খুব সহজে মানুষের মনের কথা, সমাজের নানা অসংগতির কথা সুরে সুরে বলে সবার মন জয় করেছিলেন প্রমিথিউস ব্যান্ডের বিপ্লব। কিন্তু অনেক দিন ধরে দেশের কোনো মঞ্চে কিংবা টেলিভিশনে এমনকি রেডিওতে পাওয়া যায় না তাকে। সম্প্রতি জানা গেলো তিনি আছেন যুক্তরাষ্ট্রে। নিউইয়র্কে ট্যাক্সি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই শিল্পী।
বছরের পর বছর ব্যান্ড প্রমিথিউসকে স্টেজ শো এবং টেলিভিশনের কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। কোথাও নেই বিপ্লব। ফেসবুকে মাঝেমধ্যে উঁকি দেন। বিপ্লব এখন পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কুইন্সে থাকেন। দুই ছেলে আদিব,অ্যারন ও মেয়ে তটিনী সেখানে লেখাপড়া করে।
ব্যান্ড, মিক্সড ও একক অ্যালবাম, স্টেজ শো—সব জায়গায় নব্বই দশকে দাপুটে বিচরণ ছিল বিপ্লবের। এলআরবি, নগরবাউলের পাশাপাশি হেঁটেছে প্রমিথিউস। ব্যান্ডে যেমন সরব ছিলেন, তেমনি আইয়ুব বাচ্চু , জেমস, হাসান ও বিপ্লব সমানতালে উচ্চারিত একটি নাম ছিল। নব্বই দশকে এই চার ব্যান্ড ও চার শিল্পীর সমান বিচরণে মুখর ছিল বাংলাদেশের গানের জগৎ।
জীবিকা নির্বাহের জন্য কি করেন বিপ্লব এমন প্রশ্নে তিনি জানান, নিউইয়র্কে তিনি এখন ট্যাক্সি সার্ভিসের কাজ করছেন। প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন আমেরিকান এয়ারলাইনসে। এক বছর পর গাড়ি কিনে ট্যাক্সি সার্ভিস শুরু করেন। তবে বিপ্লব এতে মোটেও বিচলিত কিংবা বিব্রত নন। তিনি যা, তা-ই সবার সামনে থাকতে চান বলে জানান তিনি ।
বিপ্লব বলেন, ‘আমি ট্যাক্সি চালাই, বলতে সংকোচ বোধ করি না। আমি তো চুরি করছি না। মানুষকে সেবা দিচ্ছি, বিনিময়ে টাকা নিচ্ছি। আমেরিকা আসার পর আমার অনেক বড় অভিজ্ঞতা হয়েছে। বিদেশ বলতে আমরা দেশে বসে যা বুঝি, বিদেশ আসলে মোটেও তা না। আমেরিকার লাইফ আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, যা আমার পরবর্তী জীবনে কাজে দেবে।’
তবে বিপ্লব জানান তিনি গান-বাজনা থেকে দূরে সরে যাননি।
গানের প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘আমার অস্তিত্বে গান।’ নতুন গান লিখছেন। নতুন গানের সুরও তৈরি করছেন। এর মধ্যে অনেকগুলো নতুন গিটার কিনেছেন। ছোট ছেলে অ্যারনের জন্যও গিটার কিনে রেখেছেন। কাজের ফাঁকে বিপ্লব প্রায় দিনই গিটার নিয়ে প্র্যাকটিসে বসে পড়েন। জানিয়ে রাখলেন, সৃষ্টিকর্তা যদি শরীর-স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ব্যান্ডের সবাইকে নিয়ে আবার গানের ময়দানে নামবেন। এর মধ্যে নিজে এককভাবে বেশ কয়েকটি গানও করেছেন।
আমি মনে করি, দিস ইজ পার্ট অব লাইফ, আমি সময়টাকে উপভোগ করছি। আমি নতুন গান লিখছি, গানের মিউজিক করছি, কোনো কিছু কিন্তু থেমে নেই। নিজের একটা ইউটিউব প্ল্যাটফর্মও চালু করব, ভক্ত-শ্রোতারা প্রতিনিয়ত গান পাবেন।’ বিপ্লব নিউইয়র্কে থেকেও মাঝেমধ্যে কনসার্টে গান করেন। তবে বেশির ভাগ স্টেজ শো নিউইয়র্কের বাইরে করা হয় বলে জানান তিনি। বললেন, ‘ব্যাটে-বলে মিললে তখনই প্রোগ্রাম করি।’
যুক্তরাষ্ট্রে ট্যাক্সি সার্ভিসকে কেন বেছে নিলেন? অন্য কোনো কিছু করার সুযোগ কি ছিল না? বিপ্লব বলেন, ‘আমি স্বাধীনমতো কাজ করছি। খবরদারি করার কেউ নেই। এখানে অন্য কাজ করব, আমার সেই সুযোগটাও তো নেই। স্মার্ট কিছু করতে হলে এখানকার পড়াশোনা লাগে।
১৯৮৬ সালে প্রমিথিউস ব্যান্ড গঠনের মধ্য দিয়ে পেশাদার সংগীতজীবন শুরু করেন বিপ্লব। দুই বছরের মাথায় প্রকাশ করেন প্রথম অ্যালবাম ‘স্বাধীনতা চাই’। এরপর দলের হয়ে ১৬টি অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। একক গানেও বিপ্লব ছিলেন অনবদ্য। প্রমিথিউস ব্যান্ডের সর্বশেষ প্রকাশিত দুটি অ্যালবাম হচ্ছে ‘আমাদের পথ’ ও ‘ছায়াপথ’।