এবারই প্রথম কোন ইরাকি কোনো সিনেমা কান চলচ্চিত্র উৎসবের মূল প্রতিযোগিতায় জায়গা পেয়েছে। এই সিনেমা দিয়ে প্রথমবারেই কানে ইতিহাস গড়ল ইরাক। সিনেমাটি জিতে নিয়েছে “ক্যামেরা ড’অর পুরস্কার”। সিনেমাটির নাম ‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’। সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন নির্মাতা হাসান হাদি।
পুরস্কার জেতার পরে হাসান হাদি বলেন, ‘এই পুরস্কার আমি উৎসর্গ করছি পৃথিবীর সেই শিশুদের, যারা যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা আর স্বৈরতন্ত্রের মধ্যেও ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও আনন্দ খুঁজে নিতে জানে। তোমরাই আসল নায়ক’।
প্রায় ২৫ বছর ইরাক শাসন করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন। দেশের জনগণের চোখে তিনি ছিলেন প্রতাপশালী শাসক। দেশজুড়ে ছিল যার একক আধিপত্য ছিল। যে কারণে এই প্রেসিডেন্টের জন্মদিন মানেই বিশাল কাণ্ড। দেশজুড়ে চলত নানা আয়োজন। তেমনই এক জন্মদিনের আয়োজন উপলক্ষে প্রেসিডেন্টের জন্য কেক বানানোর গল্প নিয়ে ১ ঘণ্টা ৪২ মিনিটের এই সিনেমা।
সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন ৯ বছর বয়সী লামিয়া, সাদ্দাম হোসেনের জন্মদিন উপলক্ষে যাকে একটি কেক বানানোর দায়িত্ব দেয় তার স্কুলের শিক্ষিকা। কাজটি করতেই হবে, ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা। সাধারণ এই কাজই একসময় লামিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। চ্যালেঞ্জিং হওয়ার বেশ কারণ রয়েছে।
৯ বছরের লামিয়া শুরুতে কেক বানানোর মতো কঠিন কাজ করতে চায় না। একসময় শিশুটির ওপর কেক বানানোর দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়। কথা না শুনলে কারাগারে বন্দী করা বা মৃত্যুদণ্ডের মতো ভয় দেখিয়ে শিশুটিকে কেক বানানোয় রাজি হতে বাধ্য করা হয়। পরে লামিয়া বুঝতে পারে যে কেক বানানোর বেশির ভাগ উপকরণই সেই প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাওয়া যায় না। এই কেক শিশুটির জীবনটাই এলোমেলো করে দেয়। এভাবেই ‘দ্য প্রেসিডেন্টস কেক’ সিনেমায় উঠে এসেছে ইরাকের প্রত্যন্ত এলাকার এক মানবিক গল্প।
নির্মাতা হাদি ভ্যারাইটির সাথে আলাপকালে বলেন, ৯০ দশকে তিনি দক্ষিণ ইরাকের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন। সে সময় তিনি দেখেছেন খাদ্যসংকট। গ্রামের মানুষেরা দুর্বিসহ দিন পার করত। বিলাসিতা বলতে তাদের কাছে ছিল খেয়ে বেঁচে থাকা। সে সময়ে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার কারণে সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে হাদি বলেন “বিশ্বের ইতিহাসে, এমন কোনও সময় আসেনি যখন তারা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কিন্তু রাষ্ট্রপতি খেতে পায়নি।”
ফিল্মমেকার ম্যাগাজিনে হাদি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি তখন স্কুলে পড়ি। তখন সবাই ছিলেন সাদ্দামের কট্টর সমর্থক। এই মানুষেরা যা বলবেন, সেটাই শুনতে হতো। তো, একবার স্কুলে এসে কয়েকজন বললেন, “সবাই ক্লাসরুম থেকে বের হও, সাদ্দাম হোসেনের জন্য দোয়া করতে হবে’। সাদ্দামের হোসেনের জন্য কোনো কিছুতে ‘না’ বলা আর বুলেট বহন করা একই কথা। ‘না’ বললে নানাভাবে শাস্তি দেওয়া হতো। সেই সময়কেই আমি তুলে ধরেছি। আমি সিনেমায় রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিটাই দেখিয়েছি। এখানে গায়ে পড়ে স্বৈরশাসক সাদ্দামকে দোষী বানানো হয়নি’।
এই কান জয়কে হাদি “অপ্রতিরোধ্য ও উত্তেজনাপূর্ণ” বলে মন্তব্য করেন। ইরাক সিনেমার ভবিষৎ নিয়ে হাদি বলেন, “আমরা একটি উদীয়মান শিল্পের মধ্যে আছি। এখনও অনেক কিছু করার আছে, অনেক শিল্পী আসছেন এবং আমি সিনেমার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।”