।। নো স্পয়লার ।।
‘দিল সে’ সিনেমার আইকনিক ‘ছাইয়্যা ছাইয়্যা’ গানের কথা কার না মনে আছে? ট্রেনের উপরে বলিউডের বাদশাহ শাহরুখ খান, তালে তাল মিলিয়ে নেচেছেন অভিনেত্রী মালাইকা অরোরার সাথে। গানের প্রাণবন্ততা, সাথে শাহরুখ ও মালাইকার প্রাণবন্ত কেমিস্ট্রি। কেউ বলিউডের সিনেমার ভক্ত হোক বা না হোক, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে যিনি কিনা জীবনে কোনো একবার ‘ছাইয়্যা ছাইয়্যা’ গানের তালে দুলে ওঠেনি।
আরেকটু ফ্ল্যাশব্যাকে যেয়ে দেখলে, ‘দিলওয়ালে দুলহনিয়া লে যায়েঙ্গে’ সিনেমার রাজ আর সিমরান চরিত্রে অভিনয় করা শাহরুখ ও কাজলের সিনেমায় প্রথম পরিচয় কোথায় হয় মনে আছে? ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে, আর এদিকে সিমরানের হয়ে যায় দেরি। ট্রেনে থাকা রাজ হাত বাড়িয়ে সিমরানকে ট্রেনে উঠতে করেন সহায়তা। এরপর বাকিটুকু ইতিহাস।
এবার যদি একবিংশ শতাব্দীতে মুক্তি পাওয়া শাহরুখ ও দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমার কথায় আসি, কিং খান যখন একে একে দীপিকা ও তার কাজিন ব্রাদারদের হাত বাড়িয়ে ট্রেনে তুলে নেন, সেই মজার অনবদ্য দৃশ্যের কথাই বা কে ভুলে যেতে পারে!
তো কি ভাবছেন, পাঠক? ‘জাওয়ান’ রিভিউ দেওয়ার শিরোনাম দিয়ে শুরু করা লেখায় কেন ফ্ল্যাশব্যাক থেকে অন্য সিনেমার দৃশ্য নিয়ে কথা বলা হচ্ছে? কথায় আছে সবুরে মেওয়া ফলে, কারণ তো নিশ্চয়ই আছে!
উপরে উল্লেখিত উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা তিনটি সিনেমার দৃশ্যের মধ্যে তিনজন ভিন্ন অভিনেত্রীর সাথে দেখা গেছে বলিউড বাদশাহকে। নিঃসন্দেহে সব নায়িকার সাথেই শাহরুখের কেমিস্ট্রি দুর্দান্ত। তবে একটি ব্যাপার লক্ষ্য করেছেন কি? সবচাইতে দুর্দান্ত হচ্ছে ট্রেনের সাথে শাহরুখের কেমিস্ট্রি। কিং খানের সিনেমায় ট্রেনের দৃশ্য থাকলেই তা যেন লেখা হয়ে যায় ফিল্মের ইতিহাসের পাতায়। ‘জাওয়ান’ সিনেমার ক্ষেত্রেও ঘটেনি এর ব্যতিক্রম!
‘জাওয়ান’ সিনেমার প্রিভিউ হোক কিংবা পরবর্তীতে প্রকাশিত ছবিটির ট্রেইলার, ট্রেনের ভিতরে এক অন্যরকম শাহরুখ খানকে লক্ষ্য করেছেন দর্শকরা। “মুম্বাই মে হুয়ে ইস হাইজ্যাক নে পুরে দেশ মে সানসানি মাচাদি হ্যায়” অর্থাৎ মুম্বাইতে ঘটে যাওয়া এই হাইজ্যাকের ঘটনা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ট্রেইলারে প্রকাশিত এই সংলাপ থেকে ছবি না দেখেই কমবেশি সবারই অগ্রিম ধারণা হওয়ার কথা, হাইজ্যাকের একটি ঘটনা নিশ্চিতভাবে আছে সিনেমাটিতে। হ্যাঁ পাঠক, হাইজ্যাকের দৃশ্য আছে সিনেমায়। তাও আবার ট্রেনেই। শাহরুখের এই ছবির ট্রেনের দৃশ্যের অ্যাকশন- আবেগ থেকে শুরু করে পুরো সিনেমাই একদম ভরপুর নজরকাড়া সব মুহূর্ত দিয়ে। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যেই যেন উত্তেজনা।
এর আগে মুক্তি পাওয়া ‘পাঠান’ সিনেমায়ও বলিউডের আরেক সুপারস্টার সালমান খানের সাথে দেখা দেওয়া ট্রেনের ভিতরের সেই অ্যাকশনে ভরপুর দৃশ্যও ছিল দর্শকদের কাছে হিট। প্রেক্ষাগৃহের ভিতর থেকে ছবি দেখে দর্শকদের হইহুল্লোড় করে শিস বাজানোর ভাইরাল ভিডিওগুলোই তার প্রমাণ।
