-মোঃ অলিউর রহমান-
৫ জুন পপগুরু আজম খানের প্রয়াণ দিবস।
আজম খান যেমন সঙ্গীতের মাধ্যমে বিদেশকে দেশে এনেছিলেন, ঠিক তেমনি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকেও বিদেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। আজ চিত্রালীর পাঠকদের জন্য রয়েছে তার সেই অপারেশনের গল্প- যে গল্পটি ছিল সত্যি আর যার কারণেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বদরবারে পরিচিতি পায়।
তার আগে মুক্তিযুদ্ধে তার যোগ দেওয়ার পেছনে আসল কারণটি জানা যাক।
রাজধানীর আজিমপুরে ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া আজম খান পঞ্চাশের দশকের শেষভাগে সপরিবারে কমলাপুরে চলে আসেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং এ সময় প্রায়ই তিনি আব্দুল লতিফের গাওয়া গণসঙ্গীত পরিবেশন করতেন।
২৫ শে মার্চের পর যখন পাড়ায় পাড়ায় হানাদার বাহিনীর হামলা শুরু হল, তখন একদিন তার বাড়িতেও অস্ত্র নিয়ে হাজির হলো পাক বাহিনী। তার বাবা আফতাব উদ্দিন খান তখন সচিবালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন। পাক বাহিনী ছেলেকে যখন খুঁজতে আসে তখন দুই রাকাত নামাজ পড়ার মিনতি করেন আফতাব উদ্দিন। তাকে সেই সময় নামাজ পড়তে দেওয়া হয়। কিন্তু কাউকে না পেয়ে আজমের মা-বোন-বাবাকে তিরস্কার করে চলে যায় হানাদার বাহিনী।
পুরো ঘটনা শুনে মনে প্রচণ্ড জেদ চেপে যায় আজম খানের। যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তার বাবা তখন তাকে বলেন দেশ স্বাধীন না করে তিনি যেন ঘরে না ফেরেন।
তার পরিবারের অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তিনি গিটার ছেড়ে দেশের জন্য হাতে অস্ত্র পায়ে হেঁটে কুমিল্লা বর্ডার পেরিয়ে ত্রিপুরার আগরতলা হয়ে প্রশিক্ষণ নিতে চলে যান মেলাঘর নামের এক শিবিরে।
দুই মাস প্রশিক্ষণ নেন মেজর এটিএম হায়দারের কাছে।
এরপরের অধ্যায়ের নাম- ‘অপারেশন তিতাস’।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিদেশে যুদ্ধের খবর পৌঁছে দেওয়া। আজম খান মূলত যাত্রাবাড়ী- গুলশান এলাকার অপারেশনগুলো পরিচালনা করতেন। তখনই তিনি ‘অপারেশন তিতাস‘-এর নেতৃত্ব দেন। তাদের পরিকল্পনা ছিল ঢাকার কিছু গ্যাস পাইপলাইন ধ্বংস করার মাধ্যমে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, হোটেল পূর্বানীর গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটানো।
তাদের উদ্দেশ্য ছিল একটাই আর তাহলো ঐ সকল হোটেলে অবস্থানরত বিদেশিরা যাতে বুঝতে পারে যে দেশে একটা যুদ্ধ চলছে।
ছবি: ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আজম খান
তার এই অপারেশনের ফলে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকেরা জানতে পারেন ঢাকার যুদ্ধের প্রকৃত অবস্থা।
যুদ্ধের প্রথমে তিনি কুমিল্লার সালদা নদীতে সাঁতরে যুদ্ধে অংশ নেন।
সালদা নদীর পানিতে দীর্ঘসময় ডুবে থেকে সাঁতরে অস্ত্রবাহী নৌকা পারাপারের ফলে তার শরীরে জ্বর চলে আসে। তার গেরিলা দল ‘ক্র্যাক প্লাটুন’ মাদারটেকের কাছে ত্রিমোহনীতেও পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে।
যুদ্ধের এক পর্যায়ে তার ছোটভাই খোকাকে যখন হানাদার বাহিনী ধরে নিয়ে যায়, তখন তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে তাকে উদ্ধার করেন।
এই যুদ্ধেই আজম খান তার বাম কানে আঘাতপ্রাপ্ত হন। যার কারণে পরবর্তীকালে তার শ্রবণক্ষমতায় বিঘ্ন ঘটে।
এইত গেল যুদ্ধে তার ভূমিকার কথা। তার চলে যাওয়ার এক যুগ হলেও তার হাজারও ভক্তের মত চিত্রালীর কাছেও তিনি চির অমর হয়ে থাকবেন।