শ্রীদেবী থেকে তার কন্যা জাহ্নবী কাপুর, ঐশ্বরিয়া রায় বচ্চন থেকে আয়শা টাকিয়া, আরও আছেন হালের আলিয়া ভাট- যারা কসমেটিক সার্জারি নিয়ে আলোচনায় আসছেন প্রতিনিয়ত। এখন আবার পরিচিত নাম ‘বোটক্স। এই ছুড়ি চাকুর নিচে নিজেকে অবলীলায় বসিয়ে দিয়ে সৌন্দর্য রক্ষার চেষ্টা নতুন নয়। দিনে দিনে চিকিৎসার ধরণ বদলেছে, নাম ভিন্ন হয়েছে, কিন্তু ইচ্ছা ও চাওয়া একই আছে। তা হলো রাজত্ব করার। হোক তা বলিউডের- বা সিংহাসনের। সম্প্রতি আলিয়া ভাট তার বোটক্স করা নিয়ে খবরের শিরোনাম হয়েছেন, আবার সেটি নিয়ে পাল্টা জবাবও দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত কেউ কখনো স্বীকার করেনি নিজেকে তাদের ভাষায় ‘ঠিকঠাক’ করার কথা, তাই বলে কী কসমেটিক সার্জারি হচ্ছে না?
অন্তত যাদের সার্জারি বা বোটক্স দৃশ্যমান তাদের নিয়েই চিত্রালীর আজকের ফিচার।
প্রথমেই আসে হেমা মালিনীর কথা। সেই কবেকার কথা, তখনই হেমা মালিনীকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি কসমেটিক্স সার্জারি করিয়েছেন। কারণ তার শ্যামবর্ণ।
উপমহাদেশে ত্বকের রং একটি বড় আলোচনার বিষয় সব সময়। যদিও লেখক বলেছেন, ‘কালো যদি মন্দ তবে- কেশ পাকিলে মন্দ ক্যানে‘, তারপরেও সেই শব্দগুলো আজও রয়ে গেছে বইয়ের পাতাতেই। রং ফর্সাকারী ক্রিম থেকে শুরু করে সার্জারি, হুমরি খেয়ে পড়ছেন সকলেই। বিশেষ করে যারা কাজ করেন এন্টারটেইনমেন্টের রঙিন দুনিয়াতে।
হেমা মালিনী তার শ্যামবর্ণকে বিসর্জন দিতে সার্জারিকে বেছে নেন। হঠাৎ করে তার ফর্সা হওয়া নিয়ে বলিউডে ঝড় উঠে যায়। কিন্তু সামাজিক মাধ্যম না থাকায় সেই ঝড় আবার অন্য দিশাতে বেঁকেও যায়। একই ভাবে সমালোচনায় এসেও আবার সামলে নিয়েছেন শ্রীদেবী। শ্রীদেবীর আগের চেহারা এবং তার পরের চেহারায় পরিবর্তন একেবারেই দৃশ্যমান। গায়ের রং তো বটেই, সমালোকদের ভাষায়, তিনি ঠোঁট এবং নাকের আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। বিশেষ করে তার নাকের পরিবর্তন সকলের চোখের সামনে ছিল। শ্রীদেবী যদিও নিজে কখনো স্বীকার করেননি। তিনি সব সময় বলেছেন, এটি মেকআপের কারসাজি।
নাক বা গায়ের রং শুধু নয়, বুকের মাপের আমূল পরিবর্তন করে সমালোচনার শিকার হন আয়শা টাকিয়া। তালিকায় আছেন আরও কয়েকজন…
মিষ্টি মেয়ে আয়শা টাকিয়ার বুক সাইজের কারণে তার ক্যারিয়ারও থেমে যায় বলে অনেকেই বলাবলি করেন এখনও। অথচ ’ওয়ান্টেড’ নায়িকা আয়শাকে নিয়ে বলিউডে আশা কম ছিল না। শুধু বুকের মাপ নয়, তিনি ঠোঁট ও নাকের পরিবর্তন ঘটিয়েছে সেটাও মোটামুটি দৃশ্যমান।
প্লাস্টিক বা কসমেটিক সার্জারির ফল সব সময় ভালো হয়, তাও নয়, হলিউডের পামেলা অ্যান্ডারসনের ক্ষেত্রেও এমনটি হয়েছিল। আর বলিউডে রাখি সাওয়ান্ত এর জ্বলজ্বলে উদারহরণই বটে।
ম্যায় হু না সিনেমার রাখি এবং বর্তমানের রাখির মিল নেই বললেই চলে। তবে তিনি কখনো অস্বকীর করেননি। বরং কফি উইথ করণ শোতে তিনি বলেন, নিজেকে সুন্দর করতে, আরও কনফিডেন্ট করে পর্দায় তুলে ধরতে তার শরীরের অনেক অংশেই তিনি সার্জারি করিয়েছেন।
একই প্রশ্ন প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে করা হলে তিনি এই এতো বছর পরে এসেও ‘না না’ বলে যান। মিস ইন্ডিয়া; প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সেই হাসির সাথে এখনকার প্রিয়াঙ্কা নিক জোনাসের হাসির মিল নেই বললেই চলে। তার নাক ও গায়ের রং নিয়ে আছে তার ভক্তদের নানা প্রশ্ন।
বলিউডের সমালোচকরা বলেন, প্রিয়াঙ্কার মাঝের স্নিগ্ধভাবটি চলে গেছে এই সার্জারির পর।
