আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে আসছে চলচ্চিত্রকার জাহিদুর রহিম অঞ্জনের মরদেহ। বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ভারতের বেঙ্গালুরু থেকে ঢাকায় আনা হবে তাকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বেঙ্গালুরুরের একটি হাসপাতালে মারা যান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই পরিচালক।
জাহিদুর রহিম অঞ্জনের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার বাদ জোহর জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে জাহিদুর রহিম অঞ্জনের মরদেহ নেওয়া হবে তার কর্মস্থল স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। সেখান থেকে বাংলাদেশ সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েক জায়গায় অঞ্জনের মরদেহ নেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে লিভারের সমস্যায় ভুগছিলেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন। গত কয়েক মাস ভারতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। সবশেষ তিনি ভর্তি হন বেঙ্গালুরুর একটি হাসপাতালে। গত সপ্তাহেই তার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রোপচারের পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। সে সময় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই গুণী নির্মাতা।
নির্মাতা হাসান মাসুদ উজ্জ্বল অঞ্জন স্মরণে লিখেছেন, ‘অঞ্জনদার সঙ্গে আড্ডা হতো বিসিটিআইতে ক্লাস নিতে গিয়ে। দেশে তো ফিল্মমেকারের অভাব নাই, ফিল্ম কালচার বোঝা ফিল্ম মেকারের অনেক বেশি অভাব। অঞ্জনদা চলে গিয়ে অভাবটা বাড়িয়ে দিলেন। শান্তিতে থাকুন, অঞ্জনদা’।
চলচ্চিত্র সমালোচক ও শিক্ষক ফাহমিদুল হক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘অঞ্জনদা খুচরো কথার মাধ্যম ফেসবুকে এসে বিশুদ্ধ আর্ট ফর্ম নিয়ে আলাপ করতেন। খুবই বিরল ঘটনা। তার টাইমলাইনে ঘুরলে দেখতে পাবেন, তিনি তারকোভস্কি, ঋত্বিক বা ব্রেসোঁ নিয়ে লিখছেন বা তাদের কথা উদ্ধৃতি আকারে তুলে ধরছেন’।
২০১৪ সালে উপন্যাসিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্প ‘রেইনকোট’ অবলম্বনে জাহিদুর রহিম অঞ্জন নির্মাণ করেছিলেন ‘মেঘমল্লার’ সিনেমা। এটি ছিল তার প্রথম ফিচার ফিল্ম। এই ছবির জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এর আগে আন্তন চেকভের গল্প অবলম্বনে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মর্নিং’ নির্মাণ করেছিলেন অঞ্জন। এটি ছিল তার প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা। কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হয় ছবিটি।
২০০৭ সালে বাঙালি চিন্তাবিদ অতীশ দীপঙ্করের জীবনী নিয়ে তিনি নির্মাণ করেন ‘শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর। জাহিদুর রহিম অঞ্জন ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে চলচ্চিত্র বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এ ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে পড়াতেন তিনি। অঞ্জন বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি এই ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
এছাড়াও সরকারি অনুদানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাস অবলম্বনে ‘চাঁদের অমাবস্যা’ নির্মাণ করেন তিনি। ছবির পোস্টারও ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। গত বছর ছবিটি মুক্তির পরিকল্পনা থাকলেও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে মুক্তি দিতে পারেননি তিনি। তবে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির কাছে সিনেমাটি বিক্রি করেছেন বলে এর আগে জানিয়েছেন এই নির্মাতা।