Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
শুক্রবার, মে ৩০, ২০২৫

তমাল মাহবুব: বাঁধ ভেঙে গেলে আর বন্যা আটকানো যায় না!

“তিনি বাংলাদেশের ভিলেনের প্রথাগত চিত্রটাই বদলে দিয়েছেন। উনিই প্রথম ভিলেন যার জন্য মানুষ সিনেমা হলে গিয়েও সিনেমা দেখেছে, কোন নায়ক বা নায়িকার জন্য নয়।”

টেলিভিশনের ছোটপর্দার দর্শকপ্রিয় অভিনেতা তমাল মাহবুব। যিনি তার অভিনয় জীবন শুরু করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ধারাবাহিক ৪২০ (ফোর টুয়েন্টি) নাটক দিয়ে। তারপর থেকেই একটু একটু করে প্রায় দেড়যুগের অভিনয় ক্যারিয়ার এই অভিনেতার। তমাল মাহবুব অভিনয়কে ভালবাসেন, অভিনয়কে ঘিরেই তার সব ধ্যান জ্ঞান। প্রাণবন্ত ও দর্শক নন্দিত এই অভিনেতা সম্প্রতি চিত্রালীর সাথে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। কথা বলেছেন তার অভিনয় জীবনের দীর্ঘ পথচলা এবং নাটকের অতীত, বর্তমান ও পরিবর্তন নিয়ে। চলুন পড়ে নেয়া যাক সাক্ষাৎকারটি।  

সাক্ষাৎকার: রাইসুল ইসলাম

অভিনেতা তমাল মাহবুব | ছবি: অভিনেতার সৌজন্যে

চিত্রালী: আপনার অভিনয় জগতে আসার পেছনে কারণ কি ছিলো?

তমাল মাহবুব: সময়টা ২০০২/ ২০০৩ সাল তখন আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র। সেখানে ফ্রেন্ডসার্কেলদের একটি নাটকের গ্রুপ ছিল। যেখানে পথ নাটকের কাজ হত, ওরা আমাকে ডাকত আমি মাঝেমাঝে যেতাম। ওদের রিহার্সেল আমার খুবই বিরক্ত লাগত, ওরাও বুঝতো  আমার নাটকের প্রতি কোন আগ্রহ নেই , শিল্প সাহিত্য আমাকে দিয়ে হবেনা। আরেকটি ব্যাপার হল, আমি মূলত ফিজিক্সের ছাত্র হওয়াতে সারাদিনের ক্লাস – প্র্যাকটিকাল এর পর আর নাটক সিনেমা কিছুই ভালো লাগতো না। তখন মনে হতো একটু রিল্যাক্সে থাকি। এরপর আমি পড়াশোনা শেষ করে ঢাকার একটি স্কুলের টিচার হিসেবে জয়েন দিলাম। বাবার ব্যবসা দেখতাম।

ঢাকায় আমার আড্ডার যাওয়া ছিল শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে, ওটা ছিল মিডিয়ার সেন্টার পয়েন্ট তখন, অনেকেই সেখানে আসত আড্ডা দিতে। আমি সবার সাথে মজা করতাম, ঐ কারনে দুই একজন আমাকে বললো তোমাকে দিয়েই হবে। আমাকে দিয়ে যে হবে সেটা আসলে আমিই জানতাম না।

এরপর কোন এক চক্রে প্রথম কাজ শুরু করলাম মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ৪২০ ধারাবাহিকে। এরপর ঐ সময়ের সুপারহিট একটা নাটকে কাজ করলাম। নাটকটির নাম ‘ঠুয়া’ যেখানে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন মোশাররফ করিম। এরকম কয়েকটা কাজ করার পর দেখলাম রাস্তায় লোকজন আমাকে চেনে। প্রডিওসার আমাকে টাকা দিচ্ছে, খাওয়াচ্ছে। এরপরেই আমার ভেতর অভিনয়ের প্রতি এক ধরনের ভালো লাগা তৈরি হতে শুরু করলো। কালক্রমে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সাথে আমার জীবনের প্রথম ঈদের নাটকের কাজ করলাম। ২০০৭-এ কোরবানির ঈদে নাটকটা প্রচারিত হয় সেসময়।  

