ত্রিশ বছর আগে, যে হাসপাতাল থেকে চিরবিদায় নিয়েছিলেন উত্তম, সেই একই হাসপাতাল আর একই কেবিন থেকেই চিরবিদায় নিলেন সুচিত্রাও। মৃত্যুতেও কী আশ্চর্য জুটি দু’জনের।
সুচিত্রার উত্তম, কিংবা উত্তমের সুচিত্রা। যেভাবেই বলা হোক, মহাকালের যতিচিহ্ন টেনেছেন এই চিরসবুজ জুটি। তাইতো অনেকে বলছেন, আজ যিনি না ফেরার দেশে গেছেন, তিনি সুচিত্রা নন, বরং রমা দশগুপ্তা।
যেমনটা শোনা যায়, পরীক্ষার খাতায় কেউ উত্তমের বিপরীত শব্দ বলতে, সুচিত্রার নামটাই লিখে দিয়েছিলেন।
সেই সুচিত্রা পরলোকে গেলেন, যেমনটা উত্তম গিয়েছিলেন তার ৩৩ বছর আগে।
জুটি বেঁধে তারা বাঙালিকে উপহার দিয়েছেন ৩০টিরও অধিক ছবি—রোমান্টিকতায় ভরপুর এ জুটি বাঙালিকে শিখিয়েছিলেন কীভাবে ভালোবাসতে হয়। কীভাবে রোমান্টিসিজমের উত্তেজনায় কাঁপিয়ে দিতে হয় সবাইকে।
শুধু কী তাই। সুচিত্রা-উত্তমের পোশাকের অন্ধ অনুসরণ করতেন সেকালের যুবক-যুবতীরা সবাই। সুচিত্রার শাড়ি পরা কিংবা চুল বাঁধার স্টাইল সেই সময়ে কলকাতা, ঢাকার বাঙালি সমাজে অভিজাত্য ও ফ্যাশন-সচেতনতার প্রতীক। উত্তম কুমারের চুল, তাঁর শার্টের কলার কেমন ধাঁচের কিংবা তাঁর স্যুটের কাটিং—সবইতো ছিল অনুকরণীয়।
উত্তম কুমার তার জীবদ্দশায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না।’
উত্তম-সুচিত্রা জুটির প্রথম হিট ছবি ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া হাসির এ ছবিটিতে উত্তম কুমার কিংবা সুচিত্রা সেন কেউই প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি। ছবির প্রদর্শকেরা ব্যবসায়িক মানদণ্ডে চরিত্রাভিনেতা তুলসী চক্রবর্ত্তীকে পোস্টারের প্রধান মুখ বানিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটিতে উত্তম-সুচিত্রার রোমান্টিক অভিনয় বাংলা সিনেমার জগতে যেন এক প্রলয়ের ডাক দিয়ে যায়। একটি চমৎকার রোমান্টিক জুটির জন্য হাপিত্যেশ করে ফেরা কলকাতার সিনেমাশিল্প যেন পেয়ে যায় এক কোরামিন। যে কোরামিন কলকাতার সিনেমাশিল্পকে স্বর্ণ সময়ে প্রবেশ করায়।
শুধু ষাটের দশক নয়, নারী-পুরুষের সম্পর্কের রোমান্টিকতার ধারণায় বাঙালির চিরকালীন এক আইকন এই জুটি।
রুপালি পর্দার চিরদিনের এই প্রেমিক যুগলের, মুখ থেকে বেরিয়ে আসা প্রতিটি সংলাপ এত বছর পরও কাল অতিক্রম করে চলে গেছে বহুদূর। আজকের স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনস কিংবা কম্পিউটার প্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষতার যুগেও তাই সুচিত্রা সেনের চলে যাওয়া এই প্রজন্মের কাছে রূদ্ধশ্বাস আলোচনার বিষয় হয়।
কিংবদন্তি শব্দের জন্ম বোধহয় এমন করেই হয়…
— পুরাতন স্মৃতির আলমারি থেকে সুচিত্রাকে স্মরণ