-মোঃ অলিউর রহমান-
আজ ৩ সেপ্টেম্বর, উত্তম কুমারের ৯৪তম জন্মদিন। তিনি বাংলা সিনেমার মহানায়ক হিসেবে খ্যাত হলেও ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে বদলেছিলেন নিজের ‘স্ক্রীন নেম’ । আজকালকে নিজের আসল নাম পাল্টে পর্দায় অন্য নাম ব্যবহার করার রীতি না থাকলেও একসময় প্রায় প্রত্যেক অভিনেতা-অভিনেত্রীই পর্দার জন্য নিজের নাম পরিবর্তন করতেন। যেমনটি করেছিলেন স্বয়ং উত্তম কুমার । ক্যারিয়ারের নানা সময়ে অভিনেতার নাম বদলের সেই রোমাঞ্চকর তথ্য নয়ে পাঠকদের কাছে আজকে চিত্রালী হাজির হয়েছে।
১৯৪৭ সালে ‘মায়াডোর’ নামক হিন্দি সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রাখলেও ‘দৃষ্টিদান’ তার মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৪৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত নীতীন বসুর সিনেমাটিতে ১৩ টাকা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে নায়ক অসিতবরণের ছেলেবেলার চরিত্রে অভিনয়ের সময় নিজের জন্মগত নাম অরুণ কুমার চ্যাটার্জি ব্যবহার করেন নায়ক।
এর পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৯ সালে ‘কামনা’ ছবিতে অভিনয় করার সময় অভিনেতা নিজের নাম পাল্টে রেখেছিলেন ‘উত্তম চ্যাটার্জি’। ছবিটির ব্যর্থতার পর ১৯৫০ সালে নিজের নাম আবার পরিবর্তন করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ খ্যাত তারকা। সেই সময় নিজের নাম পরিবর্তন করে অরূপ কুমার রেখে ‘মর্যাদা’, ‘ওরে যাত্রী’, ‘নষ্টনীড়’ ছবিগুলোতে অভিনয় করেন তিনি।
তার নাম পরিবর্তনের ধারা শেষ হয় ১৯৫১ সালে। পাহাড়ি সান্যালের কথায় রুপালি পর্দার জন্য উত্তম কুমার নাম ধারণ করেন তিনি। ঐ বছর এম.পি. প্রোডাকশনের ছবিতে কাজ করার জন্য উত্তম কুমার নাম রাখেন অভিনেতা।ব্যানারটির আওতায় ১৯৫১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সহযাত্রী’ চলচ্চিত্র থেকে প্রথমবার বড়পর্দায় উত্তম কুমার হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।
একই ব্যনারের অধীনে ১৯৫২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘বসু পরিবার’ তাকে রাতারাতি তারকা বানিয়ে দেয়। পরিচিতি পাইয়ে দেয় বড়পর্দার উত্তম কুমারকে। ছবিটি এতই দর্শকপ্রিয়তা পায় যে তার অভিনয়ে সত্যজিৎ রায়ও মুগ্ধতা প্রকাশ করেন ।এইত গেল তার পর্দার নামের ইতিবৃত্ত।
তাকে মহানায়ক উপাধি দেওয়ার পিছনেও রয়েছে একটি চমকপ্রদ গল্প। জানেন কী? চলুন জেনে নিই।
সালটা ১৯৬৯। তখন শুধু রাজনৈতিক মহলেই নয় চলচ্চিত্রেও পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল। কিন্তু এই অস্থিরতার মধ্যেও উত্তম কুমারের চলচ্চিত্রগুলো বেশ ব্যবসাসফল হয়েছিল পশ্চিম বাংলায়। মজার কথা হল, এই অস্থিতিশীল পরিবেশের মধ্যেই বাংলা ও হিন্দিতে নির্মিত অভিনেতার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘অমানুষ’ মুক্তি পায় যা পরবর্তীতে তেলুগুতে রিমেকও করা হয়। এই সময়টাতেই কলকাতার এক বিখ্যাত বাংলা পত্রিকা তাকে মহানায়ক হিসেবে আখ্যা দেন। তখন থেকেই তিনি জনসাধারণের কাছে ‘মহানায়ক’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে যান।
তবে যে নামেই তাকে ডাকা হোক না কেন বাংলার সিনেমাপ্রেমীদের মনে তিনি আজীবন ‘মহানায়ক’ হিসেবেই বেঁচে থাকবেন। তার জন্মদিনে চিত্রালী গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে তাকে।