঘণ্টার ট্রানজিট। এবারের যাত্রাপথের সময়টা যেন তার কোনোভাবেই শেষ হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল পথটা অনেক দীর্ঘ। ঢাকায় আসার এই কয়েক ঘণ্টার পথটা কীভাবে কেটেছে, তা কল্পনাও করতে পারেন না তিনি।
অভিনেত্রী জানালেন, মা, ভাই ও বোন এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এখন স্থায়ীভাবে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে থাকেন। তবে সবাই কোনো না কোনো সময় আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকেন। এবার তার মা ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকায় ছিলেন। এর মধ্যে এক মাস ধরে শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গণমাধ্যমকে তিনি বললেন, ‘এক মাস ধরে আম্মা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। প্রতিনিয়ত ফোনে কথাবার্তা হচ্ছিল। ঢাকার বড় বড় হাসপাতালের ৩-৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে তিনি দেখিয়েছেন। কিন্তু কোনোভাবেই তারা আম্মার রোগ ধরতে পারছিলেন না। এদিকে আম্মার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। একটা সময় বোঝা গেল, আম্মার নিউমোনিয়া হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি সমস্যা ছিল। ২৮ মার্চ তো এমন অবস্থা হয়েছিল, আম্মা কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলছেন। শ্বাসকষ্টে একদম কাবু হয়ে পড়েন। সেদিন আম্মার শারীরিক অবস্থা কেমন তা জানতে পারছিলাম না, কারণ তিনি কথা বলতেও পারছিলেন না। আম্মার দেখাশোনার দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তাকে শুধু বলেছি, আমি আসা পর্যন্ত আম্মার সঙ্গে থাকতে। আম্মাকে মানসিকভাবে শক্তি ও সাহস দিতে। এরপর আমি টিকিট খোঁজা শুরু করলাম। সেদিন রাতেই অনেক কষ্টে টিকিট পেয়ে যাই। আমার বোন আর ভাইয়েরা বলছিল, এ অবস্থায় একা যেতে পারব তো? তারা কেউ সঙ্গে আসবে নাকি? আমি বললাম, একাই যাব। কোনো সমস্যা হবে না। লাগেজ নিইনি, তাই কোনো কাপড়চোপড় নিইনি। বলা যায়, এককাপড়েই উড়াল দিই। পাসপোর্ট, টিকিট ও একটা ব্যাগপ্যাক সঙ্গী করেই আমি বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশে রওনা হই। প্লেনের পুরোটা সময়, ট্রানজিটের সময়—কীভাবে যে কেটেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না। আম্মার জন্য শুধু দোয়া করছিলাম’।
শাবনূর বললেন, ‘ঢাকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, চিকিৎসকরা একের পর এক শুধু আম্মার টেস্ট করাতে বলছেন। এক পর্যায়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতেও বললেন। কিন্তু এ অবস্থায় আমি কোনোভাবে হাসপাতালে ভর্তি করাতে ভরসা পাচ্ছিলাম না। আম্মারও কষ্ট হচ্ছিল। এসেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাড়াহুড়া করে আম্মার লাগেজ গুছিয়ে আবার উড়াল দিলাম।’
সিডনি যাওয়ার পরপরই তার মাকে সেখানকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তবে স্বস্তির ব্যাপার হল পরদিন থেকে মায়ের শারীরিক অবস্থার উন্নতি শুরু হয় বলে জানান শাবনূর। চিকিৎসকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তার মা এখন পুরোপুরি সুস্থ বলে জানান রূপালী পর্দার এই অভিনেত্রী।