নায়ক রাজ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ‘ছুটির ঘণ্টার’ স্কুল দফতরি, ‘জীবন থেকে নেয়া’র বিপ্লবী তরুণ কিংবা ‘বাবা কেন চাকরের সেই অসহায় বাবা চরিত্রে থাকা এক অসাধারণ অভিনেতার কথা।দেখতে দেখতে আজ তাকে হারানোর সাত বছর। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট মা’রা যান বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাক। নায়কের পুরো নাম আব্দুর রাজ্জাক। চলচ্চিত্রে তিনি শুধু রাজ্জাক বলেই আবির্ভূত হন। চলচ্চিত্রের পথচলায় একের পর এক সাফল্যকে মুঠোবন্দি করেন তিনি। হয়ে ওঠেন এক অনন্য মানুষ। অভাবনীয় সাফল্যের গুণে তিনি ভূষিত হন ‘নায়করাজ’ উপাধিতে। আর এ উপাধি তাকে দিয়েছিলেন প্রয়াত খ্যাতিমান সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক চিত্রালী পত্রিকার সম্পাদক আহমদ জামান চৌধুরী।
নায়ক রাজের উল্লেখযোগ্য সিনেমার তালিকাটা বেশ দীর্ঘ। তবুও আজকের দিনে কিংবদন্তি এই অভিনেতার স্মরণে দেখে নিতে পারেন রাজ্জাক অভিনীত এই ছয় সিনেমা।
১৯৮০ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ‘ছুটির ঘণ্টা’ সিনেমাটি শুধু নায়ক রাজ্জাকের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারেই সেরা সিনেমাই নয়, এটি বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্থান করে নেওয়া চলচ্চিত্র গুলোর একটি। স্কুলের বাথরুমে ঈদের ছুটি ঘোষণার দিন তালাবদ্ধ হয়ে আটকে পড়ে ১২ বছর বয়সের একজন ছাত্র। সেখানেই তার দীর্ঘ ১১ দিন কাটে। এমন করুণ গল্প নিয়ে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। এই সিনেমায় স্কুল দফতরির চরিত্রে নায়করাজের অভিনয়ের প্রশংসা দীর্ঘ ৪৮ বছর পরেও শোনা যায় লোকের মুখে মুখে।
১৯৬৯ সালে মুক্তি প্রাপ্ত ‘নীল আকাশের নিচে’ নায়ক রাজ্জাকের গান নির্ভর একটি সিনেমা। এ সিনেমার অধিকাংশ গান মানুষের মুখে মুখে মুখে ছিল। এ গানগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘নীল আকাশের নীচে আমি’, ‘হেসে খেলে জীবনটা’, ‘প্রেমের নাম বেদনা’ও ‘গান হয়ে এলে’।
১৯৭০ সালে অমর চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের পরিচালনায় মুক্তি পায় নায়ক রাজ রাজ্জাকের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’। তরুণ বিপ্লবী চরিত্রে রোজী সামাদ, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিলের মত তাবড় তাবড় অভিনয়শিল্পীদের মাঝেও নিজেকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন অভিনেতা রাজ্জাক।
‘বড় ভালো লোক ছিলো’ নায়ক রাজ্জাক অভিনীত গান নির্ভর আরও একটি সিনেমা। এর প্রায় প্রত্যেকটি গাই মানুষের মন জয় করেছিল। ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুশ’ কিংবা ‘তোরা দেখ দেখরে চাহিয়া’ মত গান গুলো আজও রয়েছে সিনেমাপ্রেমীদের মনে।
১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় নায়ক রাজ অভিনীত ‘বাবা কেন চাকর’ সিনেমাটি। যা দেশের বাংলা সিনেমার ইতিহাসে মাইলস্টোন সিনেমা হিসেবে গণ্য। এতে রাজ্জাক ও ডলি জহুরের অভিনয় আজও কাঁদায় তার দর্শকদের। সিনেমায় খালিদ হাসান মিলুর গাওয়া ‘আমার মতো এত সুখী’ গানটি অন্যতম শ্রোতাপ্রিয় গান গুলোর একটি।
নায়ক রাজ্জাকের অন্যতম প্রিয় নির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘আলোর মিছিল’ সিনেমায় নায়ক রাজ নিজের অভিনয়ে দর্শকদের হৃদয়ে আলাদাভাবে জায়গা তৈরি করে নেন। সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠের ‘এই পৃথিবীর পরে’ গানটি তুমুল শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করে।
অভিনয়ের জন্য নায়ক রাজ রাজ্জাক পাঁচবার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। আজীবন সম্মাননা সহ ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূতও হয়েছিলেন তিনি। একবার রাজ্জাক সাহেবরে এক বাল্যবন্ধু বলে ছিলেন, তিনি নাকি অঙ্কে কাঁচা। তবে সবই খাতার অঙ্কে, বইয়ের অঙ্কে। জীবনের অঙ্কে তিনি এক অন্যন্য সমাধানের নাম। জীবনের জটিল সব চরিত্রের অঙ্কণে তিনি ছিলেন অসাধারণ। সকল চরিত্রে তিনি ছিলেন সাবলীল। এমন এক কিংবদন্তির অভাব বাংলা সিনেমায় অপূরণীয়।
লেখা: নূফসাত নাদ্বরুন