Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
Chitralee will take you closer to the world of entertainment.
মঙ্গলবার, জুলাই ২, ২০২৪
Your Image

খালিদ- ফেরানো গেল না কিছুতেই

কন্ঠশিল্পী খালিদ । ছবি: ফেসবুক

ভাবা যায়? ১৯৮৩ সাল। রমরমা ব্যান্ডের যুগ। তারুণ্য মানেই ব্যান্ড আর চুল ঝাঁকিয়ে নানা রকমের গান। একদিকে সোলস, রেনেসা, মাইলস, আরেকদিকে সীমানা বড় করা চাইমের যুগ।

সেই সময়ে চাইম ব্যান্ডে যুক্ত হলেন ভোকাল খালিদ। তাকে বলা হতো সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত কণ্ঠের অধিকারী। কেনই বা নয়, তিনি যা গাইতেন তাই যেন হয়ে যেত বিশাল হিট।

প্রিন্স মাহমুদ আর আশিকুজ্জামান টুলুর সাথে জুটি বেঁধে উপহার দিয়েছেন অনেক গান। তবে গানের পাশাপাশি তিনি জনপ্রিয় ছিলেন তার স্টাইলের জন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে তিনি ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়াতেন বলে জানা গেছে। সানগ্লাস চোখে বাইক নিয়ে। বাইক থেকে যখন নামতেন তখন নাকী কোনো হিরোর চাইতে কম ছিলেন না। জানান পার্থ সন্‌জয় নামের গণমাধ্যমকর্মী।

হার্টথ্রব ছিলেন, পোশাকে স্টাইলে অনবদ্য ছিলেন। সেই সময়ে যুগের থেকে একধাপ এগিয়ে। ’গোস্যা না হন ভাইরে ভাই’ গানের সাথে গোটা চাইম ব্যান্ড যখন লুঙ্গি পরে বিটিভিতে পারফর্ম করেন তখনও হৈ চৈ পড়ে যায়। ব্যান্ড আবার লুঙ্গিতে?

গান- পরিবেশ আর আমেজ বুঝে খালিদ কখনো উপহার দিয়েছেন ‘সরলতার প্রতীমা’, ‘কালো মাইয়া কালো বইলা’, ‘যদি হিমালয় ভেঙে দুঃখ আসে’র মত জনপ্রিয় গান।

একজন শ্রোতা খালিদের প্রয়াণের পর স্মৃতিচারণ করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তৎকালীন ছাত্রনেতার প্রেয়সীর অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে যাবার পর তিনি যখন কাঁদছিলেন তখন সারারাত ক্যাসেট প্লেয়ারে খালিদের গান। ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেলো না তাকে, ফেরানো গেলো না কিছুতেই’..

একসময়ের ছোট্ট গায়িকা নওরীন তার স্মৃতি মনে করেন। আলী সুমন এবং শওকত আলী ইমনের ভাগ্নী নওরীন ছেলেবেলায় জনপ্রিয়তা পান ‘নাতি খাতি বেলা গেল’ গেয়ে। আর তা খালিদের কণ্ঠে চাইমের শ্রোতাপ্রিয় গান। তিনি বলেন আমার দুই মামা আলী সুমন এবং শওকত আলী চাইমে থাকার কারণে সব প্র্যাকটিস নয়াপল্টনে আমার নানার বাড়ীতেই হতো। নাতি খাতি বেলা গেল’ সেই ৪/৫ বছর বয়সেই কিভাবে শিখে ফেলেছিলাম আজ আর তা মনেও নাই, কিন্তু খালিদ মামার কণ্ঠে গাওয়া গানটা আমার মাথায় ঢুকে যায়।

খালিদ ও ছোট্ট গায়িকা নওরীন । ছবি: ফেসবুক

একটি ছবি পোস্ট করে বলেন, ছবিটি ১৯৯০/ ১৯৯১ সালের বাম্বা কনসার্টের। আমি তখন ‘নওরীন নাতিখাতি’ হিসেবে পরিচিত। তখন সেখানে যারা দর্শক ছিলেন তারা সবাই মিলে কোলে তুলে আমাকে স্টেজে উঠিয়ে দিয়েছিলেন – খালিদমামা আমাকে নিয়ে নাতিখাতি গাইলেন । ওপারে অনেক ভালো থাকবেন খালিদ মামা।

