-মোঃ অলিউর রহমান-
আজ ১৯ সেপ্টেম্বর, সালমান শাহের ৫৩ তম জন্মবার্ষিকী। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের ক্ষণজন্মা এ ধূমকেতুর প্রয়াণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখনও কেউ পূরণ করতে পারেনি। তবে অবাক করার ঘটনা হলেও সত্যি নব্বইয়ের দশকে অনেক পরিচালক তার বিকল্প তৈরি করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা করেছিলেন। তাদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে হাজির হয়েছে চিত্রালী।
১৯৯৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘কে অপরাধী’ চলচ্চিত্রটিতে সালমান শাহ ও শাবনূরের জুটি বেঁধে অভিনয় করার কথা ছিল। ছবিটির ৭০ ভাগ কাজও সম্পন্ন করেছিলেন সালমান শাহ। তবে তারকার অকাল প্রয়াণে ছবিটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে যায়।
তখন নির্মাতারা বিকল্প পন্থা বের করার চেষ্টা করেন। সিনেমাটিতে তার বিকল্প হিসেবে আরেকজন অভিনেতাকে রুপালি পর্দায় হাজির করেন তারা। সেই নায়কটি ছিলেন ওমর সানী। সালমান শাহের মৃত্যুর পর ফের রুপালি পর্দায় তার অ্যাডভোকেটের চরিত্রটিতে রূপ দেন ওমর সানী।
ছবিটি যখন প্রেক্ষাগৃহে আসল, তখন বেশিরভাগ দর্শক বড় পর্দায় নিজের স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়েছিলেন ওমর সানীর ভিতরে। ১৯৯২ সালে ‘এই নিয়ে সংসার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে ঢালিউডে পা রাখা এ নায়কের বিশেষ পরিচিতি ছিল তার ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল। ছবিটির জন্য নিজের এই লুকেরই পরিবর্তন এনেছিলেন সানী। নায়কের ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুলকে সিনেমাতে সালমান শাহের লুকের সাথে মিলিয়ে অন্য রূপ দেওয়া হয়।
তাছাড়া আরেকটি বিষয় সবার নজর কাড়ে আর তা হল ওমর সানীর ডায়লগ ডেলিভারি। ছোট পর্দায় কাজ করে আসা সালমান সাবলীলভাবে সংলাপ বলার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তখনকার চলচ্চিত্রে বেশিরভাগ অভিনেতাই কিছুটা ওভার দ্য টপ সংলাপ বলতেন। অভিনয় কিছুটা যাত্রাপালার মত করে হত। কিন্তু ছবিটির বেশিরভাগ দৃশ্যে দেখা যায় সালমান শাহের মত বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে তার মতই অভিনয় করার চেষ্টা করছেন সানী। ফলশ্রুতিতে ছবিটি ব্যাপক সমাদর পায় দর্শক মহলে।চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে বেশিরভাগ দর্শক ওমর সানীর ভিতরেই নিজের স্বপ্নের নায়ক সালমান শাহকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছিলেন ।
সালমানের মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত সিনেমা ‘কুলি’ এবং চুক্তিবদ্ধ হওয়া চলচ্চিত্র ‘মধুর মিলন’ ও ‘অধিকার চাই’ তেও ওমর সানীকেই বড় পর্দায় দেখতে পায় দর্শক । তবে সালমানের পরিবর্তে সানীকে হাজির করার চেষ্টা করা হলেও পরবর্তীতে ঠিকই জিনিসটা ধরা পড়ে যায় দর্শকদের কাছে। ‘কে অপরাধী’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেও পরবর্তীতে তেমন জনপ্রিয় ছবি খুব কমই করতে পেরেছিলেন এ নায়ক।
মায়া এঞ্জেলো একটা কথা বলেছিলেন ‘বেঁচে থাকলে এমন একটি ছাপ পৃথিবীতে রেখে যাও, যা কেউ না মেটাতে পারে’। সালমান শাহের মৃত্যুর পরেও যে তার জায়গা কোন নায়ক দখল করতে পারেনি তা এই কথারই প্রমাণ বহন করে।
সালমান শাহের জন্মদিনে চিত্রালী আজকে তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।