জানি তোমায় দেখেই স্বপ্নের শুরু
তোমায় দেখেই শেষ
তবু ভালো লাগা ভালোবাসায় তুমি
আমার বাংলাদেশ..
বেঁচে থাকলে ২০২৪ সালে তার হতো বাষট্টি বছর বয়স। হয়তো বাংলাদেশ নিয়ে নতুন করেও গান গাইতেন। কিন্তু নেই তিনি আর তার প্রিয় মানুষের মাঝে। নেই আইয়ুব বাচ্চু- সুরের দুনিয়াতে।
আইয়ুব বাচ্চুর জীবনের টালি ছাপ্পান্নতে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেও, তার কর্ম সীমাহীন। আর সেই সীমাহীনতায় বিশালতা ছড়িয়েছে সুরের বিন্দু, ইথারে ইথারে দূর বহুদূর গেছে কণ্ঠের ধ্বনি। তাই উপমহাদেশে আইয়ুব বাচ্চু একজনই। যাকে অনেকেই চেনেন ’গিটার উইজার্ড’ হিসেবেই।
ঘুমন্ত শহরে রূপালী রাতে – চির তারুণ্যের বাহক আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাবার পর এলআরবি দৃশ্যত কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। কিছু মান অভিমান, ফেরদৌস আইয়ুব চন্দনার কিছু শক্ত পদক্ষেপের কারণে এবির গানগুলো দৃশ্যত হারিয়ে যেতে থাকে প্রচারে। তবে প্রতিবছরই তাকে কেউ না কেউ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে থাকে। যেমন তার মৃত্যুর পর স্মরণ করেছিলেন কলকাতার সোমলতা। আবার যেকোনও বড় কনসার্টে সে হোক আর্টসেলের পঁচিশ বছর বা ব্ল্যাকের রিইউনিয়ন, আইয়ুব বাচ্চুকে স্মরণ করে না এমন স্টেজ নেই।
আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিনে ব্যান্ডের বাইরে তার অন্য বিস্তৃতি স্মরণ করতে চায় চিত্রালী। যেমন তার সিনেমায় প্লেব্যাক। অপর প্রয়াত সুপারস্টার মান্নার সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে আইয়ুব বাচ্চু প্লেব্যাক শুরু করেন সিনেমায়। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ও নায়ক মান্না প্রযোজিত ‘লুটতরাজ’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন আইয়ুব বাচ্চু। নির্মাতা জানিয়েছিলেন, মান্নার একান্ত আগ্রহেই আইয়ুব বাচ্চু রাজি হন। যখন খোদ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলও উড়িয়ে দেন এই সম্ভাবনা তখন খোদ এবি জানান যে ‘বুলবুল ভাই গান লেখেন আমার জন্য। গাইবো আমি।’
এরপর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর ও সংগীতে তৈরি হয় ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ গানটি। তার সঙ্গে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন কনকচাঁপা। ‘আম্মাজান’ ছবিতে ‘আম্মাজান’ গানটি গেয়ে নতুন রেকর্ডের জন্ম দিয়েছিলো আইয়ুব বাচ্চু। এই ছবির ‘স্বামী আর স্ত্রী বানাইছে কোন মিস্তিরি’ গানটিও তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। এছাড়াও তার আরও কিছু জনপ্রিয় গান- আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে (সাগরিকা), আমি তো প্রেমে পড়িনি (ব্যাচেলর) ইত্যাদি।
আইয়ুব বাচ্চুর নিজের সুরের বাইরেও তাল দিয়ে গেছেন নানা আয়োজনে।
তিনি ভারতে “আইআইএম জোকা রক ফেস্ট” এর বিচারক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। বেনসন অ্যান্ড হেজেস স্টার সার্চ এবং এবং ডি-রকস্টার প্রতিযোগিতার আহ্বায়ক ও বিচারক ছিলেন। সে সময়ে ‘আওয়াজ পাঠাও’ ক্যাম্পেইনটি দারুণ জনপ্রিয়তা পাওয়া।
তিনি ছিলেন বাংলাদেশী আইডলের অন্যতম প্যানেল বিচারক ।
‘সাউথ এশিয়ান ব্যান্ডস ফেস্টিভ্যাল ২০১৩’ আয়োজনে এলআরবির নেতৃত্ব দেন।
তিনি আজম খান, নিলয় দাস, খালিদ হাসান মিলু , তপন চৌধুরী , রূপম ইসলাম , হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল, আলম আরা মিনু, ঝোলো এবং আরও অনেকের সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। বাচ্চু টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে মিউজিক্যাল স্কোরিংয়ের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি গ্রামীণফোনের জন্য গান লিখেছেন, ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৪ উপলক্ষ্যে স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলির জন্য “দোল লাগে দোল” গানটির সুর ও সঙ্গীত ব্যবস্থা প্রদান করেছেন। বাচ্চু রেডিও ফুর্তির সাথে সহযোগিতা করেছিলেন নতুন প্রতিভা এবং নতুন কণ্ঠকে স্পটলাইটে আনতে এবং তাদের পারফর্ম করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দিয়ে।
সদ্য প্রয়াত হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের প্রথম অ্যলবামেরও সকল কাজ তার হাতেই করা।
সব মিলিয়ে কেবল গিটার নয়, সুরের দুনিয়ারই ‘উইজার্ড’ আইয়ুব বাচ্চু। যার মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের এই জীবনের গল্পও কোন এক পর্বতে শেষ করা অসম্ভব।
একারণেই হয়তো সকলে বলে, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। শুধু দেহটা হারিয়ে যায় ধরা ছোঁয়ার সীমানা থেকে। আইয়ুব বাচ্চুও তার পৃথিবীর সুর তাল ছিন্ন করে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর।
কিন্তু তার সাথে তার ভক্তের সম্পর্ক ছিন্ন হবে না, যতদিন ঘুমভাঙা শহরে কিশোররা হেটে যাবে, আর তার সৃষ্টি করা সুরে মাথা দোলাবে – ততদিন।
লেখা: সৈয়দা ফারজানা জামান রুম্পা