আলী সুমন স্মৃতিচারণে লিখেছেন- সম্ভবত ৮৮ কিংবা ৮৯ সালের দিকে, আশিকুজ্জামান টুলু, খালিদ সাইফুল্লাহ, টম রহমান, শওকত আলী ইমন, ইকরাম বাবু চৌধুরী, আল আমীন বাবুকে নিয়ে এমনই এক রমজান মাসে আমাদের প্রচন্ড প্র্যাকটিস চলছে বাবুভাইয়ের সেই নাখালপাড়া ড্রাম ফ্যাক্টরির কাছের বাড়িতে, কারণ ঈদের পরই শো’র চাপ। তো বিকেলে আসরের আজান দিলে একটু বিরতি নেই। আজান একটার পর একটা হচ্ছে। আজান যখন শেষ, তখন হঠাৎ একটা অন্যরকম আজান শুরু হলো যেটা শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গেলাম।মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আজানটা শুনতে শুনতে সবাই প্যাডে ঢুকে দেখি স্বয়ং খালিদ ভাই আমাদের স্টুডিও থেকে আজানটা দিচ্ছে। আমার জীবনে শোনা শ্রেষ্ঠ আজান আমি শুনেছি ঐদিন।

খালিদ ও আলী সুমন (বাম থেকে) । ছবি: ফেসবুক

অপূর্ব সুরেলা, নির্ভুল উচ্চারণে খালেদভাই যখন শেষ করলেন, আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। আর খালিদভাই তার সেই মন মাতানো হাসি দিয়ে বললেন, ‘আমি ছোটবেলায় গোপালগঞ্জে আজান দিয়ে গোল্ড মেডেল পেয়েছিলাম’!

এতো বছর পরেও স্টুডিও ছাড়েননি এই ব্যান্ড তারকা।

এহসানুল হক জিয়া জানান, মৃ”ত্যুর একদিন আগেই ইফতেখার ইফতির আদাবর স্টুডিওতে গান রেকর্ড করেছেন তিনি।

বরাবরের মতই একেবারে সহজ সরল জীবনযাপন ছিল খালিদের। ২০১০ সালের পর থেকে সঙ্গীতে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। কিছুদিন দেশের বাইরেও ছিলেন। তবে সম্প্রতি ফিরে আসেন এবং গানেও তিনি নিয়মিত হন। এলিফেন্ট রোডে অবস্থিত জি সিরিজের দপ্তরে আড্ডা দিতে যেতেন। যেখানে ১৬ মার্চেও দেখা তার চিত্রগ্রাহক ইমতিয়াজ আলী বেগ ও কথার যাদুকর প্রিন্স মাহমুদের সাথে। আছে ছবিও। সেই ছবিই যেন স্মৃতি।

গ্রিনরোডেই তার বাসা থাকাতে এলাকার আড্ডায় তাকে পাওয়া যেত নিয়মিত, দেখা যেত রাস্তায় হাঁটতে। উদাসী মনের ভাবুকের মত।

এই গ্রিনরোডেই তিনি ১৮ মার্চ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। জিসিরিজেই কর্মরত আরেক মিউজিশিয়ান রুম্মান তার বাসার সামনে দিয়ে হাঁটার সময় শোরগোল শুনতে পান। গিয়ে দেখেন বুকে পাম্প করছেন খালিদের উপস্থিত স্বজনরা।

তখনই হাসপাতালে আনা হয় তাকে। জানা যায় খালিদ আর নেই। অথচ, সন্ধ্যার পরপর তিনি নিজেই ঔষধ আনিয়ে খেয়েছিলেন।

কে যেতে চায় এই সুন্দর ভুবন ছেড়ে!
সুর- স্বপ্ন বা সাধনা – কিছু না কিছু তো পিছুটানে ডাকবেই।
তবে সেই ডাকে সফল হননি খালিদের কাছের মানুষ।

‘কোন বাঁধনে বাঁধা তো গেলনা তাকে…’ গানটির মতই তিনি বাঁধন ছিঁড়ে চলে গেলেন। আমেরিকা প্রবাসী পুত্র ও স্ত্রী পেলেননা শেষ দেখা। চলে গেলেন মাটির ঘরে।

সংখ্যার দিক থেকে সমসাময়িক শিল্পীদের তুলনায় কম গান করলেও প্রায় সব গানই তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল তার। ‘কোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে’, ‘যদি হিমালয় হয়ে দুঃখ আসে’, ‘যতটা মেঘ হলে বৃষ্টি নামে’, ‘মনে তো পড়ে মন কেঁদেছিল’র মতো অনেক জনপ্রিয় গান রয়েছে এই শিল্পীর।

গোপালগঞ্জে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী ১৯৮১ সাল থেকে গানের জগতে যাত্রা করেন। ১৯৮৩ সালে যোগ দেন ‘চাইম’ ব্যান্ডে।

তার মাধ্যমে ব্যান্ডের স্বর্ণালী যুগ আরেকটি তারা অবিনশ্বর রূপে ঠাঁই পেল মহাজগতিক দোলাচলে।

Share this article
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Read next

জীবনের ৮৫ বসন্তে কিংবদন্তি সৈয়দ আব্দুল হাদী 

১ জুলাই, সোমবার কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদীর ৮৫তম জন্মদিন আজ। ১৯৪০ সালে আজকের দিনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়…
0
Share