চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সংগীতের জীবন্ত কিংবদন্তি রুনা লায়লা। গজল গায়িকা হিসেবেও তার রয়েছে সুখ্যাতি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকে চলচ্চিত্রের গায়িকা হিসাবে কাজ শুরু করে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। গোটা ভারত উপমহাদেশের উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে ২৪ জুন রুনা লায়লা পূর্ণ করলেন তার ক্যারিয়ারের ছয় দশক!
আজকের এই কিংবদন্তি হয়ে ওঠার যাত্রা রুনা লায়লা শুরু করেছিলেন মাত্র বারো বছর বয়সে। সালটা ছিল ১৯৬৪। সেই বছরের ২৪ জুন ‘জুগনু’ সিনেমায় গান গাওয়ার মধ্যদিয়ে সিনেমার গানে পেশাগতভাবে মনোনিবেশ করেন রুনা। তার গাওয়া প্রথম গানের নাম ছিল- ‘গুড়িয়া সি মুন্নি মেরি ভাইয়া কী পেয়ারি’। এই হিসেব অনুযায়ীই আজ তিনি পেশাগতভাবে তার সংগীত জীবনের ষাট বছর পূর্ণ করেছেন।
‘জুগনু’ সিনেমায় গান গাওয়ার পর থেকে রুনা লায়লাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্ণিল ও সাফল্যমণ্ডিত ক্যারিয়ারে বাংলা, উর্দু, পাঞ্জাবি, হিন্দি, সিন্ধি, গুজরাটি, বেলুচি, পারসিয়ান, আরবি, মালয়, নেপালি, জাপানি, স্প্যানিস, ফ্রেঞ্চ, ইতালীয় ও ইংরেজি ভাষাসহ পৃথিবীর মোট ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’, ‘হাম দোনো’, ‘রিশতা হ্যায় পেয়ার কা’, ‘কমান্ডার’, ‘নসীব আপনা আপনা’, ‘দিল অউর দুনিয়া’, ‘উমরাও জান আদা’, ‘দিলরুবা’ ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধের আগেই রুনা লায়লা প্রথম বাংলাদেশের সিনেমায় প্লে-ব্যাক করেন ১৯৭০ সালের ২৯ মে। ঐ বছর মুক্তিপ্রাপ্ত নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘স্বরলিপি’ সিনেমায় রুনার গাওয়া ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি লিখে’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। প্রথম বাংলা প্লে-ব্যাকেই বাজিমাত করেছিলেন তিনি। রুনার গাওয়া গানটিতে লিপসিং করেছিলেন কিংবদন্তি চিত্রনায়িকা ববিতা।
স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৫২ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন রুনা লায়লা। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা এবং মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন সংগীতশিল্পী। তার মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী।
রুনা লায়লা তার দীর্ঘ সংগীত জীবনে ভূষিত হয়েছেন নানা পুরস্কারে। এর মধ্যে স্বাধীনতা ও একুশে পদক সহ আছে সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার মত সম্মান। এছাড়াও নন্দিত এই শিল্পী ভারত থেকে পেয়েছেন সায়গল পুরস্কার। পাকিস্তান থেকে অর্জন করেছেন নিগার, ক্রিটিক্স, গ্র্যাজুয়েটস পুরস্কারসহ জাতীয় সংগীত পরিষদ স্বর্ণপদক। নব্বইয়ের দশকে গিনেস বুকেও স্থান পেয়েছিলেন এই শিল্পী। এছাড়া কেবল গান গেয়েই থেমে থাকেননি রুনা লায়লা, অভিনয়ও করেছেন। তাইতো তিনি হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের অহংকার।
কিংবদন্তি এই শিল্পীর সংগীত জীবনে ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ায় তিনি তার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। পাশাপাশি চেয়েছেন সবার দোয়া। চিত্রালীর পক্ষ থেকেও আজকের এই বিশেষ দিনে রুনা লায়লাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।