বলিউড ইতিহাস বিকৃত করছে
বলিউড ইতিহাস বিকৃত করছে ও ভুলভাবে উপস্থাপন করছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের জনপ্রিয় লেখক অমীশ ত্রিপাঠি। ত্রিপাঠী তার নতুন বই “দ্য চোল টাইগার্স: অ্যাভেঞ্জার্স অফ সোমনাথ” প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলিউডের ইতিহাসনির্ভর হিন্দি সিনেমা নিয়ে সমালোচনা করেছেন। ‘মহেঞ্জোদারো’, ‘পদ্মাবৎ’ থেকে চলতি বছরের শুরুতে মুক্তি পাওয়া ইতিহাসনির্ভর সিনেমা ‘ছাবা’ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে।
ত্রিপাঠী বলেন, “আমরা মনে করি আলাউদ্দিন খিলজি রণবীর সিংয়ের মতো, আকবর ঋত্বিক রোশনের মতো, অথবা আওরঙ্গজেব অক্ষয় খান্নার মতো দেখতে, যা সত্য নয়। তারা সকলেই মধ্য এশিয়ার তৃণভূমি থেকে এসেছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা সত্যিই সময়ের পিছনে ভ্রমণ করি এবং তাদের দেখি, তাহলে আমাদের কাছে তারা চীনা বলে মনে হত। আসলে তারা চীনাও ছিল না, তারা একই মানুষ যারা চীনকেও জয় করেছিল এবং ধ্বংস করেছিল।”
বই প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অমীশ বলেন, ‘বলিউডের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। আমাদের ইতিহাস যেমন আছে, তেমনভাবে বলা দরকার। সিনেমা যদি সেটাকে বিকৃত করে, তাহলে দর্শক ভুল ইতিহাস শিখবে।‘
সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পদ্মাবৎ’ (২০১৬) ও আশুতোষ গোয়াড়িকরের ‘যোধা আকবর’ (২০০৮)
লেখক অমীশ কথা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন দুটি বড় চলচ্চিত্রের কথা—সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘পদ্মাবৎ’ (২০১৬) ও আশুতোষ গোয়াড়িকরের ‘যোধা আকবর’ (২০০৮) এর কথা। ‘পদ্মাবৎ’–এ আলাউদ্দিন খিলজির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রণবীর সিং আর ‘যোধা আকবর’–এ সম্রাট আকবর হয়েছিলেন হৃতিক রোশন। অমীশের মতে, মধ্য এশিয়া থেকে আসা ওই শাসকদের আসল চেহারার সঙ্গে এই বলিউড তারকাদের কোনো মিলই ছিল না। জনপ্রিয় মুখদের নেওয়া হয়েছে কেবল ব্যবহারের কথা ভেবে, ইতিহাসকে অবিকলভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।
শুধু চেহারার অমিল নয়, ভাষার বিষয়েও গুরুতর ভুল দেখছেন অমীশ। তার যুক্তি, খিলজি বা আকবর কেউই উর্দু ভাষায় কথা বলতেন না, কারণ উর্দু তখনো ভারতবর্ষে জন্ম নেয়নি। তাদের ভাষা ছিল তুর্কি বা ফারসি। অথচ ছবিতে চরিত্রগুলোকে উর্দুভাষী হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা ইতিহাসের সঙ্গে যায় না। এবং এটি একটি ইতিহাস বিকৃতি।
অনেকে বলতে পারেন, সিনেমা তো বিনোদনের মাধ্যম, তাই খানিকটা কল্পনা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু অমীশ মনে করিয়ে দেন, বড় বাজেটের ঐতিহাসিক ছবিগুলো কোটি কোটি দর্শক দেখেন, সেগুলোই অনেক সময় মানুষের কাছে ইতিহাসের পাঠ্য হয়ে ওঠে। তাই নির্মাতাদের দায়িত্ব রয়েছে সত্য ইতিহাসকে বিকৃত না করার।
এর আগে আশুতোষ গোয়াড়িকরের আরেকটি সিনেমা ‘মহেঞ্জোদারো’ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছিল। ‘মহেঞ্জোদারো’ সিন্ধু সভ্যতাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। দর্শক ও ইতিহাসবিদ—দুই পক্ষের কাছ থেকেই তির্যক সমালোচনার শিকার হয়েছে।
২০০৮ সালে আশুতোষ বানিয়েছিলেন ‘যোধা আকবর’, যেখানে মোগল সম্রাট আকবর ও এক হিন্দু রাজকন্যার কাল্পনিক প্রেমের কাহিনি বলা হয়েছিল। এ ছবিটি ব্যবসায়িক সাফল্য পেলেও তার আরেকটি সিনেমা ‘মহেঞ্জোদারো’ মুক্তির পর বক্স অফিসে প্রত্যাশিত সাড়া পায়নি।