আজ ১৯ শে আগস্ট বাংলাদেশের তথা তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানের প্রথম রঙিন সিনেমা নির্মাতা ও লেখক জহির রায়হানের জন্মদিন। ১৯৩৫ সালে বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি একাধারে নির্মাতা, লেখক ও সাংবাদিক।
চলচ্চিত্র জগতে তার পদার্পণ ঘটে ১৯৫৭ সালে, জাগো হুয়া সাভেরা ছবিতে সহকারী হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে। তিনি সালাউদ্দীনের ‘যে নদী মরুপথে’ ছবিতে সহকারী হিসেবেও কাজ করেন। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম তাকে এ দেশ তোমার আমার এ কাজ করার আমন্ত্রণ জানান; জহির এ ছবির নামসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। ১৯৬১ সালে ‘কখনো আসেনি’ ছবির মাধ্যমে রূপালী জগতে পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে তৈরি করেন পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সংগম’ (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর মুক্তি পায় তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা।
‘কখনো আসেনি’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘বেহুলা’ থেকে ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ সহ জহির রায়হানের বেশির ভাগ চলচ্চিত্র বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সংগ্রহে রয়েছে। তবে মুক্তির ছয় দশক পরও ‘সংগম’ ও ‘বাহানা’ চলচ্চিত্র দুটি আর্কাইভে নেই। বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক ফারহানা রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ছবি দুটি অ্যানালগ কিংবা ডিজিটাল, কোনো ভার্সনই তাদের সংরক্ষণিত নেই।
তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানের প্রথম রঙিন সিনেমা ছিল ‘সংগম’। ছবিটি ১৯৬৪ সালের ২৩ এপ্রিল মুক্তি পায়। লিটল সিনে সার্কেলের প্রযোজনায় ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন জহির রায়হান। চিত্রগ্রহণ করেছেন আফজাল চৌধুরী। এতে অভিনয় করেছেন রোজী, হারুন, সুমিতা, খলিলসহ আরও অনেকে।
এছাড়া ১৯৬৫ সালের ১৩ এপ্রিল মুক্তি পায় জহির রায়হানের আরেক উর্দু সিনেমা ‘বাহানা’। পাকিস্তানের প্রথম সিনেমাস্কোপ সিনেমা এটি। এতে রহমান, কবরী, জাকারিয়াসহ আরও অনেকে অভিনয় করেছেন। চিত্রগ্রহণ করেছেন আফজাল চৌধুরী।
জানা গেছে, ফিল্ম আর্কাইভে জহির রায়হানের সাতটি ছবি সংরক্ষিত আছে। ছবিগুলো হলো— ’কখনো আসেনি’, ‘বেহুলা’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘আনোয়ারা’, ‘মনের মতো বউ’ (আংশিক), ‘জীবন থেকে নেয়া’ ও ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ (আংশিক)।
‘সংগম’ ও ‘বাহানা’ ছাড়াও ফিল্ম আর্কাইভে নেই জহির রায়হানের আরেক চলচ্চিত্র ‘সোনার কাজল’। ছবিটি কলিম শরাফীর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেছিলেন জহির রায়হান।
তবে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে না থাকলেও চলচ্চিত্র গবেষক মীর শামছুল আলমের কাছে সংরক্ষিত আছে ‘সংগম’। ছবির অভিনেতা হারুন পাকিস্তান থেকে ছবিটির ভিএইচএস ক্যাসেট নিয়ে এসেছিলেন যা ১৯৯২ সালে জার্মান কালচারাল সেন্টারে ছবিটির প্রদর্শনী হয়েছিল। পরে ছবিটি ডিজিটালে রূপান্তর করে নিজের কাছে রেখেছেন তিনি।