দুই বাংলার শ্রোতাপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কবীর সুমন। সংগীতশিল্পী ছাড়াও তার অনেক পরিচয়। একাধারে তিনি একজন গায়ক, গীতিকার, অভিনেতা, বেতার সাংবাদিক, গদ্যকার এবং সংসদ সদস্য। যদিও গানের মানুষ হিসেবেই তিনি দর্শকদের কাছে বেশি পরিচিত। অসুস্থতাজনিত কারণে কিছুদিন আগে হাসপাতালে দিন কাটাতে হলেও সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন তিনি। এরপর ‘গানওলা’ গানে গানেই এবছরের ১৬ মার্চ উদযাপন করেছেন তার ৭৫তম জন্মদিন।
১৬ মার্চ জন্মদিন পালন হয়ে গেলেও ২৫ মার্চ কবীর সুমন আবারও চর্চায় আসেন জন্মতিথি নিয়ে। কেননা এদিন সকালে এই গায়ক তার অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন। যেখানে তিনি লেখেন, ‘আজ দোল পূর্ণিমা। সৌমী আর আমার জন্মতিথি।’
কবীর সুমনের স্ট্যাটাসে বেশির ভাগ নেটিজেনদের শুভ কামনা জানাতে দেখা গেলেও অনেকেই আবার অবাকও হয়েছেন গায়কের ‘জন্মদিন’ ও ‘জন্মতিথি’ নিয়ে। সকলের বিভ্রান্তি দূর করেছেন ‘গানওলা’ নিজেই। একই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করেন সুমন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘জন্মতিথি। মা বলেছিলেন আমি জন্মেছিলাম দোল পূর্ণিমা তিথিতে। আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডারের হিসেবে সেদিন ছিল ১৬ ই মার্চ। আজ দোল পূর্ণিমা। আমার জন্মতিথি। আমার আদরের সৌমীরও।’
অর্থাৎ আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার অনুসারে ১৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করলেও দোল পূর্ণিমা তিথির হিসেবে তার জন্মতিথি হলো দোল পূর্ণিমার দিন।
উল্লেখ্য যে, কবীর সুমনের পূর্বনাম সুমন চট্টোপাধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর নির্মাণের তহবিল সংগ্রহের জন্য ফ্রি কনসার্ট করতে ১৯৯৬ সালে তার প্রথম বাংলাদেশে আসা। এরপর থেকে নিয়মিত এদেশে আসা-যাওয়া তার। ২০০০ সালে বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন তিনি। ভালোবাসার জন্য অন্যদেশের মানুষ ও তার ধর্মকে আপন করে নেওয়ার এই দৃষ্টান্ত এক কথায় অসাধারণ। তিনি ভারতে থাকলেও নাম কবীর সুমনই ব্যবহার করছেন সেই থেকে।
শুধু মনের মানুষ নয়। বাংলাদেশকেই কবীর সুমন আপন মনে করেন। কলকাতার এক মঞ্চে গান গাইতে গিয়ে অসম্মানবোধ করায় ঘোষণা দিয়েছেন এরপর মঞ্চে গাইলে গাইবেন শুধু বাংলাদেশে। কারণ কলকাতার শ্রোতাদের তার কাছে অমনোযোগী মনে হয়েছিল। এক সাক্ষ্যাৎকারে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে কেউ আমাকে অপমান করেনি। গাওয়ার সময় একটা ফোনও বাজেনি, একটা কথাও হয়নি। তাই গান গাইলে বাংলাদেশে গাইব, ভারতে নয়। বাংলাদেশ যেদিন বলবে আমি সেদিনই ছুটে যাব, গাইব।’
সেই অনুষ্ঠানে কবীর সুমন আরও বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি প্রয়োজন হয়, ডাকলেই আমি সবসময় থাকব। আমার খুব আশা, বাংলাদেশ সরকার বাংলা খেয়াল নিয়ে কিছু করবে। যদি বাংলাদেশ সরকার কিছু করে, তবে আমার খুব আনন্দ হবে। এই আনন্দ নিয়ে মরতে দিন বুড়োটাকে।’
৭৫ বছর বয়সী চীর তারুণ্যের এই গায়ক রাজনীতিতেও ছিলেন সক্রিয়। একসময় তিনি তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। সামান্য মনোমালিন্যের কারণে সক্রিয় রাজনীতি থেকে নিজেকে খানিকটা গুটিয়েই নিয়েছিলেন। বাংলা খেয়ালেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। তবে মমতা ব্যানার্জির জন্যে আবার গানও লিখেছেন।
এদিকে ক্যারিয়ারে অসাধারণ সব গান উপহার দিয়ে এপার-ওপার দুই বাংলাতেই সমানভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন কবীর সুমন। তার উল্লেখযোগ্য গানের অ্যালবামের মধ্যে রয়েছে ‘তোমাকে চাই’, ‘বসে আঁকো’, ‘ইচ্ছে হল’, ‘গানওলা’, ‘ঘুমাও বাউণ্ডুলে’, ‘গানওলা ঢাকায়’ ইত্যাদি।
লেখা: রাহনামা হক