Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
মঙ্গলবার, জুলাই ২, ২০২৪
Your Image

গানে আনন্দে ব্যাচভিত্তিক পিঠা উৎসব

ছবি: সংগৃহীত

দেশের ভেতরে অথবা বাইরে যেখানেই যে থাকুক না কেন একটি শব্দের আর সম্পর্কের কোন পরিবর্তন হয় না আর সেটা হল বন্ধুত্ব। বন্ধু কথাটার সাথে মিশে থাকে ভালোবাসা, ভালোলাগা আর জীবনের নানান স্মৃতি। সেই স্মৃতিই বারে বারে বন্ধুদের টেনে আনে শেকড়ের কাছে। বারবার মিলতে মন চায়, সময়কে থামিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। বন্ধুরা যখন এক সাথে মেলে কোন উৎসবে সেটা হয়ে ওঠে এক প্রাণের মিলন মেলা। গত ২৭ জানুয়ারী এজিনকোর্ট কমিউনিটি সেন্টারে এস এস সি ১৯৯৮ – এইচ এস সি ২০০০ ব্যাচের এবারের পিঠা উৎসব যেন সেই মিলন মেলার এক অনবদ্য ইতিহাস হয়ে রইলো।

পিঠা উৎসব কে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই একটা উৎসব উৎসব আমেজ বিরাজ করছিল। সকলের মুখে মুখে শুধু এই উৎসবেরই আলোচনা। মেয়েরা কে কি পরবে? ছেলেরা কোন পাঞ্জাবি পরবে সেই আলোচনাও বাতাসে ছিল।

শনিবার পিঠা উৎসব শুরু হয় বিকেল ৫ টা থেকে। যদিও আয়োজকদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় সকাল থেকেই, কেউ ছোটে পিঠা আনতে, কেউ বা কোমল পানীয়, আবার কেউ ছোটে রাতের খাবারের খোঁজে। চিন্তার বলি রেখা সবার কপালে ঠিক সময়ে মঞ্চ তৈরি করা যাবে তো? সময় যে বড় অল্প। সকলের ঐকান্তিক পরিশ্রমে সেই মঞ্চও সেজে ওঠে সময়ের আগেই। একে একে সবাই আসতে থাকে নানান দেশীয় সাজে। মেয়েরা বাংলার চিরাচরিত শাড়ী আর অলংকারে সাজিয়ে তোলে নিজেদেরকে। ছেলেরাও পিছিয়ে ছিল না, তারাও পরে নানান রঙের পাঞ্জাবি আর ফুলের মতো ছোট বাচ্চাদের মায়েরা তাঁদের বাচ্চাদের সুন্দর বাঙালি পোশাকে সাজিয়ে নিয়ে আসে, যেন ফুলের বাগানে এরা প্রজাপতি। উৎসব কেন্দ্রটি মুহূর্তের ভেতর প্রানের রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে ওঠে। সেই রং ছড়িয়ে পড়ে সকলের মনে আর তারপর শুরু হয় আড্ডা, মজা আর ছবি তোলা।

উৎসবের শুরুতেই ছিল দারুন স্বাদের চটপটি আর ফুচকা। আর তা ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে সেখানে ছিল একটা চটপটি ভ্যান। তিন জন সুন্দরি চটপটি বিক্রেতা রুমা, ডোনা, আর শম্পা হাসি মুখে সবাইকে চটপটি পরিবেশন করছিল যেটা চটপটির স্বাদ কে বাড়িয়ে দিয়েছিল বহু গুন। এরপর চা পান আর চা পানের পর পরই শুরু হয় পিঠা পরিবেশন। বাংলার শীতের কথা মাথায় রেখেই চেষ্টা করা হয় সবার প্রিয় পিঠা পরিবেশনের। পিঠার ডালি সাজিয়ে উৎসবের ভলেনটিয়ার বন্ধুরা সকলের হাতে তুলে দিতে থাকে ভাপা, পাটিসাপটা, ভর্তা সহ ঝাল চিতই, তালের বড়া, নারকেল পুলি, ডিমের পিঠা, মুড়ির মোয়া। পিঠা পেয়ে সে এক দারুণ অনুভূতি সবার মাঝে, যেন দেশে বসে মায়ের হাতে পিঠা খাওয়া। পিঠা খাওয়ার সাথে সাথে কামরুন নাহার হীরার উপস্থাপনায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে তন্দ্রা, তন্দ্রার ছেলে রাইয়ান, জিনিয়া আর সকলের প্রিয় সাফায়েত। কৌতুক পরিবেশন করে পুলক আর স্ট্যান্ডআপ কমেডি করে মোস্তফা।

