দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের তারকাশিল্পী শাফিন আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি পারিবারিকভাবে পালন করা হচ্ছে। সন্ধ্যায় মিলাদের সঙ্গে কবর জিয়ারত করতে যাবে তার পুরো পরিবার।
শাফিন আহমেদের বড় ছেলে আজরাফ আহমেদ অজি গণমাধ্যমকে জানান, ‘বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর সব আয়োজন নিজেদের মধ্যে করছি। সন্ধ্যায় মিলাদ ও কবর জিয়ারতে যাব। সব সময় তো তাঁকে মিস করি, তবে আজ যেন সারা দিন ধরেই বাবার স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে।’
অজি আরো বলেন, ‘গত এক বছরে প্রতিটি দিনই বাবার অভাবটা আরও বেশি করে টের পেয়েছি।“
গতবছরের ২০ জুলাই আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে তার দ্বিতীয় স্টেজ শোতে অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অনুষ্ঠানের আগে হোটেলে অচেতন হয়ে পড়েন। সেখানেই হার্ট অ্যাটাক করেন তিনি। তখনই হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।
তবে হাসপাতালে নেয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে কিছুটা ভালো অনুভব করেন শাফিন। কিন্তু রাত সাড়ে তিনটার দিকে আবার হার্ট অ্যাটাক হয়। ৫-৭ মিনিট একেবারে অচেতন ছিলেন। এরপর সিপিআর করে তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হয়। সিপিআর শেষে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। কিন্তু তিনি আর দর্শকের সামনে আসতে পারেননি।
বাংলা সংগীতের দুই মহারথি সুরকার কমল দাশগুপ্ত ও সংগীতশিল্পী ফিরোজা বেগমের ছেলে শাফিন নিজে ছিলেন বেজ গিটারিস্ট, সুরকার ও গায়ক। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত আর মায়ের কাছে নজরুলগীতি শিখেছেন। ফরিদ রশিদের হাত ধরে ১৯৭৯ সালে বড় ভাই হামিন আহমেদের সঙ্গে মিলে গড়ে তোলেন ব্যান্ড ‘মাইলস’। প্রথম কয়েক বছর তারা বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে ইংরেজি গান গাইতেন।
এরই মধ্যে প্রকাশিত হয় দুটি ইংরেজি গানের অ্যালবাম ‘মাইলস’ ও ‘আ স্টেপ ফারদার’। পরে মাইলসের বাংলা গানের প্রথম অ্যালবাম ‘প্রতিশ্রুতি’ বের হয় ১৯৯১ সালে। ওই অ্যালবামের জনপ্রিয়তার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিভিন্ন গানের অনুষ্ঠানে দেখা যেতে থাকে মাইলসকে। ধীরে ধীরে মাইলস দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যান্ডে পরিণত হয়।
২০২১ সালে মাইলস থেকে আলাদা হয়ে শাফিন আহমেদ গড়ে তোলেন ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামে তার নিজস্ব একটি ব্যান্ড। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরেও তিনি একবার ব্যান্ডটি ছাড়ার কয়েক মাস পর দ্বন্দ্ব ভুলে আবার ব্যান্ডে ফিরেছিলেন। ২০১০ সালের শুরুর দিকেও একবার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়ানোর কয়েক মাস পর ব্যান্ডে ফেরেন।
মাইলসের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘ফিরিয়ে দাও’, ‘চাঁদ তারা সূর্য’, ‘প্রথম প্রেমের মতো’, ‘গুঞ্জন শুনি’, ‘সে কোন দরদিয়া’, ‘ধিকি ধিকি’, ‘পাহাড়ি মেয়ে’, ‘নীলা’, ‘কী জাদু’, ‘কতকাল খুঁজব তোমায়’, ‘পিয়াসী মন’, ‘বলব না তোমাকে’, ‘জাতীয় সংগীতের দ্বিতীয় লাইন’ ও ‘প্রিয়তমা মেঘ’ উল্লেখযোগ্য।