আজ ৬ ফেব্রুয়ারি কিংবদন্তী চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক কুমার ঘটকের ৪৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৬ সালের এই দিনে পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেন এই কিংবদন্তি পরিচালক। ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকার ২, হৃষিকেশ দাশ রোডের ঝুলন বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা সুরেশ চন্দ্র ঘটক ছিলেন ঢাকার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। মাতা ইন্দুবালা দেবী ছিলেন রাজশাহীর মেয়ে। সে কারণে তার শৈশবের পুরোটা সময়ই কেটেছে পদ্মা নদীর কোলে।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে তিনি ভারতের পশ্চিম বঙ্গের কলকাতায় চলে যান। তবে জন্মভূমি ত্যাগ করে শরণার্থী হওয়ার মর্মবেদনা ঋত্বিক কোনোদিন ভুলতে পারেননি। আমৃত্যু এই যন্ত্রণা বয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। তার প্রতিটি শিল্পকর্মে তার ছাপ রয়ে গেছে। একসময় কলকাতায় ভারতীয় নাট্য সংঘ আইপিটিএ তে যোগ দেন সাথে রাজনীতিতে দীক্ষা নেন- যোগ দেন কমিউনিস্ট পার্টি সিপিআই তে।
নিমাই ঘোষের ‘ছিন্নমূল’ সিনেমার মধ্যে দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন ঋত্বিক। এই সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি সহকারি পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি।
১৯৪৮ সালে তার লেখা প্রথম নাটক ছিলো ‘কালো সায়র’। এ সময় তিনি বেশ কিছু নাটক লেখেন, অভিনয় করেন ও নির্দেশনা দেন।
ঋত্বিক ঘটকের পরিচালিত প্রথম সিনেমা ‘নাগরিক’। এটি নির্মাণের পাঁচ বছর পর ১৯৫৭ সালে ঋত্বিক ঘটক নির্মাণ করেন তার দ্বিতীয় সিনেমা ‘অযান্ত্রিক’। এটি মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চমকে যায় চলচ্চিত্র বোদ্ধা আর দর্শকেরা। এই সিনেমা দিয়েই তিনি সফল চলচ্চিত্রকার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
‘অযান্ত্রিক’ এর পর ১৯৬০ সালে ঋত্বিক নির্মাণ করেন তার আরেক অমর সৃষ্টি ‘মেঘে ঢাকা তারা’।
ক্রমেই নির্মান করেন ‘কোমল গান্ধার’ (১৯৬১) ও ‘সুবর্ণরেখা’ (১৯৬৫) র মতো সিনেমা। ১৯৭২ সালে তার মাতৃভূমি বাংলাদেশে এসে নির্মাণ করেন আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘তিতাস একটি নদীর নাম’। এটি বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়। অদ্বৈত মল্লবর্মণের ধ্রুপদী উপন্যাস থেকে নেয়া এ সিনেমাটি দিয়ে তিনি পেয়েছিলেন ব্যাপক প্রশংসা।
১৯৭০ সালেই ঋত্বিককে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়। একই বছর তিনি ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ স্বর্ণপদক লাভ করেন। এরপর ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় ঋত্বিকের শেষ সিনেমা ‘যুক্তিতক্ক আর গপ্পো’। এটি মূলত তার আত্নজীবনী। সে বছর ‘যুক্তি তক্কো আর গপ্পো’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ গল্পকার হিসেবে ঋত্বিক ঘটক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে রজত কমল পুরস্কার অর্জন করেন।
সবমিলিয়ে, মাত্র ৮টি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা নির্মান করেই তিনি হয়ে উঠেন ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের কাছে বিশেষত বাংলার সিনেমাপ্রেমী ও বোদ্ধাদের অন্যতম চলচ্চিত্র অনুপ্রেরণা। এছাড়া একাধিক শর্ট ফ্লিম ও তথ্যচিত্রও নির্মাণ করেন তিনি।
জীবনের শেষ সময়ে এসে ঋত্বিক কুমার ঘটক মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। প্রায় তিন বছর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে মারা যান তিনি।