এছাড়াও ‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘বীর জারা’, ‘পরদেশ’ ও ‘ম্যায় হুঁ না’ সিনেমার মত ট্রেনে ধারণ করা দৃশ্যগুলোও এখনো দর্শকদের চোখে একদম তরতাজা। তাই নিঃসন্দেহে বলাই যায়, নায়িকাদের সাথে এই রোমান্টিক হিরোর রোমান্স তো অতুলনীয় বটেই, পাশাপাশি ট্রেনের সাথে তার কেমিস্ট্রি অন্য মাত্রা যোগ করে সব সিনেমায়।
এবার আসা যাক মূল ‘জাওয়ান’ ধামাকা নিয়ে। পুরো বিশ্ব যে জাওয়ান ঝড়ের কবলে পড়ে আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দর্শকদের উত্তেজনার পারদ না কমিয়ে, বরং আরও চড়িয়ে দিতে কোনো ধরনের স্পয়লার না দিয়ে শুধু একটু খানিক হিন্ট দেয়া যাক। সিনেমাটি নিয়ে প্রথম প্রকাশিত প্রিভিউ যেমন শুরু হয়েছিল শাহরুখের হিন্দিতে বলা “ম্যায় কন হু” অর্থাৎ “আমি কে?” সংলাপ দিয়ে, মূল সিনেমাও শুরু হয় ঠিক একই সংলাপ দিয়ে।
আরেকটু হিন্টও নাহয় দিয়ে দেয়া যাক! প্রিভিউতে হিন্দি ভাষায় বলা “আমি কি মাকে করা কোনো শপথ? নাকি আমি অসম্পূর্ণ? নাকি এক লক্ষ্য আমি? আমি ভালো, খারাপ নাকি কোনো পুণ্য?”, এই প্রত্যেকটি সংলাপ দিয়ে যেমন দর্শকদের বিভিন্ন দিকে বিশ্লেষণের জন্য ধাবিত করা হয়েছিল, এমন বিভিন্ন দিকে ধাবিত করা হবে পুরো সিনেমা জুড়েই, আরও বিস্তর পরিসরে। দর্শকরা বুঝে উঠতে পারবেন না কোন দিকে যাচ্ছে গল্পের কাহিনী। কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যও চোখ সরিয়ে নেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে পর্দার উপর থেকে। এমনই মন্ত্রমুগ্ধ হবে যাবে সবাই। প্রপার মাসালাদার কমার্শিয়াল মুভি মনে হয় এই ধরনের সিনেমাকেই বলে। ভারতের দক্ষিণী সিনেমার মাসালা, একের পর এক ধামাকা, সঠিক স্থানে সঠিক প্লটের প্রয়োগ, আর পরিচালক অ্যাটলি কুমারের পরিচালনার বিশেষত্বে ভরা ধুন্ধুমার অ্যাকশন দৃশ্যের কারণে অনেক আহামরি কোন স্টোরি না দিয়েও ‘জাওয়ান’ থেকে সত্যিই চোখ সরানো মুশকিল।
ওহ আরও একটি হিন্ট, পূর্বে প্রকাশিত সবগুলো লুক ছাড়াও শাহরুখকে এই সিনেমায় দেখা গেছে আরও এক বিশেষ লুকে। যারা ইতিমধ্যে ছবিটি দেখেছেন, তাদের কাছ থেকে সেই লুকেরই সবচেয়ে বেশি প্রশংসা শুনতে পাওয়া যাচ্ছে।
তো পাঠক, এখন জমলো? কিন্তু আগেই যদি জমে যায় মহল, তবে হলের উত্তেজনা টের পাবেন কি করে?
অনেকেই নিশ্চয়ই জানেন, মুক্তির পরপরই পাইরেসির শিকার হয়েছে ‘জাওয়ান’ সিনেমাটি। কিন্তু এই ছবির ক্রেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা পাইরেসির সংবাদ্গুলোর পোস্টের নিচে নেটিজেনদের কমেন্ট পড়লেই ধারণা করতে পারবেন। যারা যারা পাইরেসি হওয়া ছবি দেখেছেন, তারাও একবার হলেও ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা মিস করতে চান না। “অলরেডি দেখা হয়ে গেছে, কিন্তু হলে না দেখলে মিস। যেতেই হবে হবে”! “একবার দেখেছি, আবারও দেখবো হলে”! এমন একের পর এক কমেন্টে ভেসে যাচ্ছে সেসব পোস্টগুলো।
‘জাওয়ান’ ঝড় হোক, কিংবা সিনেমার ঝড়, প্রেক্ষাগৃহের উত্তেজনায় আপনি যোগ দিচ্ছেন কবে? মার্ক করে নিন নিজের ক্যালেন্ডারে!