-মোঃ অলিউর রহমান-
‘আরে আমি তো পানি কিনি, পানি, দুধ দিয়া খাইবা না খালি খাইবা বাজান’ বিখ্যাত এই সংলাপটি কার মনে আছে?
সংলাপটি সেরাজ তালুকদারের। নাটকের চরিত্র- সেরাজ তালুকদার। ১৯৮৩ সালে সেলিম আল দীনের রচনায় নির্মিত ‘ভাঙনের শব্দ শুনি‘ নাটকটির এই চরিত্র সেই সময়ে একজনকে জনপ্রিয় করে তোলে। তিনি হুমায়ুন ফরিদী।
মঞ্চের যবনিকা থেকে রূপালি পর্দার দাপুটে এই অভিনেতাকে চিত্রালী স্মরণ করছে তার জীবনের নানা অধ্যায় দিয়ে।
হুমায়ুন ফরিদী ১৯৬৪ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে কিশোরগঞ্জের মহল্লার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ অভিনয় করার মাধ্যমে নিজের অভিনয়জীবন শুরু করেন।
ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তিনি তার স্কুলে ‘ভূত’ নামক একটি নাটকের নির্দেশনা দেন।
তার অভিনীত প্রথম টিভি নাটকের নাম ‘নিখোঁজ সংবাদ‘।
হুমায়ুন ফরিদী ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি খাতা কলম ফেলে দেশের জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নেন।
স্বাধীনতার পর অভিনেতা অর্থনীতিতে স্নাতক করার জন্য ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে স্নাতক সম্মান পরীক্ষা পাস করেন।
১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সেলিম আল দীনের উদ্যোগে একটি নাট্য উৎসব শুরু হয়। এই উৎসবে ফরিদীর রচনায় এবং নির্দেশনায় ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামক একটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাটকটি উৎসবের সেরা নাটক হিসেবে নির্বাচিত হয়। মূলত এই নাটকই তাকে দেশের নাট্যাঙ্গনে পরিচিত মুখ করে তোলে।
হুমায়ুন ফরিদী অভিনীত প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রের নাম ‘হুলিয়া’। চলচ্চিত্রটি তানভীর মোকাম্মেল পরিচালনা করেন।
তিনি ২০০৪ সালে ‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
২০১৮ সালে হুমায়ুন ফরিদীকে নৃত্যকলা ও অভিনয় শিল্পের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করেন।
তিন দশক ধরে অভিনয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও অনেকেই মনে করেন ‘সংশপ্তক‘ নাটকের ‘কানকাটা রমজান’ তার অভিনয় জীবনের সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র।
আজ তার জন্মদিনে তার হাজারো অনুরাগীর মত চিত্রালীও তাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।