একদিন ফারুকী ভাই আমাকে বললেন তুমি ভাল করছো, কাজ চালিয়ে যাও। এই কথাটুকু আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছে। এরপর ২০০৯ থেকে আমি অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে গেলাম।

চিত্রালী:  গত দুই দশকে নাটকের অনেক পরিবর্তন আপনি দেখেছেন। বর্তমানে আমরা প্রায়ই দেখি যে দুজন ক্যারেক্টার দিয়েই একটা নাটক শেষ করে দেয়া হচ্ছে, আগে এমনটা ভাবাও মুশকিল ছিলো। আগের নাটকের সাথে বর্তমানের এই পরিবর্তনকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

তমাল মাহবুব:  প্রতি ১০ বছর পরপর প্রতিটি ব্যবসায়ের ধরন পরিবর্তন হয়। ছোট বেলায় গানের ক্যাসেট কিনতাম সেটা পরিবর্তন হয়ে আসলো সিডি, আর সেখান থেকে এখন ইউটিউব চ্যানেলসহ আরো অনেক কিছু। এত পরিবর্তন তো ছোটবেলায় আমরা ভাবিনী কিন্তু যুগের সাথে সাথে তো সবই পরিবর্তিত হয়েছে। নাটকের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। নাটক একটি ব্যবসা, তাই এই পরিবর্তনকে বলা যায় ব্যবসা তার ধরন পাল্টিয়েছে।   

চিত্রালী: মূলত যাদের জন্য এই ব্যবসায়ের পরিবর্তন, তারা কি বঞ্চিত হচ্ছে?

তমাল মাহবুব: অবশ্যই বঞ্চিত হচ্ছে। আগে টেলিভিশনে সেন্সর বোর্ড ছিল এখন সেটা পাল্টেছে। আগে সামান্য নামের জন্য, একটা দৃশ্যের জন্য সেন্সর বোর্ড নাটক বাতিল করে দিত। আর এখনকার নাটকে ওইভাবে কোন সেন্সর বোর্ড নেই তাই যা ইচ্ছা নাম দিয়ে নাটক করা যাচ্ছে।  

আগে টিভি চ্যানেলের প্রিভিউ বোর্ডে বসতেন জ্ঞানী-গুণী লোকেরা। তারা নাটক, ডায়ালগ সব দেখে নাটকটি পাশ করতেন। আর এখন সেটা হচ্ছে না। এখন ইউটিউব চ্যানেল আছে যার যা ইচ্ছা পাবলিশ করতে পারছে। আটকানোর কোন পথ নেই। বাঁধ ভেঙে গেলে আর বন্যা আটকানো যায় না। কম্পিটিশান বেড়েছে কনটেন্ট ব্যবসায়ে তাই নাট্য অভিনেতা-নেত্রীরা কিছুটা স্তিমিত এখন। তবে দর্শক এখনো নাটক ভালবাসে আর সেটাই বাঁচিয়ে রাখবে নাট্য অভিনেতা-নেত্রীদের।

অভিনেতা তমাল মাহবুব | ছবি: অভিনেতার সৌজন্যে

চিত্রালী: নাটক ইন্ডাস্ট্রিতে সিন্ডিকেট ও কোরামের কথা শোনা যায়। এটা কি আসলেই আছে? সিন্ডিকেট ও কোরাম ব্যবস্থার কারণে নাট্য অভিনেতারা কি তাদের যোগ্য ক্যারেক্টার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়?    

তমাল মাহবুব: এই কোরামবাজি বিটিভি-এর আমল থেকেই ছিল। নির্দিষ্ট নায়ক-নায়িকার বিপরীতে  সেট করাই থাকতো বিপরীত নায়ক-নায়িকা। এমনকি ওই জুটির ক্যামেরাম্যান কে হবে সেটাও। এটাকে আমি বলি “ভাল সম্পর্ক”। এই বাস্তবতাকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। আমাদের দেশে যেটা হয় আসলে, একটা কাজে তাদেরকেই যুক্ত করা হয় যাদের সাথে আমার বা আমাদের ভাল সম্পর্ক আছে। অচেনা অজানা কাউকে একান্তই বিপদে না পড়লে কাজে নেয়া হয়ে উঠে না। তবে এটার নেগেটিভ সাইড হল একই রকম মেধার দুজন তারকার মধ্যে একজন কাজ পায় সার্কেলে আছে বলে আর অন্যজন কাজ পায় না কোরামে না থাকার কারণে।

চিত্রালী: অপি করিম, জাহিদ হাসান কিংবা তৌকির আহমেদদের মত নাট্য অভিনেতাদের শূন্যতা কি নতুন প্রজন্মের নাট্য অভিনেতা-নেত্রীরা পূরণ করতে পারছেন? নাকি ব্যাপারটা এখন কেবলই ভিউসর্বস্ব হয়ে গেছে?

