১২ বছর আগে ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ শিরোনামে একটি ছবিতে অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সাকিব আল হাসান। কক্সবাজারে সেই ছবির শুটিং হয়। টানা ১০ দিন সাকিবের শুটিং করার কথা ছিল। কিন্তু শুটিংয়ের মাঝপথে সাকিব আল হাসান শুটিং ছেড়ে দেন। তিনি শুটিং করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন। কোনোভাবেই সাকিবকে আর রাজি করানো যায়নি। ছবির কাজটিও সেখানেই থেমে যায়।
সম্প্রতি এ নিয়ে ছবিটির পরিচালক রাজিবুল হোসেন ধারাবাহিকভাবে ফেসবুকে ‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ বন্ধের কারণ নিয়ে কথা বলা শুরু করেছেন। জানালেন সাকিবের বেঁকে বসার নেপথ্যের কারণ।
শহরের পাঁচ তরুণ-তরুণীর গল্প নিয়ে এক যুগ আগে ‘সবকিছু পেছন ফেলে’ নামের সিনেমা নির্মাণ শুরু করেন রাজিবুল হোসেন। এই সিনেমায় অতিথি চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের। কক্সবাজারে শুটিংয়েও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে অভিনয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন সাকিব। বিপদে পড়েন পরিচালক, থেমে যায় শুটিং। শেষ পর্যন্ত সিনেমার কাজই বন্ধ করে দেন নির্মাতা। পরিচালক জানান, সাকিব আল হাসানের মিথ্যাচারের কারণেই শেষ করা যায়নি সিনেমাটির কাজ।
পরিচালনার পাশাপাশি সিনেমার প্রযোজকও ছিলেন রাজিবুল হোসেন। এই ছবির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল ফুজি ফিল্ম বাংলাদেশ। তাদের মাধ্যমেই সাকিব আল হাসান এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হন বলে জানান নির্মাতা।
রাজিবুল হোসেন বলেন, ‘সাকিব তখন ফুজি ফিল্মের শুভেচ্ছাদূত। ফুজির সঙ্গে সাকিবের চুক্তি ছিল বছরের সুবিধা অনুযায়ী ৮ দিন তিনি তাদের সময় দেবেন। সিনেমা নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ফুজি ফিল্মস আমাদের জানায়, সিনেমার জন্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দেবে তারা, সেই সঙ্গে সাকিব আল হাসান অভিনয় করবেন সিনেমায়। আমি সেই কথা মোতাবেক সাকিবের সঙ্গে মিটিং করি। ছবিটি নিয়ে কথা বলি। যেহেতু খেলা নিয়ে তার ব্যস্ততা, শিডিউলের সঙ্গে মিলিয়ে শুটিংয়ের দিন–তারিখ ঠিক করি। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে চলছিল। সাকিবও আনন্দ নিয়েই শুটিং করছিল। কিন্তু যেই–না সিনেমায় অভিনয়ের খবর প্রকাশ্যে আসে, তখনই বেঁকে বসেন সাকিব। সরাসরি জানান, খবর কেন বাইরে এল, তাই তিনি কাজ করবেন না। আমি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু কোনোভাবেই মানতে নারাজ। করবেন না মানে করবেনই না।’
রাজিবুল হোসেন জানান, এই ছবির কাজ নিয়ে সমস্যা তৈরি হওয়ায় ফুজি ফিল্মসের সঙ্গেও সাকিবের দ্বন্দ্ব হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হয়। রাজিবুল বলেন, ‘ফুজি ফিল্মসের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয়, সাকিবের যে অংশ শুটিং হয়েছে, তা যেন বাদ দিয়ে দিই। তত দিনে আমার ছবির শুটিংয়ে ওই সময়ে ৬৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। আমি পুরো ব্যাপারটায় ট্রমাটাইজড হয়ে পড়ি। বাধ্য হয়ে শুটিং বন্ধ করে দিই। এরপর আর কখনো ছবিটির কাজ হয়নি।’
নির্মাতা রাজিবুল হোসেন বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছিল। সাকিব আল হাসান শুটিং করেছেন, ক্যামেরার সামনে অভিনয় করেছেন, ক্ল্যাপস্টিক ও প্রফেশনাল রেকর্ডিংয়ের মধ্য দিয়ে আমরা দৃশ্য ধারণ সম্পন্ন করি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তিনি সিনেমায় অভিনয় করার বিষয়টি অস্বীকার করলে পুরো প্রজেক্ট অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। শুধু সাকিবের মিথ্যাচার নির্মাতা হিসেবে আমাকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়েছে, তেমনি এটা ছিল একটি শিল্পভিত্তিক কাজের প্রতি তার অসম্মান। আমি চাইলে তাকে ছাড়া সিনেমাটি শেষ করতে পারতাম, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, একটি অসম্পূর্ণ সত্য দিয়ে পূর্ণ সিনেমা নির্মাণ করা যায় না।’
এত দিন পর সাকিবের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ কেন তোলা হল জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, ‘বাসায় পুরোনো হার্ডডিস্ক খুঁজতে গিয়ে “সবকিছু পেছনে ফেলে” ছবির হার্ডডিস্ক চোখে পড়ে। মুহূর্তেই আমার অনেক কিছু মনে হতে থাকে। আমার কাছে মনে হয়েছে, সাকিব আল হাসান কাজটি সে সময় মোটেও ঠিক করেননি। তার এই ঠিক না করার ব্যাপারটি সবাইকে জানানো উচিত। এ ছাড়া অনেকেই সিনেমাটি বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে নানা কথা বলত। তাদেরও সত্যি জানা দরকার। কোনো প্রোডাকশন বা পরিচালনাগত দুর্বলতায় নয়, বরং অবাঞ্ছিত ও অনৈতিক একটি ঘটনার কারণে অসমাপ্ত থেকে গেছে “সবকিছু পেছনে ফেলে ” সিনেমাটি। তাই আমি ধারাবাহিকভাবে নেপথ্যের সব ঘটনা ফেসবুকে লিখছি। আরও লিখব।‘
‘সবকিছু পেছনে ফেলে’ ছবিতে আরও অভিনয় করেছিলেন মেঘলা মুক্তা, অর্ণব অন্তু প্রমুখ।