পুরনো শিল্পীদের আগমনে প্রাণ ফিরে পেল এফডিসি
দেশের সিনেমা জগতে ব্যাপক পরিবর্তন ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএফডিসি) নির্মাণকাজ চলমান থাকার কারণে অনেক দিন ধরেই এফডিসিতে নেই আগের মতো ব্যস্ততা। নেই শিল্পীদের আনাগোনাও। তবে গতকাল দুপুরে দেখা গেল ব্যতিক্রম। অনেকদিন পরে পুরনো শিল্পীদের আগমনে প্রাণ ফিরে পেল এফডিসি প্রাঙ্গন।
এফডিসিতে হাজির হলেন ইন্ডাস্ট্রির এক সময়ের জনপ্রিয় সব তারকা। কোনো নির্বাচন নয় কিংবা ছিল না বিশেষ কোনো দিবসের আয়োজন। মূলত প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণ করতেই একটি সভার আয়োজন করেছে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি।
সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন রুপালি জগতের তারকারা। সোহেল রানা থেকে শুরু করে আহমেদ শরীফ, মাসুম পারভেজ রুবেল, বাপ্পারাজ, অভিনেত্রী নূতন, পলি, কাবিলা, সুব্রত, নাসরিন, রিনা খান, পীরজাদা হারুনসহ বিভিন্ন প্রজন্মের অনেক অভিনয়শিল্পী। এ ছাড়া চলচ্চিত্রের কলাকুশলীরাও হাজির হন, সেই সঙ্গে গণমাধ্যমের কর্মীরা। সবার উপস্থিতিতে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছিলো এফডিসি।
‘কে কখন চলে যাব, শিওর না’
মুক্তিযোদ্ধা, অভিনেতা ও প্রযোজক সোহেল রানা বলেন, ‘কে কখন চলে যাব, শিওর না। এই সুযোগে আমার সঙ্গে যারা কাজ করেছেন, আর যারা ভবিষ্যতে কাজ করবেন, যারা চলচ্চিত্র জগতে আসবেন, তাদের সঙ্গে আমি যদি কোনো ভুলত্রুটি কিংবা অন্যায় করে থাকি, আজ এই মুহূর্তে আমি এই সুযোগটা নেব, আমি সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারণ আমি কখন মরে যাব, জানি না। তারা যেন আমার ভুলত্রুটি অন্যায়গুলোকে ক্ষমা করে দেন এবং আমার জন্য দোয়া করেন, যাতে আমি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে, যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করেছি, ভুল যে কিছু হয়নি তা নয়, হয়তো ভুল অনেক করেছি। আমি ভুলের জন্য তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে যাচ্ছি।“
দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন আহমেদ শরীফ। বৃহস্পতিবার তিনি দেশে ফিরেছেন। মূলত শিল্পী সমিতির এ অনুষ্ঠানের জন্যই এসেছেন তিনি। চলেও যাবেন সপ্তাহ খানেক পর। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে শোবিজের তিক্ত বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন অভিনেতা। বলেন, ‘আমি প্রশ্ন রাখতে চাই, বর্তমানে দেশে কত মানুষের আগামীকালের বা আগামী মাসের নিশ্চিত খাওয়াদাওয়ার সুব্যবস্থা নিশ্চিত আছে? যদি মিথ্যা না বলি, নিশ্চিত ব্যবস্থা নেই। সবাই চিন্তিত সামনে মাসে কী করে সংসার চলবে। এটা কোনো মিথ্যা কথা নয়। আমিও যদি বাংলাদেশে থাকতাম, তাহলে আমাকেও হাত পেতে মানুষের কাছে ভিক্ষা করে খেতে হতো। এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন শিল্পী বিভিন্ন রাস্তা বেছে নিয়েছে। শুধু সিনেমার আর্টিস্ট না, নাটকের অনেক শিল্পীকে দেখেছি নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় থাকছে। কিন্তু কেন? এর কারণ হলো, এ দেশে আনন্দ-বিনোদনে বা নিশ্চিন্তে থাকার কোনো নিরাপত্তা নেই। আমি সরকারের কাছে চাইব, শিল্পীদের নিশ্চিত জীবনযাপনের গ্যারান্টির ব্যবস্থা করে দিন।’
আমার বয়স হয়েছে
একসময়ের তুমুল ব্যস্ত ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী নাসরিনও ছিলেন। তিনি অভিনয় করেছেন সাত শতাধিক ছবিতে। কিন্তু এখন সবই অতীত। বর্তমানে অভিনয় করতে পারছেন না বলে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘আমি অভিনয় করতে আগ্রহী। তবে খুব কষ্ট লাগে, নির্মাতারা ঘুরেফিরে আমাকে আইটেম গানের জন্যই ডাকেন। তারা ভুলে যান, আমার বয়স হয়েছে। এই বয়সে আইটেম সং করা যায় না। এখন যে বয়স, সে রকম ক্যারেক্টারে অভিনয়শিল্পীদের ডাকতে চান না কেউ।’