২১ ডিসেম্বর, বছরের সবচেয়ে বড় রাতে হয়ে গেল ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ শিরোনামের একটি কনসার্ট। এই কনসার্টের মূল আকর্ষণ ছিলেন উপমহাদেশের শ্রোতাপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান।
এই কনসার্ট নিয়ে নানা জল্পনা তো ছিলই। তবে কেমন ছিল কনসার্টটি? জেনে নেওয়া যাক এই ফিচারের মাধ্যমে।
পরিকল্পিত ট্রাফিক ব্যবস্থা:
বিগত কয়েকটি কনসার্টে যান চলাচল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুনতে হয় আয়োজককারীদের। “ইকোস অব রেভল্যুশন” আয়োজনের ক্ষেত্রে সেজন্য আগে থেকেই নেওয়া হয় পূর্ব প্রস্তুতি। আর্মি স্টেডিয়াম তথা ভেন্যুর সামনে যান চলাচল যেন বিঘ্ন সৃষ্টি না করে, একারণে শুধুমাত্র ২১ তারিখের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে সকল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এবং টোল ফ্রি করে দেওয়া হয়। এয়ারপোর্ট, বিমানযাত্রী এবং ইমারজেন্সির জন্য জাহাঙ্গীর গেট থেকে ক্যান্টনমেন্ট দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই কনসার্টের ভেন্যুতে সময়মতো – পৌঁছে গেছেন। তবে ফেরার পথে দীর্ঘ ট্রাফিক দেখা গেছে কনসার্ট-ফিরতি দর্শকের ঢলের কারণে। রাস্তা ব্যবহারের বিশেষ সুবিধা কয়েকঘণ্টার জন্যেই সীমিত ছিল।
নিয়ন্ত্রিত প্রবেশ পথ:
২১ ডিসেম্বরের কনসার্টের মূল আয়োজনের প্রবেশ পথে বিগত কিছুদিনের মত কোনও বাড়তি বিপত্তি দেখা যায়নি। একাধিক প্রবেশ পথ হওয়াতে নির্বিঘ্নে দর্শক মূল ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পেরেছে। তাতে দর্শক সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আজিমপুর থেকে আগত আনিকা জানান, তার পরিবার তাকে আসতে দিতে চায়নি। কয়েকটি কনসার্টে জামেলা হয়েছে বলে। তিনি বলেন, এই কনসার্টের কারণে হয়তো পরিবার আশ্বস্ত হবে যে – কনসার্টে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
স্টেডিয়ামের ভরা সুর আর আলোর খেলা:
স্টেডিয়ার পরিপূর্ণ ছিল দর্শকদের উচ্ছলতায়। তারা আর্টসেলের গানের সাথে যেমন নেচেছে, আবার রাহাত ফতেহ আলী খানের তালে তেমন গেয়েছে। আবার কখনো শহীদদের স্মরন করে মোবাইলে আলো জ্বেলে গোটা আকাশের তারাকে মাঠে সাজিয়েছে। বিভিন্ন বয়সী বন্ধুদের এখানে একসাথে দেখা গেছে। যেমন খিলগাও অধিবাসী চল্লিশার্ধো মুবিন তার ছয় বন্ধু নিয়ে এসেছেন কনসার্ট উপভোগ করতে। তিনি চিত্রালীকে জানান, ‘এতোদিন ধরে যা শুনেছি কনসার্টে বিশৃঙ্খলা নিয়ে- তার কিছুই আজ চোখে পড়লো না। তরুনরা তাদের মত আছে। অন্যকে বিরক্ত করছে না। সব প্রজন্ম তো আর একইভাবে উপভোগ করবে না।’
এই কনসার্টের খরচের খাতা:
রাহাত ফতেহ আলী খান আগেই জানিয়েছিলেন, এই কনসার্টে তিনি কোনও পারিশ্রমিক নেবেনে না। শুধু তিনি নন, এই কনসার্টে পারিশ্রমিক নেননি কোনও শিল্পী। যারা পারফর্ম করেছেন তারা সকলেই জুলাই স্পিরিটের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে পারফর্ম করেছেন। বিকেলে সিলসিলার কাওয়ালি পরিবেশনা দিয়ে কনসার্ট শুরু হয়। এরপর মঞ্চে আসেন র্যাপার হান্নান ও সেজান। জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি তখন র্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উডা’ ও সেজানের ‘কথা ক’ গান দুটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। সাড়ে পাঁচটার দিকে মঞ্চে ওঠে রক ব্যান্ড আফটারম্যাথ। এরপর চিরকূট- আর্টসেল ও সর্বশেষে মঞ্চে আসেন ওস্তাদ রাহাদ ফতেহ আলী খান। এছাড়াও ভেন্যু কর্তৃপক্ষ কোনও ভাড়া নেয়নি। জুলাই স্মরণে তারা সকলেই ছাত্র-জনতার জন্য একাত্ম হয়ে কাজ করেছেন।
মাঠের ব্যবস্থাপনা:
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাঠের ভেতর শৃংখলা সন্তোষজনক ছিল। খাবার ও পানির আয়োজন পর্যাপ্ত ছিল বলে জানায় উপস্থিত দর্শকরা। মিরপুরের সাগর জানায়, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এসে উপভোগ করছেন। এছাড়াও ব্যাকস্টেজে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।
উপস্থাপক সমাচার:
জুলাই স্পিরিটকে ধারন করে উপস্থাপক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন দীপ্তি চৌধুরী এবং যমুনা টেলিভিশনের পরিচিত মুখ জুবায়ের। তারা বার বার শ্লোগনে ব্যস্ত রাখেনে মাঠের দর্শকদের।
রাতের যবনিকা:
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে মঞ্চ ফাঁকা হলে দর্শকের ঢল নামে রাস্তায়। দীর্ঘপথ হেটে গেলেও কেউ গাচ্ছিলেন গান, কেউ উপবোগ করছিলেন শীতের কুয়াশা। তবে বিগত কয়েকটি ঘটনার মত কাউকে বিব্রত হতে দেখা যায়নি। বরং এমনই আরও সুরেলা রাতের অপেক্ষা করছেন হাজার হাজার মানুষ, যারা শান্তি-সুর এবং ছন্দের জীবন কাটানোর আকাঙ্খায় খুঁজে নেন ছোট ছোট এমন সুখের মুহুর্ত।
এই কনসার্টটির ইভেন্ট পরিচালনায় ছিল স্কাই ট্র্যাকার। এবং এর আয়োজন করে, স্পিরিটস অব জুলাই প্ল্যাটফর্ম।