শিল্পী ও কলা-কুশলীদের ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে হলিউড।
১৩ জুলাই অ্যালায়েন্স অফ মোশন পিকচার্স অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসার্স এর সাথে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ডের আলোচনায় দাবি-দাওয়া পূরণ না হওয়ায় মধ্যরাতেই প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার শিল্পী ও কলা-কুশলী ধর্মঘট ঘোষণা করেন।
২ মে থেকে চলমান রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার ১১,৫০০ সদস্যদের ডাকা ধর্মঘটের সাথে যোগ দেন তারা।
আন্দোলনের সাথে যুক্ত সংগঠনগুলো হল স্ক্রিন অ্যাক্টর্স গিল্ড–আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্ট যেটা সংক্ষেপে ‘স্যাগ–আফট্রা’ নামে পরিচিত এবং রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা। তবে ধর্মঘটটির সাথে যুক্ত হয়নি দ্য ডিরেক্টরস গিল্ড অব আমেরিকা।
১৯৮০ সালে অভিনেতারা ১০ সপ্তাহব্যাপী ছোট একটা ধর্মঘটের সূচনা করলেও এইরকম বড় পরিসরে ডাকা ধর্মঘট ১৯৬০ সালেও একবার দেখেছিল হলিউড।
কিন্তু ৬৩ বছর পর কেন এই ধর্মঘটের সম্মুখীন হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি?
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, ধর্মঘটটির সূচনা করে রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকা।
চিত্রনাট্যকারদের সংগঠনটি প্রি-প্রোডাকশন, প্রোডাকশন ও পোস্ট- প্রোডাকশন স্টেজে তাদেরকে দিয়ে স্ক্রিপ্ট সংশোধন ও নতুন করে লেখার সময় ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবি তুলে ধর্মঘটটির ডাক দেন। এছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে স্ক্রিপ্ট লেখার বিরোধিতাও করে সংগঠনটি।
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও স্টুডিও গুলোর আয় থেকে ন্যায্য হিস্যা, ভাল কর্মপরিবেশ ও অধিক বেতন, শিল্পীদের সিনেমা ও টিভি শোতে চুক্তিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে উপযুক্ত শর্তাবলী নির্ধারণসহ আরও কিছু দাবি আদায়ে এ ধর্মঘটে যুক্ত হয় স্যাগ। তাছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও কম্পিউটার ভিত্তিক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে বিকল্প পথে যাতে শিল্পীদের ব্যবহার করে চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোডাকশন না করা হয় তার জন্যও আওয়াজ তোলে সংগঠনটি।
তবে রাইটার্স গিলড ও স্যাগ এর একটি দাবি প্রায় একই ছিল আর তাহলো অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলির জনপ্রিয়তা অনুযায়ী অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকারদের ইনসেনটিভ দেওয়া। ইউনিয়নগুলোর অভিযোগ, নেটফ্লিক্স-সহ অন্যান্য অনলাইন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলি ভিউয়ের হিসেব পর্যন্ত কাউকে দেয় না । ফলে কোনটি জনপ্রিয় হচ্ছে, তা বোঝাও যায় না। সেজন্য ইনসেনটিভ থেকে বঞ্চিত হতে হয় শিল্পী ও কলা কুশলীদের।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে আলোচনায় যেতে রাজি হননি অ্যালায়েন্স অফ মোশন পিকচার্স অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসার্স। আর তার জন্যই ধর্মঘটের ডাক দেয় স্যাগ।
হলিউডের বিখ্যাত সব তারকারা তাদের এ আন্দোলনের সাথে নিজেদের যুক্ত করেছেন। ১৩ জুলাই ক্রিস্টোফার নোলানের ছবি ‘ওপেনহেইমার’ এর শিল্পীরা ধর্মঘটের পক্ষে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার জন্য সিনেমাটির রেড কার্পেট ত্যাগ করেন।
১৪ জুলাই দুপুর পর্যন্ত নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলেসের মত বড় বড় শহরে অবস্থিত স্টুডিও এবং স্ট্রিমিং সার্ভিসের অফিসের বাইরে পিকেটিং করার জন্য জড় হতে থাকে শিল্পী ও কলা-কুশলীরা। নেটফ্লিক্স, প্যারামাউন্ট, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ও ডিজনির অফিসের সামনে ঐদিন দেখা যায় শত শত শিল্পী ও কলা-কুশলীকে।
ধর্মঘটটি নিয়ে এ পর্যন্ত গণমাধ্যমে অনেক অভিনেতাই মন্তব্য করেছেন। অভিনেতাদের সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ও মার্কিন অভিনেত্রী ফ্রান ড্রেসচারের মতে, অর্থলিপ্সু একটা গোষ্ঠী শিল্পীদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। আর তাই কোন পরিণতিতে পৌঁছতে পারছে না তাদের আন্দোলন।
তবে কতদিন গড়াতে পারে এই ধর্মঘট, এমন প্রশ্নের জবাবে ‘সাকসেশন’এর অভিনেতা বেরিয়ান কক্স বলেন,ধর্মঘটটি বছরের শেষ পর্যন্ত গড়াতে পারে বলে তিনি মনে করেন। স্কটিশ তারকা এও জানান, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম থেকে যেই বাড়তি উপার্জন হয়, তা অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকারদের সাথে শেয়ার ‘না করতে চাওয়া‘র কারণেই এই পরিস্থির উদ্ভব হয়েছে।
‘অ্যাভাটার’,’ডেডপুল’ ও ‘গ্ল্যাডিয়েটর’ ফ্রাঞ্চাইজের সিক্যুয়েলগুলো ধর্মঘটটির দ্বারা প্রভাবিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’, ‘ফ্যামিলি গায়’ ও ‘দ্য সিম্পসন্স’ এর শুটেও এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। আন্দোলনের কারণে আটকে গেছে এমি এবং কমিকন এর মত অনুষ্ঠানগুলোর প্রমোশনাল ইন্টারভিউ ।
জো বাইডেনের সমর্থন পাওয়া এই ধর্মঘটের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে যুক্তরাজ্যে অবস্থিত স্যাগ এর শাখা সংগঠন ‘এক্যুইটি’। যুক্তরাষ্ট্রের শোগুলো যাতে দাবি-দাওয়া না মেনে যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর না করা হয় তার দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণাও দিয়েছে সংগঠনটি ।
ধর্মঘটটির কারণে কতদিন অচল হয়ে থাকবে হলিউডপাড়া তা দেখার জন্য অপেক্ষায় দিন গুনছেন সিনেমাপ্রেমীরা।