-মোঃ অলিউর রহমান-
১৯৯০ সালের পর কোন ফরাসি রাষ্ট্রপতির প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে বরবারই তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে অন্তরজালে। ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রাসোয়া মিতেরার বাংলাদেশ সফরের দীর্ঘ ৩২বছর পর বাংলাদেশে কোন ফরাসি রাষ্ট্রপতি আসা পর্যন্ত তো ঠিক ছিল, কিন্তু বাংলাদেশে আসার পরপরই কোন সঙ্গীত শিল্পীর সাথে দেখা করার নজির ইতিহাসে খুব কমই আছে।
শোনা গেছে,সঙ্গীতের প্রতি একটি আলাদা ভালো লাগা কাজ করে এমানুয়েল মাখোঁর। তাই নিজের স্টুডিও ঘুরিয়ে মাখোঁকে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সাথে পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছেন ‘জলের গান’- এর রাহুল আনন্দ।
কিন্তু মাখোঁর সঙ্গীতের প্রতি এ ভালো লাগার পেছনে রয়েছে এক রোমাঞ্চকর কাহিনী। পাঠকদের জন্য সেই অজানা গল্প নিয়েই হাজির হয়েছে চিত্রালী।
শুরুতে ১০ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করা প্রয়োজন। তাহলে গল্পটা বলা সহজ হবে। ১০ সেপ্টেম্বর রাত ৮ টায় ঢাকায় অবতরণের পর মধ্যরাতে রাহুল আনন্দের সাথে দেখা করেন ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাখোঁ।
তাদের সাক্ষাতের পরপরই রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে রাহুল আনন্দকে দেওয়া একটি উপহারের ছবি ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ঘুরপাক খেতে দেখা যায় অন্তরজালে। সেখানে বেশিরভাগ নেটিজেনদের কাছে মাখোঁর উপহার হিসেবে দেওয়া কলমটিই মুখ্য বিষয় হয়ে উঠে। কিন্তু কলমটির পাশে লেখা একটি নাম এদিন বেশিরভাগ মানুষেরই নজর এড়িয়ে গেছে। সেটি হচ্ছে এমানুয়েল মাখোঁর স্ত্রী ব্রিজিত মাখোঁর নাম। এই নামটির কারণেই রাজনীতিবিদের সঙ্গীতের প্রতি এত ভালো লাগা কাজ করে। পাঠকের বোঝার জন্য আরেকটু সহজ করে বলছি।
ফরাসি রাষ্ট্রপতি আসার আগে ফরাসি দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়,’মলিয়েরের ভাষা ছড়িয়ে দিতে তারা বদ্ধপরিকর’। মলিয়েরের প্রসঙ্গ উঠতেই তার একটি বিখ্যাত উক্তি আজকে বলতে ইচ্ছা করছে। ফরাসি ভাষার সেই উক্তিটি কিছুটা এরকম দাঁড়ায়, ‘Vivre sans aimer n’est pas proprement vivre’ অর্থাৎ, ‘‘ভালোবাসা ছাড়া বাঁচার চেয়ে না বাঁচাই শ্রেয়।‘’
তবে জন্ম-মৃত্যুর সমীকরণ আজকে বাদই রাখছি।
মূলত ভালোবাসার কারণেই সঙ্গীতের প্রতি এমানুয়েল মাখোঁর এত ভালো লাগা কাজ করে ।
রাজনীতিবিদ নিজের জীবনের ১০ বছর এমিয়েন্স কনজারভেটরিতে পিয়ানো শিখতে ব্যয় করেছেন । তালিম নেওয়ার সময়ই নিজের থেকে ২৫ বছরের বড় তার তৎকালীন শিক্ষকের সাথে প্রণয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠে ফরাসি রাষ্ট্রপতির। নানা প্রতিকূলতা এড়িয়ে তাদের প্রণয় ২০০৭ সালে বিয়েতে রূপ নেয়। ঠিক সেই সময় থেকেই সঙ্গীতের উপর অগাধ ভালোবাসা জন্মায় মাখোঁর মনে। এমনকি তার শিক্ষক থাকা অবস্থায় তাকে ‘মোজার্ট’ হিসেবেই নিজেদের বন্ধুদের কাছে সম্বোধন করতেন তার স্ত্রী বিজিত।
শুধু কী তাই? তার সঙ্গীতের প্রতি ভালো লাগার খবর গণমাধ্যমে পৌঁছানোর পরে ২০১৪ সালে ফরাসি পত্রিকা লে মণ্ডে তাকে ‘এলিসির মোজার্ট’ বলে আখ্যা দেয় যা পরবর্তীতে ইউরোপের অন্য পত্রিকাগুলোও অনুসরণ করে।
একজন সঙ্গীত শিল্পীকে খুব কম সময়ই রাজনীতির মঞ্চে দেখতে পেয়েছে সাধারণ মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পর হয়ত এমানুয়েল মাখোঁই হয়ত প্রথম রাজনীতিবিদ যিনি সঙ্গীতের উপর তালিম নিয়েও সদর্পে রাজনীতির মঞ্চ কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে রাজনীতি ও সঙ্গীতের মিশ্রণে নির্মিত ভালবাসার এই গল্পে বরাবরই রোমাঞ্চের জন্ম দিবে যেকোনো পাঠকের মনে।