ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদযাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফ ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রা’ আগুনে পুড়ে গেছে।
আজ ১২ মার্চ সকালে চারুকলা অনুষদে সরেজমিনে দেখা যায় অনুষদের যেখানে মোটিফ তৈরির কাজ চলছিল, সেখানে আগুন লেগে এগুলো পুড়ে গেছে। আগুনে দানবীয় ফ্যাসিবাদী মুখাকৃতির মোটিফটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে। শান্তির পায়রা মোটিফটিও আংশিক পুড়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্যাপনের জন্য বানানো দুটি মোটিফে আগুন লাগার ঘটনা রহস্যজনক বলছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ বলছে, তারা আজ শনিবার ভোর ৫টা ৪ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায়। পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট ৫টা ২২ মিনিটে আগুন নিভিয়ে ফেলে।
কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা জানতে চাইলে সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্যাপনের জন্য অনেকগুলো মোটিফ সেখানে রয়েছে। এর মধ্যে কেন শুধু দুটি মোটিফে আগুন লেগেছে, সেটি রহস্যজনক।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান শিকদার বলেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত না করে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়। তদন্ত করে আগুন লাগার রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে। এদিকে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, নববর্ষের শোভাযাত্রা উদ্যাপনের জন্য অনেকগুলো মোটিফের মধ্যে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রায়’ কীভাবে আগুন লাগল, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ শুরু করেছে।
এদিকে আজ সকালে চারুকলা অনুষদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নববর্ষের শোভাযাত্রা উপলক্ষে বানানো ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতির মোটিফটি কে বা কারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এ জন্য তারা দুঃখ প্রকাশ করেছে।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মোটিফ পুড়ে যাওয়া নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘হাসিনার দোসররা গতকাল ভোররাতে চারুকলায় ফ্যাসিবাদের মুখাবয়ব পুড়িয়ে দিয়েছে। এই দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে- সফট আওয়ামী লীগ হোক বা আওয়ামী বি টিম হোক- তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় আসতে হবে, দ্রুত। এই শোভাযাত্রা থামানোর চেষ্টায় আওয়ামী লীগের হয়ে যারা কাজ করছে, আমরা শুধু তাদের আইনের আওতায় আনব তা না, আমরা নিশ্চিত করতে চাই এবারের শোভাযাত্রা যেন আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হয়।’
তিনি আরো লেখেন, ‘কালকে রাতের ঘটনার পর হাসিনার দোসররা জানিয়ে দিয়ে গেল, বাংলাদেশের মানুষ এক হয়ে উৎসব করুক তারা এটা চায় না।
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এবার নববর্ষের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারকার প্রধান মোটিফ ছিল ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’। এটির উচ্চতা ২০ ফুট। এই মোটিফে বাঁশ ও বেত দিয়ে দাঁতাল মুখের এক নারীর মুখাবয়ব বানানো হয়। মাথায় খাড়া চারটি শিং, হাঁ করা মুখ, বিশালাকৃতির নাক ও ভয়ার্ত দুটি চোখ। এটিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হিসেবে ধারণা করেছিলেন অনেকে।