সাফায়েতের শেষ গান “আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম” এর সাথে ছেলেদের রেলগাড়ি নাচ আনন্দের মাত্রা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। তারপর সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলার হিড়িক পড়ে যায়। এরপর উৎসবের স্পন্সরদের হাতে পুলকের পরিচালনায় ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয় রিয়েল্টর মহি রহমতউল্লাহ , রিয়েল্টর মোঃ আজিম এবং স্পেস শেয়ার এর পরিচালক কামরুন নাহার এর হাতে, সাথে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। ছোট বাচ্চারা অনেক কষ্ট করেছিল অনুষ্ঠান কে সুন্দর করে সাজাতে, তাই ওদের হাতে তুলে দেওয়া হয় গিফট কার্ড।

এবারের পিঠা উৎসবে দূর দূরান্ত থেকে বন্ধুরা এসেছিল সপরিবারে। এত দূর থেকে এসেও যেন ওদের ক্লান্তি ছিল না, ছিল অনেকদিন পর প্রিয় বন্ধুকে কাছে পাওয়ার অপার আনন্দ। তবে এবারের উৎসবে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল দেশ থেকে আসা নতুন বন্ধুরা, এদের ভেতর মোজাম্মেল, সাজ্জাদ আর রিয়াজ এর নাম নিতেই হয়। মোজাম্মেল আকবর আর সাজ্জাদ খাবার পরিবেশনার গুরু ভার যে ভাবে পালন করেছে তার তুলনা নেই। পরিবার পরিজন ফেলে আসা এইসব বন্ধুরা পিঠা উৎসবে সবাইকে পেয়ে যেমন খুশি হয়েছে তেমনি পুরাতনরাও ওদেরকে আপন করে নিয়েছে, চেষ্টা করেছে ওদের আপনজন হতে। এটাই তো বন্ধুর কাজ, বন্ধুর প্রতি বন্ধুর বাড়িয়ে দেওয়া হাত। দূর কে কাছে টানার যে নিরলস চেষ্টা ব্যাচ ৯৮-০০ করে যাচ্ছে সেটা হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে তার লক্ষের দিকে। সুদূর মন্ট্রিয়েল থেকে বন্ধু সুমন এসে উৎসবের পালকে যুক্ত করে আরো এক রঙিন রং সেই রঙে সেজে ওঠে উৎসবের শরীর.

শেষ পর্বে ছিলো ডিনার আর লটারীতে প্রাপ্ত বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় শায়লা’স কালেকশনের সৌজন্যে। অনুষ্ঠান শেষ হয় অনিকের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যদিয়ে। আলোকচিত্রের গুরু দায়িত্ব ছিল একা ফয়সালের কাধে। সাউন্ড সিস্টেমের পুরো আয়োজনে ছিলো সাফায়েত। মঞ্চ সাজানো, পোস্টার আর ডালা/কুলাতে আল্পনা করার মতো সুক্ষ কাজগুলো সুনিপুন হাতে সম্পন্ন করেছে ডোনা, শম্পা, হীরা আর রুমা। ফটো বুথে সাহায্য করেছে তনু, রিনি আর ঝর্ণা । সুদূর বাংলাদেশ থেকে ডালাকুলা বয়ে এনেছে অন্তরা, বাতাসা আর নকুলদানা নিয়ে এসেছে ফারজানা আর ব্রামটন থেকে দু ট্রে তেলের পিঠা বানিয়ে এনেছে রুমানা । ধন্যবাদ দিলেও যে কম হয়ে যায় অনিক, মোস্তফা, খালেদ, সোহাগ, পুলক আর সব কাজ হাসি মুখে করে যাওয়া তুহিনের অবদান।

এবারের পিঠা উৎসবের সব থেকে বড় পাওয়া সবার তৃপ্তির হাসি নিয়ে বাড়ি ফেরা। যেই হাসি আয়োজকদের উৎসাহিত করে তোলে আগামীতে আরো বড় কিছু করবার।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next
0
Share