যেমন সমালেচকরা কখনো মেনে নিতে পারেননি আনুশকা শর্মার ঠোঁটের পরিবর্তন। লিপ জব করার পর রাব নে বানাদে জোড়ির স্নিগ্ধতা পাওয়া যায়নি পিকুর আনুশকার মাঝে – এই অভিযোগ আজও অনেক ভক্তের।
কমল হাসান এবং সারিকার বড় মেয়ে শ্রুতি হাসানের পুরানো ছবির সাথে এখনকার দিনের পরিবর্তিত ছবি মিলিয়ে মিল খুঁজে পাওয়া ভার। তবে তাদের পরিবার থেকে প্রতিনিয়তিই সারিকার প্রাকৃতিক সৌন্দযের কথা বলে আসা হচ্ছে। লাক- কন্যা শ্রুতির বয়সের কারণে বোটক্স করানো নিয়েও আছে জোর গুন্জন।
একই গুঞ্জন প্রীতি জিনতাকে নিয়ে। ২০২৪ সালে আইপিএলে প্রীতির ছিমছাম উপস্থিতি নিয়ে বলিউডে আলোচনা শুরু হলে- একটা কিছুর পরিবর্তন সকলেই দেখেছেন। কেউ কোনও তথ্য না দিলেও বলিউডে ভেসে বেড়ায় তার বোটক্সের গল্প। আর একারণেই টোল-ওয়ালি প্রীতি হঠাৎই বনে যান প্লাস্টিক সুন্দরী।
এমনকী ঐশ্বরিয়া রায়ের আচমকা ওজন বাড়া ও চেহারার সামান্য পরিবর্তনের পেছনে উপর্যপরী অস্ত্রপোচারের অভিযোগ হরহামেশাই আনছেন নেটিজেনরা। খুঁজছেন সমাধান। যদিও এমন কোনও পরিণতি হয়নি জুহি চাওলার।
শুনলে অবাক হতেই হয়, বলিউডের আরেক মিষ্টি মেয়ে জুহি চাওলাও নিজেকে আকর্ষণীয় করে সামনে আনার নেশায় সার্জারির দ্বারস্থ হন। যা মোটামুটি সামলে নেন তিনি। তার নাকই নাকি এর প্রধাণ কারণ ছিল। গায়ের রং আর নাক নিয়ে শিল্পা শেঠিও সার্জারির ছুরির নিচে নিজেকে হাজির করান। বর্তমানে যোগ ব্যায়াম ও কঠিন নিষ্ঠার কারণে তার চেহারা আগের মতই আছে বটে, কিন্তু কপালে জুটে গেছে প্লাস্টিক সুন্দরীর তকমা।
বানী কাপুর থেকে শুরু করে বিপাশা বাসু, সকলেই শিল্পার মত ছুরির নিচে গেছেন নিজেকে সাজাতে। তবে বানী বা বিপাশা দুজনের কেউই খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি।
হালের জাহ্নবী কাপুরের পরিবর্তন নিয়ে বিভিন্ন আলাপ হতে্ই থাকে। তার নাক, চোখ এমনকী শরীরের মাপ নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। একই প্রশ্ন বোন খুশি কাপুরকে নিয়ে।
বিশেষ করে ছোটবেলার ছবির সাথে ‘উলাঝ’ তারকা জাহ্নবী এবং ‘দ্যা আর্চিস’ খুশির কোনও মিল নেই – হরহামেশা এই অভিযোগ সবার। যদিও তাদের পরিবার থেকে বয়ঃসন্ধীকালের কথাই বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
একই অভিযোগ অনন্যা পান্ডে বা শায়না কাপুরের ক্ষেত্রেও। কিন্তু এই প্রজন্ম এসব প্রশ্ন শুনে বিচলিত না হয়ে উড়িয়েই দেন প্রায়।
হালের আলিয়া ভাটের বোটক্স করানো নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে তাই খানিকটা রেগেই যান এই তারকা। একে তো বয়স কম। তার উপর বোটক্সের কারণে তার বিপাকে পড়ার খবরে কিছুটা বিরক্তই তিনি বটে।
তবে এটাও সত্য, বোটক্স বা সার্জারির মতন ঘটনা বিশ্বজুড়ে মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে হচ্ছেই। কিন্তু কেন? সার্জারি তো সার্জারি, এই বোটক্স কী তাহলে? বোটক্স ইনজেকশন দিলে ইনজেকশন দিলে এসব অংশের পেশির সংকোচনে বাধার সৃষ্টি হয়। কাজেই এরপর কপাল বা চোখের আশপাশের পেশি ইচ্ছেমতো কোঁচকাতে পারবেন না। তবে অন্যান্য পেশির সংকোচন ঠিকঠাকই থাকবে। বোটক্স মোটামুটি নিরাপদই বলা যায়। এরপরও অবশ্য অ্যালার্জিজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। আর ইনজেকশন দেওয়ার সময় ভুলভ্রান্তি হলে কিন্তু মুখের অন্য কোনো পেশিও অবশ হয়ে যেতে পারে।
ফলে যাই হোক না হোক, অষুধ মানেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার শঙ্কা। তাই সৌন্দর্য-র বিনিময়ে যখন ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়, তখনই আলাপ বেড়ে যায় সবখানে।
বলিউড কী সেই পথেই যাচ্ছে? সময় দেবে তার উত্তর।
লেখা: সৈয়দা ফারজানা জামান রুম্পা