স্বৈরাচারী সরকার পতনে ছাত্রদের লড়াইয়ের পুরোটা সময় সরব ছিলেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সঠিকের সাথে থাকতে পিছপা হননি তিনি। নতুন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের সেন্সর বোর্ড পুনর্গঠনের ঘোষণার পর এবার সেন্সরের বিষয়েও আওয়াজ তুলেছেন নির্মাতা ফারুকী।
১৮ আগস্ট, রবিবার সন্ধ্যায় নিজের ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ‘গাহি নো সেন্সরের গান’ শিরোনামে এক স্ট্যাটাসে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘আপনি কি চান বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে ছবি হোক? মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান গুমের মতো নিষ্ঠুর এবং অমানবিক যে কাজটা হাসিনা-জিয়াউল-তারেক সিদ্দিকী মিলে করেছে সেটা নিয়ে ছবি হোক? ব্রিগেডিয়ার আজমি বা ব্যারিস্টার আরমানের হৃদয়বিদারক ঘটনা নিয়ে ছবি হোক? আপনি কি চান আমাদের ইতিহাস নিয়ে আওয়ামী গ্র্যান্ড ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে কেউ ফিল্ম করুক?’
আরও কয়েকটি প্রশ্ন করে তিনি লেখেন, ‘কেউ তার ছবিতে প্রশ্ন করুক ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পনে আমাদের উপস্থিতি ছিল না কেনো? অথবা চান উল্টা দিকে কেউ বিএনপি’র ন্যারেটিভের বাইরে গিয়ে ছবি করুক? তাহলে সেন্সর বোর্ড নামক অথর্ব জিনিসটা বাতিল করেন!’
সেন্সর নীতিমালা নিয়ে তার ভাষ্য, ‘এখন যে সেন্সর নীতিমালাটা আছে, এটা এমন ভাবে বানানো হয়েছে যাতে যে দল ক্ষমতায় থাকবে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী যে কোনো ছবি যেনো আটকে দেয়া যায়। আমরা চাই যে দলই সরকারে থাকুক ফিল্মমেকারদের গলা যেনো কেউ চেপে ধরতে না পারে। তার বদলে একটা রেটিং সিস্টেম চালু করা উচিত যেখানে বলে দেয়া হবে কোনটা অ্যাডাল্টদের জন্য, কোনটা প্যারেন্টাল গাইডেন্স লাগবে ইত্যাদি।’
নির্মাতা আরও যোগ করেন, ‘এখন প্রশ্ন আসতে পারে অবাধ স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে কেউ যদি একটা ছবি বানায় যেখানে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের চরিত্রকে রাজাকার দেখালো কোনো আওয়ামী অন্ধভক্ত ফিল্মমেকার, তখন? অথবা উল্টা দিকে আরেক অন্ধ ভক্ত একটা ছবি বানালো যেখানে বঙ্গবন্ধু ডিজইনফরমেশন দ্বারা আক্রান্ত হলো? এইসব মোটা দাগের বিষয় ঠেকানোর স্পষ্ট বিধান রেখেও নিশ্চয়ই বিধিমালা করা যাবে যেখানে ফিল্মমেকাররা ইতিহাসকে প্রশ্ন করতে পারবে। পাশাপাশি আমি জানি ধর্মীয় কিছু সেনসিটিভ ব্যাপার সেইফগার্ড করার কথা বলবেন সরকারী কর্মকর্তারা। এটা নিয়ে তারা আগেও বলেছিলেন। আমার উত্তর সেখানেও কি বিধান রাখতে চান স্পষ্ট ল্যাঙ্গুয়েজে রাখেন।’
সবশেষে তিনি লেখেন, ‘বাংলাদেশের নতুন দিনের ফিল্মমেকাররা প্রত্যেকেই এদের ঈর্ষার শিকার। কমিটিতে সেনসিবল লোকজন নেন প্লিজ। অনুদান কমিটিও একই রকমভাবে দলীয় প্রোপাগান্ডা মেশিনের হাত থেকে উদ্ধার করেন। সেটা করার অনেক উপায় আছে।’
সেন্সর বোর্ড নিয়ে নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর দীর্ঘ এই পোস্টে স্পষ্ট যে তিনি বিষয়টি তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের নজরে আনতে চাইলেন। এমনকি চাইলেন মুখোমুখি বসতেও!