তমাল মাহবুব: ভিউ অবশ্যই একটা ব্যাপার। ভিউ মানেই তো ব্যবসা। একজন প্রডিউসার একটা নাটকে ৫/১০ লাখ টাকা ইনভেস্ট করছে, ভালো খারাপ দেখার ফুসরত তার নাই, বাস্তবতা এটাই। কিছু কিছু বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হয়। ব্যবসা কে অস্বীকার করা যাবেনা। ব্যবসা করে তার ভেতর থেকেই শিল্পচর্চাটা করতে হবে।

চিত্রালী: অভিনয় জীবনে আপনার প্রাপ্তি কি? যদি অ্যাওয়ার্ডের কথা বলি।  

তমাল মাহবুব: অভিনয় জীবনে আমার প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা। আর অ্যাওয়ার্ডের কথা যদি বলি, আমি জীবনে কোনদিন কোন অ্যাওয়ার্ড পাইনি। ঢাকা শহরে প্রতি সপ্তাহে কোথাও না কোথাও অ্যাওয়ার্ডের অনুষ্ঠান হয়। আমি জানিনা কারা অ্যাওয়ার্ড দেয় আর কারা অ্যাওয়ার্ড পায়। আমরা হয়তো যোগ্য হয়ে উঠিনী এখনো কিংবা বলা যায় অত বড় লবিং আমাদের নেই তাই অ্যাওয়ার্ড পাওয়া হয়ে উঠেনী। 

চিত্রালী: দীর্ঘ সময় ধরে তো এই ইন্ডাস্ট্রিতে আছেন, ডিরেকশনে নিয়মিত হচ্ছেন কবে?

তমাল মাহবুব: আমি কিছু নাটক বানিয়েছি। কিন্তু নাটক এবং ডিরেকশন দুটো একসাথে করা কঠিন। ডিরেকশনে সময় দিতে হয়; প্রডিউসার, চ্যানেল, আর্টিস্ট এতসব বিষয়কে একসাথে ম্যানেজ করা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাই ডিরেকশনে এখনো পুরোদমে আসিনী।

চিত্রালী: সিনেমায় কাজ করার ইচ্ছে আছে কি?

তমাল মাহবুব:  ইচ্ছে আছে। আমাকে ডাকলে অবশ্যই কাজ করবো সিনেমায়।

চিত্রালী: যদি আপনার ড্রিম ক্যারেক্টার নির্বাচন করতে বলা হয়, কোনটিকে প্রাধান্য দিবেন?

তমাল মাহবুব: আমি হুমায়ূন ফরিদীর মতো ভিলেন হতে চাই। আমার অভিনেতা হওয়ার শখ হয়েছে তাকে দেখে, কারণ তিনি বাংলাদেশের ভিলেনের প্রথাগত চিত্রটাই বদলে দিয়েছেন। উনিই প্রথম ভিলেন যার জন্য মানুষ সিনেমা হলে গিয়েও সিনেমা দেখেছে, কোন নায়ক বা নায়িকার জন্য নয়।

চিত্রালী: চিত্রালীকে সময় দেয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ

তমাল মাহবুব: চিত্রালীকেও ধন্যবাদ কথা বলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

মারা গেছেন ভারতীয় পরিচালক রণো মুখোপাধ্যায়

বুধবার ২৮ মে মুম্বাইয়ে মারা গেছেন ভারতীয় নির্মাতা রণো মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর।…

বুবলীদের শুটিং বন্ধ করতে বন বিভাগকে অনুরোধ জয়ার

সম্প্রতি শবনম বুবলী ও আবদুন নূর সজলের নতুন সিনেমার শুটিং হয়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর ভারতীয় সীমান্তবর্তী…
0
Share